শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোমর তাঁতে স্বাবলম্বী পাহাড়ের নারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট

কোমর তাঁতে স্বাবলম্বী পাহাড়ের নারীরা

পাহাড়ি নারীরা অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই পরিশ্রম করেন। তাদের জীবন যুদ্ধে যেনো কেউ হার মানাতে পারেন না। প্রতিনিয়ত কাজ করেন পাহাড়ে পাহাড়ে। ব্যস্ত সময় পার করেন জুম চাষের মাধ্যমে।

জুম চাষ ছাড়াও পাহাড়ি নারীরা পরিবারের বাড়তি উপার্জনের জন্য বানিয়ে থাকেন কোমড় তাঁত। এতে তারা বাড়তি যে অর্থ পায় সেটি দিয়ে চলে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচ।

খাগড়াছড়ির বেশির ভাগ পাহাড়ি পল্লীতেই চলে কোমর তাঁতের সাহায্যে কাপড় বুননের কাজ। গৃহস্থালির কাজ আর জুম চাষের ফাঁকে কোমর তাঁতে পিনন ও থামি তৈরি করে স্থানীয় বাজারের বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করে থাকেন তারা। কাপড় বুনে প্রতি মাসে এক জন নারী পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করে থাকেন বলে জানা গেছে।

আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী না হওয়ায় নিজেরা টাকা দিয়ে সুতা কিনতে পারেননা। অন্যের কাছ থেকে সুতা এনে কাপড় বানিয়ে নির্দিষ্ট একটি পারিশ্রমিক পান মাত্র। এতে করে তাদের কষ্টের তুলনায় পাওয়া অর্থটি অনেক কম হয়ে যায়। তাদের জন্য নেই কোনো ব্যাংক লোনও।

এমন কষ্ট করে মানুষের কাছ থেকে সুতা এনে কাপড় বানানো ৭০ জনকে বদলে দিয়েছে ফেরদৌসী পারভীন নামে এক নারী। তিনি ঢাকা থেকে এই পাহাড়ে ঘুরতে এসে এমন লোকদের সন্ধান পায়। পরে স্থানীয় পরিচিতজনদের মাধ্যমে পাহাড়ি নারীদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। এখন বর্তমানে ৭০ পরিবার স্বাবলম্বী হয়ে গেছে।

সহায়তা পাওয়া ৭০ জন নারী এখন সুতা দিয়ে কাপড় বানিয়ে সেই কাপড় বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে আরো বেশি সুতা কিনে সম্প্রসারিত করেছেন। এতে বর্তমানে ৭০ টি পরিবার সফল হয়েছেন। তাদের এখন আর আগের মতো মানুষের কাছ থেকে সুতা এনে কাপড় বুনতে হয়না।

শুধুমাত্র ৭০জন নারীই নয়, এর আগেও তিনি তার ঢাকার কিছু সুহৃদের সহযোগীতায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ২০ জন প্রশিক্ষিত নারীকে সেলাই মেশিন দিয়েছেন। খাগড়াছড়ির মধুপুর এলাকার এক নারীকে দোকান প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন। যার মাধ্যমে সে নারীও আজ স্বাবলম্বী।

তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে দুই দফায় চেলাছড়া, গাছবান ও খাগড়াপুরের ৭০ পাহাড়ি নারীকে পাঁচ কেজি করে সুতা দিয়েছেন। তার সহযোগিতায় বদলে গেছে ৭০ জন পাহাড়ি নারীর অর্থনীতির চাকা। প্রফেসর ফেরদৌসী পারভিনের সহযোগিতায় এসব পাহাড়ি নারীরা এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তার দেয়া পাঁচ কেজি সুতায় থামি-ওড়না বুনেও আর্থিক স্বচ্ছলতা পেয়েছেন এসব নারীরা। এক সময় অভাব-অনটনের সঙ্গে লড়াই করা ৭০ পাহাড়ি নারী হয়ে উঠেছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা।

জানা গেছে, গত বছর ৪০ জনকে এবং এই বছর ৩০ জন নারীকে থামি-পিনন ও ওড়না বোনার জন্য সুতা দিয়েছেন। তা দিয়ে প্রতিজন ৮-৯ সেট থামি-ওড়না বানাতে পারে। যার প্রতি সেটের পাইকারী মূল্য ৩-৪ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে আবার সুতা কিনে থামি-ওড়না তৈরির পাশাপাশি সংসারের চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচেরও যোগান দিচ্ছেন।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৯:১০ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২২

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]