শুক্রবার ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসলাম গ্রহণকারী চতুর্থ সাহাবি ছিলেন যিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট

ইসলাম গ্রহণকারী চতুর্থ সাহাবি ছিলেন যিনি
জাহিলি যুগেই যাঁরা মহান আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দিতেন এবং সত্যের সন্ধানে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজন আবু জর গিফারি (রা.)। প্রথম দিকে তাঁর জীবনও ছিল অন্ধকার। গোত্রের অন্যান্য লোকের মতো তাঁরও পেশা ছিল লুট, হাইজাক ও রাহাজানি। তবে কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর জীবনে এক বিপ্লব ঘটে যায়। নাড়া দেয় তাঁর অন্তরাত্মাকে। তখনো রাসুল (সা.) নবুয়তপ্রাপ্ত হননি। গোত্রীয় অনিষ্ট-অনাচার, মূর্তিপূজা—সবই ঘৃণিত হয়ে যায়। রাহাজানি ত্যাগ করে ঝুঁকে পড়লেন এক আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে একাগ্রচিত্তে; এমনকি নিজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে নামাজও আদায় করতে লাগলেন। তাই বলা হয়, আবু জর জাহিলি যুগেই একত্ববাদী ছিলেন। পরবর্তী সময়ে রাসুল (সা.)-এর সংবাদ পেয়ে ছুটে যান তাঁর কাছে; গ্রহণ করেন ইসলাম। ইসলাম গ্রহণের দিক থেকে তিনি চতুর্থ কিংবা পঞ্চম ব্যক্তি। (মুখতাসার তারীখে দিমাশক ২৮/২৭৮; আসহাবে রাসুলের জীবনকথা : ১/১৫৭)

তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনাটি খুবই চমকপ্রদ, যা বুখারি শরিফে ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে সবিস্তারে বর্ণিত আছে। তার মর্মানুবাদ এখানে পেশ করা হলো—

আবু জর গিফারি (রা.) একদিন সংবাদ পেলেন, মক্কায় নতুন এক নবীর আবির্ভাব হয়েছে। প্রথমে তিনি তাঁর ভাই উনাইসকে মক্কায় পাঠিয়ে নতুন নবী সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নিলেন। পরে নিজেই যৎসামান্য খাবার ও পানীয় নিয়ে রওনা হলেন মক্কার উদ্দেশে। সেখানে গিয়ে ভীত-শঙ্কিত অবস্থায় এক দিন কাটিয়ে দিলেন। শত্রু-মিত্র আশঙ্কায় আবির্ভূত নবী সম্পর্কে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। দিন শেষে রাত এলে তিনি ক্লান্ত-শ্রান্ত বদনে শুয়ে পড়লেন মসজিদে হারামের এক কোণে। আলী (রা.) তাঁকে দেখে পরদেশি মুসাফির হিসেবে নিয়ে গেলেন নিজ বাড়িতে। উত্তম থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করলেন। তবে উভয়ের মধ্যে পরিচয় পর্বও হলো না এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কেও কোনো মতবিনিময় হলো না।

সকাল হলে আবু জর ফিরে এলেন মসজিদে। আজকের দিনটিও কেটে গেল; কিন্তু নবীর সঙ্গে পরিচয়ের কোনো ব্যবস্থা হলো না। রাত হয়ে গেল। গতকালের মতো আজও মসজিদে শুয়ে পড়লেন। আলী (রা.) আজও তাঁকে দেখে নিয়ে গেলেন বাড়িতে। থাকা-খাওয়ার উত্তম ব্যবস্থা করলেন। এদিনও কেউ কাউকে কোনো কথা জিজ্ঞেস করলেন না। একইভাবে তৃতীয় রাতে আলী (রা.) মুসাফির আবু জরকে বাড়িতে নিয়ে মেহমানদারি করলেন। তবে আজ মুখ খুলে জিজ্ঞেস করলেন তাঁর উদ্দেশ্যের কথা।

আবু জর তাঁর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে সহযোগিতার শর্তে আলী (রা.)-কে মনের কথা খুলে বললেন। তাঁর বক্তব্য শুনে আলী (রা.)-এর মুখমণ্ডল আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে গেল। হৃদয় ভরে গেল অপূর্ব হর্ষ ও পুলকে। বললেন, আল্লাহর কসম! তিনি তো নিশ্চিত সত্য নবী। এই বলে তিনি বিভিন্নভাবে নবীজির পরিচয় তুলে ধরলেন। আর বলেন, সকালেই আমি আপনাকে নবীজির কাছে নিয়ে যাব। তবে সাবধানে ও সুকৌশলে পথ চলতে হবে। তাই নিরাপদ দূরত্বে থেকে আপনি আমাকে অনুসরণ করে পথ চলবেন। আমি যেখানে প্রবেশ করব, আপনিও সেখানে প্রবেশ করবেন। আশঙ্কাজনক কোনো কিছু দেখলে আমি প্রস্রাবের ভান ধরে বসে যাব। আপনি আপনার গতিতে চলতে থাকবেন। আবার আমার অনুসরণ করবেন।

পরের দিন আবু জর (রা.) রাসুল (সা.)-এর বাড়িতে গেলেন। সাক্ষাৎকালে তিনি রাসুল (সা.)-কে ইসলামী কায়দায় সালাম দিলেন। রাসুল (সা.) তাঁকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। কয়েকটি আয়াত পড়ে শোনালেন। আবু জর (রা.) সেখানেই তাওহিদের কলেমা পাঠ করে ইসলাম গ্রহণ করলেন। ইসলাম গ্রহণের পর রাসুল (সা.) তাঁকে বললেন, তুমি আপাতত নিজ এলাকায় ফিরে যাও। সেখানকার লোকজনকে ইসলামের দাওয়াত দাও। আমার খোঁজখবর রাখবে। সে মোতাবেক ভবিষ্যতে যা করার করবে।

তথ্যঋণ : সাহাবায়ে কেরামের আলোকিত জীবন

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১:১৩ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(141 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]