নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট
রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘লিলি তোমারে গেঁথেছি হারে আপন বলে চিনি, তবুও তুমি রবে কি বিদেশিনী?’ কবিগুরুর মতোই সুন্দরী লিলি ফুলকে আপন করে নেয়ার আকুলতা দেখা যায় অনেক প্রকৃতিপ্রেমীর মাঝে। আর এখন অনেকেই বাণিজ্যিক চাষে স্বপ্ন দেখছেন। তাদের মধ্যে ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছার গদখালীর আজিজুর রহমান একজন।
গত বছর পরীক্ষামূলক চাষে সফল হন তিনি। এবারও তার ক্ষেতে লিলিয়াম ফুটেছে। নতুন সম্ভাবনায় গদখালীর চাষিরা লিলি ফুলে স্বপ্ন বুনছেন। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় লিলিয়াম ফুল পরীক্ষামূলক চাষে সফল হওয়ায় চাষিরা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করতে চান।
নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, কানাডা, আমেরিকার মতো শীতপ্রধান দেশে এ ফুলের ব্যাপক চাষ হলেও বাহারী রংয়ের আকর্ষণীয় লিলিয়াম আমাদের দেশে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রথম এবং দেশের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো সফলভাবে ফুল ফুটাতে সক্ষম হয়েছেন কৃষকেরা। বাজারে চাহিদা থাকায় ব্যাপকভাবে এ ফুল উৎপাদনের চিন্তা করছেন গদখালী এলাকার ফুলচাষিরা।
সরেজমিন ফুল কানন পানিসারা মাঠে আজিজুর রহমানের লিলিয়ামের ক্ষেতে দেখা গেছে, শুধুমাত্র নেট (জাল) দিয়ে ঘেরার মধ্যে লিলিয়াম ফুটেছে। অথচ, এ ফুলচাষের জন্য সূর্যের আলো ও তাপ নিয়ন্ত্রিত পলি সেডের ভেতরে চাষের কথা থাকলেও তা করা হয়েছে খোলা জায়গায়। এতে ফুল ফোটায় চাষে আশা দেখছেন চাষিরা।
আজিজুর রহমান বলেন, গত বছর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের দেয়া ৪০০টি লিলিয়াম ফুলের বাল্ব (বীজ হিসেবে ব্যবহৃত রূপান্তরিত কন্দ) রোপণ করে ফুল পেয়েছিলাম। তা থেকে সংগ্রহ করা কন্দে এবার চাষ করে ফুল উৎপাদন করি। গত নভেম্বর মাসের শেষের দিকে লাগানো গাছে ৪০-৪২ দিনের মাথায় ফুল ফোটে। ৪০০টি গাছে এবার ৪১২ ফুল ফুটেছে। তা বেশি দিন গাছে রাখতে ফোটার আগে ফুলে ক্যাপ পরিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে ফুল অন্তত আরো ৮-১০দিন বেশি গাছে রাখা যাবে।
আজিজুর আরো বলেন, ৩০০টি ফুল ২৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। বাকি ফুল ভালোবাসা ও বসন্ত বরণ দিবস উপলক্ষে বিক্রির জন্য রেখেছি। সব মিলিয়ে ৩২ হাজার টাকার ফুল বিক্রি হবে। এতে মোট খরচ হয়েছিলো হাজার তিনেক টাকা। দুই মাসের এ চাষে ব্যাপক লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।
যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের আব্দুর রহিম বলেন, ২০০৮ সালে প্রথম গদখালীতে লিলিয়ামের চাষ করা হয়েছিল। কিন্তু লিলিয়ামের বাল্ব সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করতে পারায় তখন বাণিজ্যিকভাবে এগোনো যায়নি। সংরক্ষণের জন্য ফুল সেক্টরের হিমাগার চালু হলে লিলিয়াম ফুলের চাষ বিস্তার করা সম্ভব।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিভাগীয় (ফুল) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফারজানা নাসরীন খান বলেন, লিলিয়ামের একই কন্দে তিন থেকে চার বার ফুল উৎপাদন করা সম্ভব। যদি কন্দ ঠিকমতো সংরক্ষণ করা যায়। এশিয়াটিক প্রজাতির এই লিলিয়াম ফুল গ্রিন বা এগ্রো সেড বাদেও শুধুমাত্র মশারি জাতীয় নেট দিয়ে চাষ করা সম্ভব। এতে একেবারেই খরচ কম, লাভ বেশি।
Posted ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin