শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারীর চোখে স্বাধীনতা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট

নারীর চোখে স্বাধীনতা

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের অর্ধশত বছর পেরিয়েছে। দৃশ্যপট বদলেছে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটা দেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। দেশ এগিয়েছে, এগিয়েছে নারীও। স্বাধীনতা অর্জনের ৫৩ তম বছরে নারীরা নিজেদের স্বাধীনতাকে কিভাবে দেখছেন তা নিয়ে আজকের প্রতিবেদন।

জেরিন তাসনিম দিশা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আমার কাছে নারীর স্বাধীনতা মানে নিজেকে নারী হিসেবে না মানুষ হিসেবে দেখার সুযোগ প্রতিষ্ঠা করা। কোনো জিনিস আমি পারি মানে এই না যে আমি নারী হিসেবে পারি, বরং আমি মানুষ তাই আর পাঁচটা মানুষের মত আমিও পারি। আমার কাঁধে সব সামলানোর বোঝা থাকবে না, কিন্তু আমি করব ভালোবেসে, আমার ইচ্ছায়।

আমার কাছে নারী স্বাধীনতা মানে নিজেকে বারবার না মনে করান যে, ‘আমার স্বাধীনতা প্রয়োজন’। ‘নারীর স্বাধীনতা’ থেকে শব্দটি শুধুই স্বাধীনতা অবধিই সীমাবদ্ধ থাকবে।

সভ্যতার প্রতিটা ক্ষেত্রে নারীদের ব্যাপক অবদান থাকলেও তার খুব সামান্যই আমরা জানি বলেই আমার বিশ্বাস। কৃষির গোড়াপত্তন থেকে শুরু করে তথ্য-প্রযুক্তি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, ব্যবসা সর্বক্ষেত্রেই নারীরা রেখেছে তাদের সোনালি পদচিহ্ন।

দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা পিছিয়ে থাকার পুরনো তত্ত্বটি বাতিল হয়েছে অনেক আগেই। নারীরা এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে। বাংলাদেশের মতো আন্ডার প্রিভিলেজড একটা দেশেও নারীর ক্ষমতায়নের জোয়ার দেখে বৈশ্বিক চিত্র মোটামুটি আন্দাজ করা যায়ই।

মৌমিতা দত্ত
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

আমার কাছে নারীর স্বাধীনতা বলতে বোঝায়, শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণে কোনো সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হওয়া বা কোনো কাজে বাধা না পাওয়া। যেখানে তার স্বকীয়তা বজায় থাকে, একটা নিজস্বতা থাকে। সে নারী তাই সে রাজনীতি করতে পারবে না, নারীদের যুদ্ধক্ষেত্রে মানায় না, নারীদের এটা করা শোভা পায় না, ওটা করা সমাজ ভালো চোখে নেয় না- এই বিষয়গুলো যখন না থাকে, সেটাই আসলে আমার কাছে স্বাধীনতা। একটা বিশাল খোলা আকাশের নীচে কোনো দ্বিধা ছাড়া, কোনো সংকোচন ছাড়া মন ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার চেয়ে বড় স্বাধীনতা আর কি হতে পারে!

বর্তমান আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে অবশ্যই সবক্ষেত্রে নারী স্বাধীন না। কিছু খুবই প্রচলিত কথা বলি, ‘বাড়ির বউ সংসার ফেলে অন্য জায়গায় কেন চাকরি করবে? ওসব প্রমোশন কিভাবে আসে সবই বুঝি আমরা’।

এগুলোতো আমাদের প্রতিদিনের চিত্র। স্বাধীনতা কোথায়? আর্থসামাজিক না হয় বাদই দিলাম। নিজের পরিবারেই বা একজন নারীর স্বাধীনতা কতখানি নিশ্চিত হয় সেটা মোটামুটি কমবেশি সবারই জানা। যেকোনো মানুষকে আপনি একদম তার গভীর ইচ্ছা জিজ্ঞেস করলে দেখবেন অধিকাংশ মানুষ শুধু স্বাধীন হতে চায়, একটু নিজের মতো বাচতে চায়।

নুসরাত আরা শোভা
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

‘স্বাধীনতা’। বাইরের দেশের শাসন থেকে বের হয়ে এসে নিজেদের স্বাধীন ভাবলেও আমরা কখনই স্বাধীন হয়নি। বিশেষ করে নারী। স্বাধীন মূলত তখন এ হবে যখন ইচ্ছামতো কিছু করার আগে ভয় পেতে হবে না। কিছু সখ নারী বলে এড়িয়ে যেতে হবে না।

নারীর স্বাধীনতা বললেই একদল ভেবে বসে তারা ইচ্ছামতো জামাকাপড় এর কথা বলছে। স্বাধীনতা সেসব এর অনেক উপরে। বিনা বাধায় কোথায় ঘুরে বেরানো, রাতের শহর দেখা। নিরাপত্তার জন্য কোন পুরুষ মানুষকে সঙ্গে রাখার মনোভাব বাদ দিতে পারলে আমার চোখে আমি স্বাধীন।

তাহিরা আক্তার
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

স্বাধীনতা মানে হলো নিজের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকা, স্বাধীনতা মানে হলো আত্মমর্যাদা। সব প্রকার শোষণ, অন্যায় অত্যাচার থেকে মুক্ত থেকে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে বেঁচে থাকার নামই স্বাধীনতা। স্বাধীনতায় নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে তা আমার পিছনের দিকে তাকালেই দেখতে পাই।

হাজারো বাঁধা নিষেধের দেয়াল ভেঙে, ঝড় ঝঞ্ঝা পাড়ি দিয়ে, শাসন বারণের পাহাড় ডিঙিয়ে, অপমান ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, নিপীড়ন নির্যাতনকে তুচ্ছ করে নারীরা অদম্য শক্তিতে বেরিয়ে এসেছে। ৫৩ বছর আগের সেই প্রান্তিক- অক্ষম- অবলা- অশিক্ষিত- পরনির্ভরশীল- লাজুক এবং অন্ধকারে ডুবে থাকা, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর তকমা ছুঁড়ে ফেলে অনেকাংশেই নারী নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে মূলধারায়।

কিন্তু, বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশে নারীর জীবন নিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা এখনো এই ২০২৩ সালেও অত্যন্ত সীমিত। অনেক যোগ্যতা সম্পন্ন নারীও এখনো চাইলেই তার মতামত প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পান না, বরং পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে তীব্র বাধার সম্মুখীন হন। এই বাধা অতিক্রম করেই বাংলাদেশের নারীদের এগোতে হয়েছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৬:৫৫ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]