সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘূর্ণিঝড় মোখা: যেসব এলাকায় বড় ধ্বংসের শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ১৩ মে ২০২৩ | প্রিন্ট

ঘূর্ণিঝড় মোখা: যেসব এলাকায় বড় ধ্বংসের শঙ্কা

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা ঘণ্টায় ১৩ কিলোমিটার গতিতে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে এগোচ্ছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৯৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত যে গতিতে ঘূর্ণিঝড় মোখা এগোচ্ছে, তাতে রোববার দুপুর নাগাদ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল ও মিয়ানমারের উত্তর-উপকূল দিয়ে এটি অতিক্রম করতে পারে। উপকূলে আঘাত হানার ৪-৬ ঘণ্টার মধ্যে মোখা শক্তি হারাবে।

প্রবল থেকে ‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়া মোখা উপকূলে আঘাতের সময় এর বাতাসের গতিবেগ ১৫০-১৭৫ কিলোমিটার থাকতে পারে।

এদিকে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে তা জানিয়েছেন বাংলাদেশের আবহাওয়া পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ। তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষতির যে চিত্র তুলে ধরেছেন, সেগুলো তার ভাষায় তুলে ধরা হলো—

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ

‘ঘূর্ণিঝড় মোখা থেকে সম্ভাব্য যে ক্ষতিগুলো, সেটি তো আমরা ইতোমধ্যে অনেকে আলোচনা করেছি। বিশেষ করে, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জন্য সবচেয়ে বেশি যেটি হচ্ছে যে জলোচ্ছ্বাস। ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার যে জলোচ্ছ্বাস, এই জলোচ্ছ্বাসের কারণে প্রথমত দ্বীপের সম্পূর্ণটাই প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

দুই নম্বর হচ্ছে, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে এই যে ছোট ছোট দোকানগুলো যেগুলো আছে, আমরা জানি, বিভিন্ন শুটকির দোকান, এই যে কসমেটিকসের দোকান রয়েছে এবং খেলনা বা অন্যান্য, এগুলো পুরো একদম ভেসে যাবে। আর এর পরে হচ্ছে যে, জেলেপল্লির যে বাড়িঘরগুলো, যেগুলো বাঁশ এবং কাঠের তৈরি, সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে পুরোপুরি।

আর সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ১৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার বেগে (ঘূর্ণিঝড়) আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে দ্বীপটার প্রচণ্ড অংশ ভেঙে যাবে, ধসে যাবে। ঠিক আছে? এটা ক্ষয় হয়ে যে ভাঙনের সৃষ্টি হবে দ্বীপে, আমি জানি না ঠিক কী পরিমাণ ক্ষতি হবে, কিন্তু আমি যেটা আশঙ্কা করতেছি, ব্যাপক পরিমাণ ক্ষতি হবে দ্বীপের পুরো অর্ধেক অংশ ভেঙে যেতে পারে। বিশেষ করে, পূর্ব দিক থেকে, যেই দিক থেকে বাতাস আসবে, সেই দিকের অংশের হচ্ছে পুরোটাই মানে এই গতিবেগের বাতাসের আঘাত কখনোই হয়নি এর পূর্বে।

আমরা জানি যে, দ্বীপের ব্যাপক ক্ষতি করে ফেলেছি গত ১০/১২ বছরে বিভিন্ন প্রকারে। দ্বীপের গাছপালা কেটে ফেলে দ্বীপের একদম গোড়া পর্যন্ত মাটি কেটে বিল্ডিং তৈরি করছি। অর্থাৎ এতে যেটা হবে, দ্বীপের মধ্য দিয়ে বাতাসের চলাচলটা সমস্যা হবে এবং এই কারণে দ্বীপের একদম যে কিনারায়, অর্থাৎ বন্ধ করে যে বাড়ি তৈরি করা হয়েছে, সেগুলোই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অর্থাৎ এই স্থাপনাগুলো একটাও থাকার সম্ভাবনা খুবই কম।

আর এর পরে যেটি হচ্ছে যে, দ্বীপের চতুর সাইডে যে জাহাজগুলো আছে, যে জেলে নৌকাগুলো, সে নৌকাগুলোর পুরোটাই হারিয়ে যাবে। যত শক্তিশালী চেইন দিয়ে বাঁধা হোক না কেন, এগুলো পুরোটাই ভেসে যাবে। কোথায় যাবে, এগুলোর কোনো ঠিক নেই।

কুতুবদিয়া, মহেশাখালী ও রোহিঙ্গা শিবির

একই রকম ঘটনা ঘটতে পারে আমাদের কুতুবদিয়া এবং মহেশখালী দ্বীপে। ওখানেও অনেক ক্ষতি হতে পারে। আর রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে যে সমস্যা, সেইখানে হচ্ছে যে, এখানে বাড়িঘরগুলো বাঁশ, কাঠ এবং প্লাস্টিকের তৈরি। তো এই ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে যেটা হবে যে, বন্যা হয়ে বন্যা প্লাবিত হবে। এরপরে হচ্ছে যেহেতু দুই লক্ষ ঘরবাড়ি আছে, সেগুলো হচ্ছে যে, পাহাড়ি ঢল থেকে ভেঙে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। একদম পাহাড় ধসে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম

ঘূর্ণিঝড়ের একটা অংশ রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলার ওপর দিয়েও অতিক্রম করবে। বিশেষ করে বান্দরবান জেলার ওপরে পাহাড় ধসের একটা সম্ভাবনা আছে। চট্টগ্রাম শহরেও অনেক পাহাড়ি ধসের সম্ভাবনা রয়েছে অনেক বৃষ্টির কারণে।

উপকূলীয় অঞ্চল

উপকূলীয় এলাকায়, বিশেষ করে বরিশাল বিভাগ এবং চট্টগ্রাম বিভাগের যে উপকূলীয় জেলাগুলো, বরিশালের ভোলা, তারপরে হচ্ছে বরগুনা, তারপরে হচ্ছে চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালী, ফেনী, দ্বীপ যে এলাকাগুলো চট্টগ্রামের (বিভাগের), এগুলো অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বিশেষ করে সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া, হাতিয়া; নোয়াখালীর হাতিয়া এবং সন্দ্বীপ, এ দ্বীপগুলো ক্ষতির অনেক বেশি সম্ভাবনা রয়েছে।

আম ও ধানের ক্ষতি

আমরা জানি এখন আমের সিজন এবং আমি শুনেছি চট্টগ্রাম বিভাগের এবং আশেপাশের এলাকায় ধানগুলো পুরোপুরি কেটে ফেলা হয়নি। আর আমাদের আবহাওয়া অধিদফতরও যথেষ্ট সময়ে পূর্বাভাস দেয়নি এখানে, মাত্র দুই দিন আগে দাবি করেছে। সেই একই কথা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের…আজকে এক দিনের মধ্যে সে ধানটা কীভাবে কাটবে, কী দিয়ে কাটবে? কোন শ্রমিক দিয়ে কাটবে? এরা কোথায় পাবে? এ জিনিসগুলা দিয়ে আসলে কিছু হয় না, যেটি বলতেছি। এ কারণে আমি মনে করছি যে, চট্টগ্রাম, বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলো এবং বিশেষ করে আমরা জানি যে, আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোতে বিশেষ করে ফলমূল চাষ অনেক বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে। আম চাষ থেকে শুরু করে অন্যান্য। তো এই ঘূর্ণিঝড়টির কারণে আমি মনে করছি যে, এই পার্বত্য চট্টগ্রামে যে ফল এবং ফল চাষের যে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসছিল, সেই ক্ষেত্রে এই আমগাছগুলোর আম ঝরে পড়ে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বা অন্যান্য ফলজাতীয় যে শস্যগুলো, সেগুলো আসলে অনেক বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

কক্সবাজার শহর

কক্সবাজারের যে ফিশারিঘাট, সেই ফিশারিঘাটে অনেক ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। বিশেষ করে আমাদের কক্সবাজারে যেহেতু ঘূর্ণিঝড়টি অনেক শক্তিশালীভাবে আঘাত করবে, সে ক্ষেত্রে আসলে কক্সবাজার সি বিচে, এখানেও অনেকটা ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। আমি জানি না বর্তমানে এখানে স্ট্রাকচারগুলো কী অবস্থাতে, বাট ঘূর্ণিঝড়টা কক্সবাজার জেলা শহর বা বিচে, এদিকেও ১৫০ কিলোমিটারের বেশি গতিবেগে আঘাতের সম্ভাবনা আছে। সেই ক্ষেত্রে এখানে আসলে, শহরের ভেতরেও অনেক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৫:২৭ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৩ মে ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]