সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাম্য ও অসাম্প্রদায়িকতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ২৪ মে ২০২৩ | প্রিন্ট

সাম্য ও অসাম্প্রদায়িকতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম

‘ভাঙি’ মন্দির, ভাঙি’ মসজিদ ভাঙিয়া গির্জা গাহি সঙ্গীত, এক মানবের একই রক্ত মেশা কে শুনিবে আর ভজনালয়ের হ্রেষা।’

দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও কীভাবে একজন মানুষ মনেপ্রাণে অসাম্প্রদায়িক হয়ে উঠতে পারে তা অতিবিস্ময়কর। শুধু কি তাই যার শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল মাদ্রাসায় ও জীবন তাগিদের এক পর্যায়ে করেছেন মুয়াজ্জিনের কাজও। অথচ তার কলম গেয়ে উঠেছে, ‘মিথ্যা শুনিনি ভাই, এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই।’

তিনি আমাদের দুখু মিয়া। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। যার কবিতা, গল্পে শুধু অসাম্প্রদায়িকতার কথা নয় আছে সাম্যের কথাও। মানবতার কথাও। বলেছেন- ‘গাহি সাম্যের গান- মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান। নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি, সব দেশে সব কালে ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।’

কাজী নজরুল ইসলাম বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, সংগীতস্রষ্টা, দার্শনিক। যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকার সঙ্গে সঙ্গে প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক, দেশপ্রেমী, বিদ্রোহী কবি। তিনি বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ছিলেন কাজী ফকির আহমেদ এবং মাতা জাহেদা খাতুন।

মাইকেল পরবর্তী বাংলা কাব্যকাশের আলোকচ্ছটায় যে কবি সত্তা সমকালীন সমাজও রাষ্ট্র মানসে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছে তা নজরুলেরই কবিতা। বস্তুত নজরুল যে সময়ে জন্মগ্রহণ করেছেন সে সময়টা ছিলো প্রচণ্ড ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ সময়। সে সময়ে তিনি দেখেছেন প্রথম মহাযুদ্ধে ধ্বংসলীলা। দেখেছেন মহাযুদ্ধের পরবর্তী সময়ের সামাজিক উত্থান-পতন। বেকার সমস্যায় শত শত যুবকের আত্মহত্যা-পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার থাবায়। সেখান থেকেই নজরুল হয়ে উঠেছেন বিপ্লবী বিদ্রোহী। বলেছেন-

‘বল বীর – বল উন্নত মম শির! শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির! বল বীর – বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’ চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি’ ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া, উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর!’

বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক এবং অভিনেতাও। সংগীত বিশিষ্টজনদের মতে রবীন্দ্রনাথ -পরবর্তী সময়ে তার গান অনেকটাই ভিন্ন ধরনের নির্মাণ। অধিকাংশ গান সুর প্রধান। বৈচিত্র্যপূর্ণ সুরের লহরী কাব্যকথাকে তরঙ্গায়িত করে এগিয়ে নিয়ে যায়। সুরের বিন্যাসের উপরে কথা ঢলে পড়ে। তার গানে বহু গায়ক সুর-স্বাধীনতা ভোগ করেন। অনেক ক্ষেত্রে গায়ক সুরের ঢেউয়ে বেশি মেতে যান। তখন গান হয়ে যায় রাগপ্রধান।

‘মোর প্রিয়া হবে এসো রানি দেব খোঁপায় তারার ফুল কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির চৈতী চাঁদের দুল। কণ্ঠে তোমার পরাবো বালিকা হংস –সারির দুলানো মালিকা বিজলী জরীণ ফিতায় বাঁধিব মেঘ রঙ এলো চুল।’

নজরুল বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। তার কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছে। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তার লেখনী জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৮:০৯ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৪ মে ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]