শুক্রবার ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গরমে কদর বেড়েছে তালশাঁসের

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩ | প্রিন্ট

গরমে কদর বেড়েছে তালশাঁসের

জামালপুরে জেষ্ঠ্যের প্রচণ্ড গরমে কদর বেড়েছে তালশাঁসের। কাঠফাটা এ গরমে স্বস্তি পেতে রাস্তার পাশে ফুটপাতে বিক্রি হওয়া রসালো এই ফলের স্বাদ নিচ্ছেন অনেকে। কচি তালশাঁস ও পাকা তাল সব বয়সীদেরই জনপ্রিয়। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ফলে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে। এর বেশিরভাগ অংশ জলীয় হওয়ায় এটা খেলে দ্রুত শরীরে পানিশূন্যতা দূর হয়।

তালশাঁস প্রাকৃতিকভাবে দেহকে রাখে ক্লান্তিহীন। গরমের তালশাঁসে থাকা জলীয় অংশ পানিশূন্যতা দূর করে। খাবারে রুচি বাড়িয়ে দিতেও সহায়ক। তালে থাকা ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তিকে উন্নত করে। তালে থাকা উপকারী উপদান আপনার ত্বকের যত্ন নিতে সক্ষম। কচি তালশাঁস লিভারের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। তালশাঁস রক্তশূন্যতা দূরীকরণে দারুণ ভূমিকা রাখে।

তালশাঁসে থাকা ক্যালসিয়াম হাঁড় গঠনে দারুণ ভূমিকা রাখে। তালে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। তালে থাকা ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স আপনার পানি পানের তৃপ্তি বাড়িয়ে দেয়। তাল বমিভাব আর বিস্বাদ দূর করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জামালপুর পৌর শহরের বিভিন্ন গলিতে, রাস্তার পাশে তালশাঁস বিক্রি হচ্ছে। ছোট-বড় সব বয়সের মানুষের পছন্দের খাবার হিসেবে সমাদৃত তালশাঁস। মানুষের চাহিদা থাকায় পুরান উপজেলায় ব্যাপক বিক্রি হচ্ছে এই ফল।

জামালপুর শহরের বুড়ি দোকান মোড়ে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে পরিবারের সবার জন্য তালশাঁস কিনেছিলেন শহরের আকলিমা বেগম। তিনি বলেন, ফরমালিন বা কেমিক্যাল ছাড়া কোনো ফল পাওয়া মুশকিল। সেখানে তালশাঁস সর্বোৎকৃষ্ট। কোনো ধরনের ভেজাল নেই। তবে তালশাঁস কেবল ফুটপাত বা মহল্লার অলিগলিতে পাওয়া যায়। ছোট শাঁস অনুযায়ী দাম কিছুটা বেশি হলেও এ নিয়ে কিছু বলার নেই। বিক্রেতারা কষ্ট করে কেটে দেয়। লাভ না হলে তারা চলবে কীভাবে।

আরেক ক্রেতা তুহিন বলেন, তালশাঁস অনেক উপকারী। এটা ডায়েটের জন্য বেশ কার্যকর। এছাড়া শুষ্ক ত্বক ও চুল পড়া বন্ধ করে। লিভার, কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্তশূন্যতা এগুলোর জন্যেও উপকারী। এটা খেতেও সুস্বাদু। এজন্য নিজে খেলাম পরিবারের সদস্যদের জন্যেও নিলাম।

তালশাঁসের খুচরা বিক্রেতা আলমগীর জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে গরম এলেই তিনি তালশাঁস বিক্রি করেন। আগে গ্রামের এলাকায় বিক্রি করতেন, এখন জামালপুর পৌর শহরে বিভিন্ন স্থানে ফুটপাতে বসে বিক্রি করেন। বেচাকেনাও ভালো। পরিবহন খরচসহ সব খরচ বাদ দিয়ে দৈনিক সাত-আটশ’ টাকা লাভ থাকে। গরম যতো বাড়ে তালশাঁসের চাহিদাও বাড়ে।

আরেক বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রথম প্রথম স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা আমার মূল ক্রেতা থাকলেও গরমের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বয়স্ক পুরুষ,
মহিলা, ভ্যানচালক, অটোরিকশার চালকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ গরমের সাময়িক তৃপ্তি পেতে এ তালশাঁস খেতে আসে। নির্ভেজাল ও বিশুদ্ধ হওয়ার কারণে এখানে দাঁড়িয়ে খাওয়ার পাশাপাশি বাড়ির জন্যও নিয়ে যায় অনেকে।

গ্রাম থেকে তাল আনেন বিক্রেতা এনামুল। তিনি বলেন, ‘সব খরচ একসঙ্গে ধরে গড়ে এক ছড়া তাল পাইকারি একশ’ টাকা বিক্রি করা হয়। আমাদেরও লাভ থাকে, তবে সীমিত। বেচাকেনা বেশি হলে লাভ বেশি হয়। এক ছড়াতে বারো থেকে চৌদ্দটি তাল থাকে। কোনো ছড়ায় আরো বেশি থাকে। আমাদের কাছ থেকে যারা পাইকারি কেনেন তারা একটা তালশাঁস ১০ টাকা করে বিক্রি করেন।

পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, তালগাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। তাছাড়া বজ্রপাতরোধে তালগাছ বিশেষ ভূমিকা পালন করো। তাছাড়া তাপমাত্রার কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া ও চুলপড়া ইত্যাদি রোধ করতে সাহায্য করে এটি। অতিরিক্ত ঘামের ফলে শরীর থেকে যে পানি বেরিয়ে যায় তা পূরণ করতে সাহায্য করে তালশাঁস।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৮:১১ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]