বুধবার ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘জিনের বাদশাহ’ অবশেষে ধরা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ১৪ জুন ২০২৩ | প্রিন্ট

‘জিনের বাদশাহ’ অবশেষে ধরা

‘জিনের বাদশাহ’র লোভে পড়ে ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা খুইয়েছেন কিশোরগঞ্জের পাটধা গাবতলী এলাকার মো. ইয়াছিন নামে এক ব্যবসায়ী। প্রতারণার শিকার হয়েছেন বোঝার পর গত ৮ জুন রাজধানীর রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ইয়াছিন।

সেই মামলার সূত্র ধরে সেই কথিত জিনের বাদশাহকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রতারক ‘জিনের বাদশাহ’ নাম মো. উজ্জ্বল মিয়া। তিনি গাইবান্ধার ফরিদগঞ্জ থানার বাসিন্দা।

পুলিশ জানায়, নিজেকে জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে সব সমস্যা সমাধানের কথা বলে সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন উজ্জ্বল মিয়া। ব্যবসায়ী ইয়াছিন তার সর্বশেষ শিকার।

জানা যায়, গাড়ির গ্যারেজের ব্যবসা করতেন কিশোরগঞ্জের ইয়াসিন। গত ৪ এপ্রিল ব্যবসায়িক কাজে ঢাকায় আসেন। ওঠেন রাজধানীর মগবাজারের সুইট স্লিপ আবাসিক হোটেলে।

পরদিন (৫ এপ্রিল) রাত ১২টার দিকে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে তার মোবাইল নম্বরে একটি কল আসে। রিসিভ করেন ইয়াছিন। অপর পাশ থেকে একটি কণ্ঠ বলে- ‘আমি জিনের বাদশাহ। তুমি সাত হাঁড়ি সম্পদ পাবে, এর মধ্যে তিন হাঁড়ি কাঁচা পয়সা, চার হাঁড়ি স্বর্ণমুদ্রা। এর জন্য এই গোপন সংবাদের কথা কাউকে বলা যাবে না। এই গুপ্তধন পেতে হলে পাঁচটি শর্ত মানতে হবে। ’

লোভে পড়ে ইয়াছিন সব শর্তে রাজি হয়ে যান। পর দিন ৬ এপ্রিল একই নম্বর থেকে কল আসে। প্রথম শর্ত অনুযায়ী মাজারে সাতটি জায়নামাজের জন্য ৪৭ হাজার টাকা বিকাশ করে পাঠান ইয়াছিন। এরপর ইফতারের কথা বলে ১ লাখ ৬৫ হাজার, স্বর্ণের পুতুলের কথা বলে টাঙ্গাইল এলেঙ্গা ব্রিজের নিচে ৫ লাখ টাকা রেখে আসতে বলা হয়, ইয়াছিন তাই করেন। এরপর স্বর্ণের তিনটি হাঁড়ি ভেঙে গেছে বলে সাপকে দুধ খাওয়ানোর জন্য ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা দিতে বলা হয়, হাঁড়ির ভেতর স্বর্ণ জমাট বেঁধে গেছে বলে তিন ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং আরো প্রলোভন দেখিয়ে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা নেয় ঐ জিনের বাদশাহ। সর্বশেষ শর্ত অনুযায়ী জিনের বাদশাহকে আরো ১ লাখ টাকা দেন ইয়াছিন।

ভুক্তভোগী ইয়াছিন যখন বুঝতে পারেন, আসলে তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন, ততক্ষণে জিনের বাদশাহ তার কাছ থেকে মোট ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এরপর থেকে জিনের বাদশাহ যোগাযোগ করা বন্ধ করেন দেন।

ভুক্তভোগী ইয়াছিন বলেন, ঐ প্রতারক জিনের বাদশাহ দাবি করে ফোনে এমনভাবে কথা বলতেন, তখন সবই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছিল। পরে জানতে পেরেছি, আমার ফোন এলে প্রথমে আমার স্ত্রী ফোন ধরেছিল। তার থেকে কৌশলে আমার সমস্যা ও দুর্বলতার কথা জেনে নেয় ঐ প্রতারক।

তিনি বলেন, আমি গাড়ির গ্যারেজের ব্যবসা করি। এই ব্যবসার ৫ লাখ টাকা এবং আরো আট লাখ টাকা ধার করে দফায় দফায় মোট ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছি। এরপর বুঝতে পেরেছি আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি।

এই ঘটনায় মামলাটি ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ তদন্ত শুরু করে। ফোন নম্বরের সূত্র ধরে গত ৯ জুন গাইবান্ধা থেকে অভিযুক্ত মো. উজ্জ্বল মিয়াকে গ্রেফতার করে তারা।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. সাইফুর রহমান আজাদ জানান, গ্রেফতার উজ্জ্বল দেড় বছর ধরে এমন প্রতারণা করে আসছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। তার থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি আরো কতজনের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২:৪১ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৪ জুন ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]