বুধবার ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লজ্জাবতী রত্না থেকে কিংবদন্তি অভিনেত্রী হওয়ার গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন ২০২৩ | প্রিন্ট

লজ্জাবতী রত্না থেকে কিংবদন্তি অভিনেত্রী হওয়ার গল্প

চঞ্চলতা থাকলেও বেশ লাজুক ছিলেন তিনি। তাই ক্লাস ফাইভে থাকতেই যখন সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব আসে, তার বাবা বিস্মিত হন। বলেন, ‘আমার মেয়ে কীভাবে অভিনয় করবে! এত লাজুক, কারো সামনেই তো আসতে চায় না। অথচ নিয়তির কী লীলা, সেই লজ্জাবতী কিশোরীই কয়েক বছর পর হয়ে ওঠেন ঢাকাই সিনেমার সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়িকা শাবানা।

চট্টগ্রামের রাউজানে তার জন্ম। বাবা-মা নাম রাখেন আফরোজা সুলতানা রত্না। পড়াশোনায় মন বসেনি তার। তাই স্কুলের গণ্ডিও পার করেননি। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াও যে জীবনে সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করা যায়, সেটা কড়ায়-গণ্ডায় বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি।

ঢালিউডের স্টারমেকার নির্মাতা এহতেশাম ছিলেন তার বাবার খালাতো ভাই। সেই সূত্রেই অভিনয়ের সুযোগটা আসে। সিনেমার জন্য তাকে আলাদা নামও দেন এহতেশাম। তবে সম্পর্কের খাতিরে সুযোগ পেলেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন নিজের যোগ্যতায়, চেষ্টায়। যার সুবাদে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে প্রায় তিনশ’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি।

১৯৬২ সালে ‘নতুন সুর’ চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে তার রুপালি অধ্যায়ের সূচনা হয়। এরপর আরো কয়েকটি সিনেমায় নৃত্যশিল্পী ও অতিরিক্ত শিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন। নায়িকা চরিত্রে তাকে প্রথম দেখা যায় ১৯৬৭ সালে, এহতেশাম পরিচালিত ‘চকোরী’তে। ছবিটি ব্যবসাসফল হয়, আর তিনিও বনে যান তারকা। অতঃপর শুধু এগিয়ে যাবার পালা। ব্যস্ততায় ডুবে একের পর এক সিনেমা করেছেন আর নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। নাদিম, রাজ্জাক, আলমগীর, ফারুক, জসীম, সোহেল রানাসহ জনপ্রিয় নায়কদের সঙ্গে জুটিবেঁধে উপহার দিয়েছেন বহু নন্দিত সিনেমা।

তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ছবি হলো, ‘ভাত দে’, ‘অবুঝ মন’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘সত্য মিথ্যা’, ‘রাঙা ভাবী’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘ওরা এগারো জন’, ‘বিরোধ’, ‘আনাড়ি’, ‘সমাধান’, ‘জীবনসাথী’, ‘মাটির ঘর’, ‘লুটেরা’, ‘সখি তুমি কার’, ‘কেউ কারো নয়’, ‘পালাবি কোথায়’, ‘স্বামী কেন আসামি’, ‘দুঃসাহস’, ‘পুত্রবধূ’, ‘আক্রোশ’, ‘চাঁপা ডাঙার বউ’ প্রভৃতি।

নায়িকা কিংবা অভিনেত্রী হিসেবে তার মতো প্রাপ্তি ঢাকাই শোবিজে কারও ঝুলিতে নেই। নগর থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, সবার কাছেই তিনি জনপ্রিয়। আর পুরস্কার? সেখানে তো তার রেকর্ড কেউ ভাঙতেই পারেনি আজ অব্দি। সেরা অভিনেত্রী হিসেবে নয়বার, প্রযোজক হিসেবে একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। একই আয়োজনে ২০১৭ সালে আজীবন সম্মাননাও পেয়েছেন তিনি।

সিনে জগতে একটি ধারণা প্রচলিত ছিল যে বিয়ের পর নায়িকাদের জনপ্রিয়তা কমে যায়। কিন্তু এই ধারণা ভুল প্রমাণ করেছেন তিনি। ক্যারিয়ারের শুরুতেই ২১ বছর বয়সে বিয়ে করেন এই অভিনেত্রী। এরপর সংসার আর সিনেমা, দুটোই সমানভাবে সামলেছেন।

তবে ১৯৯৭ সালে এসে তার মনে হয়, ক্যারিয়ারে অনেক সময় দিয়েছেন, এবার সন্তানদের দিকে পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া যাক। তাই আচমকাই সিনেমা থেকে বিদায় নেন। আর স্থায়ী হন যুক্তরাষ্ট্রে। সেই থেকে এখনো তিনি মার্কিন মুলুকে বসবাস করছেন। মাঝে মধ্যে দেশে আসেন, অতিথি পাখির মতো ঘুরে আবার ফিরে যান। একাধিকবার সিনেমায় প্রত্যাবর্তনের বার্তাও দিয়েছেন বটে। কিন্তু তা আর বাস্তবে পরিণত হয়নি। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, সিনেমা থেকে বিদায় নেওয়ার ২৬ বছর হয়ে গেলেও এখনও দর্শক তাকে ভালোবাসে, মিস করে।

আজ বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) তার জন্মদিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। ঢালিউডের এই আদর্শ অভিনেত্রী, কালজয়ী তারকার নাম যদিও সবার জানা; তবু বলার জন্য বলা- তিনি শাবানা।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৭:৩৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]