বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির নতুন কারিকুলামে পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ১৬ জুন ২০২৩ | প্রিন্ট

ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির নতুন কারিকুলামে পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা

নতুন কারিকুলামে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায়। ক্লাসে এখন ছোট ছোট গ্রুপ তৈরি করে দলগতভাবে করানো হচ্ছে অ্যাসাইনমেন্ট। গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে হাতে-কলমে শিক্ষায়। এতে সবাই সমানভাবে এগিয়ে যেতে পারছে না। নতুন কারিকুলাম যারা বুঝতে পারছে তারা এগিয়ে যাচ্ছে, যারা বুঝতে পারছে না তারা ক্লাসের প্রতি মনোযোগ হারাচ্ছে। শিক্ষকরাও বিষয়গুলো ঠিকঠাক খেয়াল করছেন না বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। পরিস্থিতি বিবেচনায় পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নিতে ক্লাস রুটিনে লার্নিং লস বা রেমিডিয়াল (সংশোধনমূলক শিখন) ক্লাস করানোর কথা ভাবা হচ্ছে। এক্ষেত্রে যারা পিছিয়ে পড়ছে তাদের চিহ্নিত করে আলাদাভাবে ক্লাস করানোর দায়িত্ব শ্রেণি শিক্ষকদের। সেটি করলে কেউ পিছিয়ে পড়বে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। রাজধানী ঢাকার কাকরাইলে অবস্থিত উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ইশমাম হাবিব। তাদের ক্লাসে আটজন করে নয়টি গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। একটি গ্রুপের লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে হাবিব।
ইশমাম হাবিব বলেন, গ্রুপে আটজন করে থাকলেও প্রোজেক্ট তৈরির কাজ সবাই করতে চায় না। কেউ কেউ বুঝতে পারে না, কেউ আবার ফাঁকি দেয়। দলে আটজন থাকলেও চার-পাঁচজন অ্যাসাইন্টমেন্ট, প্রেজেন্টেশন, পোস্টার তৈরি, নাটক, উপস্থাপনাসহ নানা ধরনের কাজ দেন শিক্ষকরা। এসব কাজ গ্রুপ লিডারের নেতৃত্বে সবাই মিলে করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। দলের কেউ কেউ বুঝতে না পেরে ক্লাসে অনুপস্থিত থাকে। কেউ কেউ আবার ইচ্ছা করে টিমওয়ার্ক করতে চায় না। ক্লাস শিক্ষকদের কাছে অভিযোগ করলেও তারা এসব বিষয় নিয়ে তেমনভাবে কাউকে কিছু বলেন না।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উইলস লিটল ফ্লওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন শিক্ষক বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনার ভিত্তিতে আমরা কোনো শিক্ষার্থীকে জোর করে কিছু করাতে পারি না। ক্লাসে টিমওয়ার্ক করে কাজ করতে দেওয়া হয়। তাতে যদি কেউ করতে না চায় তাকে বুঝিয়ে বলা ছাড়া আমাদের কিছুই করার থাকে না।
তিনি বলেন, টিম লিডারের তত্ত্বাবধানে টিমওয়ার্কের মাধ্যমে সবাইকে কাজ করার কথা থাকলেও ক্লাসের সব শিক্ষার্থী সমানভাবে বুঝতে পারে না। কেউ কেউ আবার হাতে-কলমে কাজ করতে চায় না, নানাভাবে ফাঁকি দিচ্ছে। এতে দলের কেউ কেউ এগিয়ে গেলেও কেউ কেউ পিছিয়ে যাচ্ছে। যারা নিজে থেকে এসে বলছে তাদের আলাদাভাবে কিছু কাজ দিয়ে তা বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হলেও অন্যরা পিছিয়ে পড়ছে। এতে বছর শেষে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন শিক্ষকরা।
জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটির সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক এম তারিক আহসান বলেন, দুটি কারণে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়তে পারে। শিক্ষকরা ঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে না পারলে ও সঠিকভাবে বুঝতে না পারলে কোনো কোনো শিক্ষার্থী পিছিয়ে পড়তে পারে। গ্রুপওয়ার্কে সবাই একই রোল প্লে করবে, বিষয়টি আসলে তা নয়। শিক্ষকরা মৌখিকভাবে রোল ডিফাইন করে না দিলে বোঝাপড়ার গ্যাপ তৈরি হয়। সবাই একসঙ্গে প্রেজেন্টেশন দেবে না। প্রেজেন্টেশন তৈরিতে কে কী করবে সেটি আগে থেকে নির্দেশনা দেবেন শিক্ষক।
তিনি বলেন, এসব বিষয় যেহেতু চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে এটি একটি ভালো দিক। পরবর্তীসময়ে এসব বিষয়ে নতুন নির্দেশনা দেওয়া যাবে। এতে শিক্ষার্থীরা আর কেউ ইনঅ্যাকটিভ থাকবে না।
এই শিক্ষাবিদ বলেন, কোনো শিক্ষার্থী নিয়মিত ক্লাস না করলে সে এমনিতে পিছিয়ে পড়তে পারে। সে কারণে সামনে ক্লাস রুটিনে রেমিডিয়াল ক্লাস যুক্ত করা হবে। যে বাচ্চারা এমন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে তাদের এক্সট্রা সাপোর্ট দিতে ও সেগুলো যেন রুটিন ওয়ার্কের মধ্যে থাকতে পারে সেজন্য রুটিনে অতিরিক্ত ক্লাস যুক্ত করা হবে। কোথাও কোথাও সামষ্টিক মূল্যায়নের নামে প্যান্ডেল সাজিয়ে বাইরে থেকে জনপ্রতিনিধিদের অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করে মুল্যায়ন করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো নির্দেশনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়নি। এটি বন্ধে আমরা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে একটি নির্দেশনা দিতে অনুরোধ জানাবো। এভাবে করা হলে শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে না।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর এ কে স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী পুষ্পিতা দীক্ষিত বলে, আমাদের ক্লাসে ৭০ জনের জন্য ১০ জন করে সাতটি গ্রুপ তৈরি করে দিয়েছেন শিক্ষকরা। আমরা নিয়মিত নাটক, উপস্থাপনা, অ্যাসাইনমেন্ট, পোস্টার তৈরি-লাগানোসহ নানা ধরনের কাজ করি। তবে সবাই কাজ করে না। চার-পাঁচজন মিলে করে।
এই ছাত্রী বলে, গ্রুপ লিডারের সঙ্গে যাদের ভালো সম্পর্ক থাকে সে তাদের নিয়ে কাজ করতে চায়। কেউ স্কুলে কয়েকদিন অনুপস্থিত থাকলে তাকে দলের মধ্যে রাখতে চায় না। কেউ কোনো প্রজেক্টের কাজ বুঝতে না পারলেও স্যাররা ভালোভাবে বুঝিয়ে দিতে চান না। আমরা যা বুঝি সেভাবে করে আনতে বলেন। প্রকল্প জমা দিলেও কে কী ভূমিকা রেখেছে সেটিও জানতে চাওয়া হয় না বলে দলের মধ্যে কেউ কেউ পিছিয়ে পড়ছে।
এ স্কুলের সপ্তম শ্রেণির একজন শিক্ষক বলেন, ৪৫ মিনিটের ক্লাসে আলাদাভাবে কে কী শিখছে তা খুঁজে বের করা সম্ভব হয় না। গ্রুপ লিডারকে দায়িত্ব দিয়ে তার নেতৃত্বে সেই দলকে কাজ করতে বলা হয়। গ্রুপের কেউ কেউ সেসব কাজ বুঝতে পারে না। তাদের কোনো ভূমিকাও থাকে না। তারা শুধু ক্লাসে আসছে-যাচ্ছে। আমরা তাদের জোর করেও কিছু করাতে পারি না। সুযোগ পেলে মাঝে মধ্যে কাউকে আলাদা করে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়। এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের যেভাবে গ্রুপ করে ভাগ করার কথা সেভাবে করলে কেউ পিছিয়ে পড়ার কথা নয়। শিক্ষকরা যদি ভালো শিক্ষার্থীদের দিয়ে সব করাতে চান তবে অন্যরা পিছিয়ে পড়বে। ক্লাসে যখন শিক্ষার্থীরা কাজ করবে তখন শিক্ষকরা ঘুরে ঘুরে দেখবে সবাই তাতে অংশ নিচ্ছে কি না। কে কোথায় পার্টিসিপেট করছে বা করছে না সেটি দেখার দায়িত্ব শিক্ষকদের। এমনটা হলে শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে সেটি বুঝিয়ে কাজের সমবণ্টন করে দিতে হবে।
তিনি বলেন, বিষয়গুলো নিয়মিত মনিটরিং করতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর কাজ করছে। এটি এনসিটিবির পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা শিক্ষক, মাঠ পর্যায়ের সব কর্মকর্তাকে এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তারা নিয়মিত মনিটরিং করবেন। সেটি তাদের দায়িত্ব। কেউ যদি সেটি না করে তবে তার জবাবদিহি তাকেই করতে হবে।- জাগো নিউজ

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৫:০১ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৬ জুন ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]