বুধবার ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নির্বাচন ঘিরে অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা ক্রেতাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ৩১ জুলাই ২০২৩ | প্রিন্ট

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা করছেন তৈরি পোশাকের ক্রেতারা। তাদের অনেকের ধারণা, রাজনৈতিক সংঘাত হলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। এতে পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটতে পারে।রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আলোচনায় এ বিষয়ে উদ্বেগ জানাচ্ছেন তারা। সতর্কতা হিসেবে রপ্তানি আদেশ কমিয়ে দিয়েছে অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। কোনো কোনো ব্র্যান্ড পোশাকের দর কম দেওয়ারও চেষ্টা করছে। তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছে তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়ার মতো কোনো আশঙ্কা নেই। তবে আগামীতে কী হবে, সে বিষয়ে  নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ থেকে পোশাক নেয় এ রকম কয়েকটি বড় ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিরা সম্প্রতি বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে  আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য রাজনৈতিক সংঘাতময় পরিস্থিতিতে সময়মতো পণ্য হাতে পাবেন কিনা, সে বিষয়ে তারা উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। তবে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বলা হয়, সময়মতো পণ্য সরবরাহ করা হবে যে কোনো মূল্যে। এ ছাড়া পোশাক খাত হরতাল এবং অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকে। ফলে চুক্তিতে উল্লিখিত সময়ে রপ্তানি আদেশের পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিতে সমস্যা হবে না।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান  বলেন, নির্বাচন নিয়ে ব্র্যান্ড ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে উদ্বেগ আছে। তবে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা বলার চেষ্টা করেছেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়ার মতো কোনো আশঙ্কা নেই। ফারুক হাসান বলেন, বিভিন্ন ফোরামে কিংবা বিজিএমইএর সঙ্গে কূটনীতিকদের আলোচনায় তারা অনুরোধ জানাচ্ছেন, যাতে রাজনীতির সঙ্গে পোশাক খাতকে কোনোভাবেই জড়ানো না হয়।

রপ্তানি আদেশের চিত্র পাওয়া যায় কাঁচামাল ব্যবহারের হিসাবের ওপর। রপ্তানি আদেশ পাওয়ার পর একটি কারখানা কতটুকু কাপড় বা অন্য কাঁচামাল শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করতে পারবে, তার জন্য আমদানির অনুমতি সনদকে বলা হয় ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি)। বিজিএমইএ এ সনদ দিয়ে থাকে। সংগঠন থেকে সংগ্রহ করা হালনাগাদ তথ্য বলছে, গত জুন মাসে ইউডির সংখ্যা কমেছে ৩১১টি।  মে মাসে ইউডির সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩৪০টি। জুনে তা কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ২৯টিতে। গত বছরের জুনে ইউডি আরও বেশি ছিল। সে সময় ২ হাজার ১৬৯ ইউডি সনদ ইস্যু করা হয়। সংখ্যা কমে আসার পাশাপাশি ইউডির বিপরীতে পোশাকের পরিমাণও কমছে।

বিজিএমইএর সহসভাপতি এবং ক্ল্যাসিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল্লাহ আজিম সমকালকে বলেন, ইউডির বিপরীতে পোশাকের পিসের সংখ্যাও এখন কমছে। স্বাভাবিক সময়ে একেকটি ইউডির আওতায় গড়ে পাঁচ হাজার পিস পোশাক থাকত; এখন ৫০০ পিসের বেশি থাকছে না।

গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর  বলেন, ডলার সংকটের বাস্তবতায় রপ্তানি বাড়ানো যখন খুব প্রয়োজন, তখন রাজনৈতিক কারণে রপ্তানি আদেশ কমছে। অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, নির্বাচনের জন্য শান্তিপূর্ণ একটা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এ পরিস্থিতি হয়তো চলতে থাকবে, যার অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিণাম হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। রপ্তানি আদেশ কমলে বাণিজ্যিকভাবে যদি কারখানাগুলো টিকতে না পারে, তাহলে কাজ হারাবে সাধারণ শ্রমিক। পোশাক খাতের পশ্চাৎসংযোগ অন্যান্য শিল্প এবং ওইসব শিল্পের সঙ্গে জড়িতরাও বিপদে পড়বে। এর দায় রাজনৈতিক দলগুলোকেই নিতে হবে।

গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হয়। ওই নির্বাচনে তপশিল ঘোষণার পর দিন থেকে ভোটের আগের দিন পর্যন্ত ৪১ দিনে সারাদেশে সহিংসতায় ১২৩ মারা যান। আহত হন অনেকে। সর্বশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনে সহিংসতায় ১৭ জন মারা যান । আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ দেশে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে।

রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, ছোট ও মাঝারি আকারের কারখানার রপ্তানি আদেশ কমছে বেশি হারে। সুযোগ বুঝে কোনো কোনো ক্রেতা পোশাকের দর কম দিতে চাইছেন। এ পরিস্থিতিতে পড়া কারখানাগুলো শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে মনে করেন বিজিএমইএর আরব্রিটেশন কমিটির কো-চেয়ারম্যান জিয়া অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউর রহমান। সমকালকে তিনি বলেন, কয়েক মাস ধরেই কাজ কম। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে কখনও ‘না মুনাফা, না লোকসান,’ আবার কখনও টানা লোকসান দিয়ে টিকে আছে অনেক কারখানা।

বিজিএমইএর সঙ্গে আলোচনার বাইরে কারখানা পর্যায়েও নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে উৎপাদন এবং সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা কথা জানাচ্ছেন ব্র্যান্ড ক্রেতারা। শহীদুল্লাহ আজিম জানান, ব্র্যান্ড ক্রেতারা পরিস্থিতির ওপর চোখ রাখছেন। সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছেন তারা। রাজনৈতিক ছোট-বড় সব বিষয়ের খবর জানা তাদের। কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় সময়মতো হাতে পণ্য পাওয়া নিয়ে তারা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

পোশাক খাতের নিট ক্যাটাগরির পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বৈশ্বিক কারণে এমনিতেই তৈরি পোশাকের বাজার খারাপ যাচ্ছে। এর মধ্যেই নির্বাচন ঘিরে অস্থিতিশীলতার শঙ্কায় রপ্তানি আদেশ আরও কিছুটা কমেছে। তবে এখনও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে যায়নি। ক্রেতারা পরিস্থিতির খোঁজখবর নিচ্ছেন।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ৩১ জুলাই ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]