দয়াল কুমার বড়ুয়া, কলামিস্ট ও জাতীয় পার্টি নেতা, সভাপতি, চবি অ্যালামনাই বসুন্ধরা, সংসদ সদস্য প্রার্থী ঢাকা-১৮ আসন | শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট
বৃহস্পতিবার রাতে জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছিল রাজধানীর সিংহভাগ এলাকা। বর্ষা হলে রাজধানীতে দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। দিনের পর দিন জলাবদ্ধ হয়ে থাকাও নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষা মৌসুমে রাজধানীর জলাবদ্ধতা নাগরিক জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। কেড়ে নিচ্ছে রাস্তাঘাটের আয়ু। জলাবদ্ধতার কারণে দেখা দিচ্ছে যানজট। জলাবদ্ধতা কমাতে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ একের পর এক পরিকল্পনা নিলেও তাতে তেমন কোনো লাভ হচ্ছে না।
রাজধানীর জলাবদ্ধতা কমাতে নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, সম্প্রসারণ, খাল সংস্কার, নর্দমা ও বক্স কালভার্ট পরিষ্কারের কাজে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা সত্ত্বেও এই বিপুল অর্থ ব্যয় জলাবদ্ধতা হ্রাসে কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার রাতে টানা বর্ষণে রাজধানীর অনেক এলাকা জলমগ্ন হয়। জলাবদ্ধতার কারণে যানবাহন চলাচলে সৃষ্টি হয় বিঘ্ন এবং এর ফলে গভীর রাত পর্যন্ত ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়।
রাজধানীর পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত হতো বেশ কিছু প্রাকৃতিক খাল। এসব খালের সিংহভাগই বেদখল এবং ভরাট হয়ে গেছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন খাল এমনকি নদীও বেদখল হয়ে যায়। যারা জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত হন, সরকারের ভূমি দফতরের অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে তা আত্মসাতের কৃতিত্ব দেখাচ্ছে একশ্রেণির লুটেরা। ফলে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয় রাজধানীতে। অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় নগরজীবনে। নাগরিকদের ভোগান্তির সৃষ্টি হয়।
প্রতিবছর বর্ষায় রাজধানী ঢাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বর্ষায় কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় রাজধানী ঢাকা। এর জন্য ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় ঢাকা ওয়াসা ও দুই সিটি করপোরেশনকে। গত বৃহস্পতিবার ভারি বৃষ্টিতে রাজধানী থইথই। নগরবাসী আবার জলাবদ্ধতার অভিজ্ঞতা লাভ করল। বেশির ভাগ এলাকার সড়ক ডুবে গিয়েছিল, চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে মানুষকে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তা তলিয়ে যায়। কোথাও কোথাও বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।
এতে ভোগান্তিতে পড়ে ঘরমুখী লোকজন। নীলক্ষেত, কাটাবন, হাতিরপুল, ধানমণ্ডির সাতমসজিদ সড়কে এলাকার কোথাও কোথাও কোমর পানি জমে যায়। রাজধানীর উত্তরখান ও দক্ষিণখাতে মানুষেল হাবুডুবু খাওয়ার অবস্থা। প্রবল বৃষ্টিতে জমা পানিতে রাজধানীর মিরপুরে বিদ্যুত্স্পর্শে একই পরিবারের তিনজনসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। রাত পেরিয়ে সকাল হলেও অনেক এলাকা থেকে পানি নামেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকা শহরের বর্তমান অবকাঠামোতে প্রতিদিন মাত্র ৪০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি নিষ্কাশন করা যায়। ঢাকায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পর জলাবদ্ধতার ঘটনা রাজধানীতে এটাই প্রথম নয়। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। বাস্তবতা হলো, শেষ পর্যন্ত জলাবদ্ধতার দায় ওয়াসা বা সিটি করপোরেশন—কোনো সংস্থাই নেয় না।
প্রতিবছর সিটি করপোরেশন, ওয়াসাসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান উন্নয়নের নামে রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ি করে। কর্তারা বলেন, আগামী বছর থেকে জলাবদ্ধতা আর হবে না। প্রতিশ্রুতিই সার। জলাবদ্ধতা রাজধানীবাসীর নিয়তি। নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতেই হয়।
ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতার জন্য প্রধানত দায়ী করা হয় অপর্যাপ্ত নিষ্কাশনব্যবস্থাকে। সংস্কারের অভাবে ড্রেনগুলো দিয়ে পানি নামতে পারে না। খালগুলো ভরাট ও দখল হয়ে গেছে। আগের মতো জলাভূমি নেই। কিছু এলাকায় খাল ভরাট করে বক্স কালভার্ট বানানো হয়েছে। এখন সেগুলো ময়লায় ঠাসা। বক্স কালভার্ট দিয়েও পানি নামতে পারছে না। এমন আরো অনেক কারণে জলাবদ্ধতা যেন নিয়তি হয়ে উঠেছে।
এটি সবারই জানা যে রাজধানীর ৪৬টির মধ্যে মাত্র ২৬টি খাল কোনো রকমে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর অবস্থাও খুব ভালো নয়। দখল, দূষণ ও ভরাট হয়ে সেগুলোও এখন মৃতপ্রায়। ফলে প্রতিবছর বর্ষায় নগরীর জলাবদ্ধতা প্রায় স্থায়ী রূপ নেয়। সামান্য বৃষ্টিতেও রাজধানী প্রায় অচল হয়ে পড়ে।
নগরীর জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের অবহেলা ও অপরিকল্পনার ফসল। এক দিনে এ সমস্যার সমাধান হবে না। এ জন্য আশু ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। উন্নয়নকাজগুলোর সমন্বয় করতে হবে এবং জবাবদিহি বাড়াতে হবে। সড়ক নষ্ট করে অনির্দিষ্টকাল ধরে কোনো উন্নয়নকাজ চলতে পারে না। খালগুলো দ্রুত দখলমুক্ত ও নাব্য করে তুলতে হবে। ড্রেনগুলো নিয়মিত সংস্কার ও পরিষ্কার করতে হবে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলো খননের মাধ্যমে নাব্য রাখতে হবে। আমরা আশা করি, সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেবে।
আমার মতে, রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার এবং দুই ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। বেদখলকৃত খালগুলো উদ্ধারের উদ্যোগ নিতে হবে। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ ঘটিয়ে দ্রুত পানি নিষ্কাশন নিশ্চিত করতে হবে। এ কাজে জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাও জরুরি।
Posted ৪:০৯ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin