শুক্রবার ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেহাল সড়কে কাহিল নাগরিক

শামিম সরকার:   |   বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩ | প্রিন্ট

বেহাল সড়কে কাহিল নাগরিক

দক্ষিনখান বাজার থেকে মাজার রোড,

নিম্নচাপের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতেই উত্তরখান ও দক্ষিনখানের লাখো মানুষের ভোগান্তি চরমে। অলিগলিতে জমে গেছে পানি। কাদা আর ময়লায় রাস্তায় হাটা দুস্কর। উত্তরখান মাজার থেকে দক্ষিনখান বাজার পর্যন্ত রাস্তাটি এলাকার ব্যস্ততম সড়ক। ভাঙাচোরা এই বেহাল সড়কে কাহিল নাগরিক।এলাকার মানুষের পরিবহনের একমাত্র ভরসা অটো রিক্সার সংকট দেখা দিয়েছে। চাকরিজীবীরা বাসা থেকে বের হয়েও অফিসে যেতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এতে অনেককেই স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

জানা যায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উত্তরখান ও দক্ষিনখানের নতুন ওয়ার্ডগুলোতে দীর্ঘদিন যাবৎ কোন উন্নয়ন না হওয়ায় সামান বৃস্টিতেই পানি জমে রাস্তাগুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে পরে। এই নতুন ওয়ার্ডগুলোর রাস্তা দিয়ে চলতে গেলে সাধারণ মানুষ জনপ্রতিনিধিদের প্রতি মনের ক্ষোভ প্রকাশ করে নানা রকমের কটুক্তি করে। মনে হয় এগুলো সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা নয়। সড়কগুলো যেন দুর্ঘটনারফাঁদ, মানুষ মরার গ্যারাকল। উত্তরখান ও দক্ষিনখান এলাকার ভাঙাচোরা সড়ক মানুষের চরম কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অসময়ের এই বৃষ্টি যেন মরার উপর খারার ঘাঁ।
উত্তরখান ও দক্ষিনখান ঢাকা ১৮ আসনের অন্তর্ভুক্ত হলেও উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি এখানে। অথচ আওয়ামী লীগের সাবেক বর্ষীয়ান নেতা বাংলাদেশের প্রথম মহিলা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন দীর্ঘদিন যাবৎ এ এলাকার এমপি ছিলেন। তিনি এলাকায় কোন দৃশ্যমান উন্নয়ন করেননি। বর্তমানে এ আসনের এমপি আলহাজ হাবিব হাসানের হাত ধরে এলাকার উন্নয়নের ছেঁয়া লাগবে বলে জনগন তার দিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু দীর্ঘ দিন পার হলেও কোন আশা পূর্ণ হয়নি জনগনের।
নতুন এই ওয়ার্ড গুলোর রাস্তাঘাট খানাখন্দকে ভরা। অসুস্থ রোগীকে এ রাস্তা দিয়ে নিয়ে গেলে রোগী মৃত্যু পথযাত্রী হয়ে যায়। গর্ভবতী মায়েরা এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে সীমাহীন বিড়ম্বনার শিকার হয়। এরা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যায়। সামান্য বৃষ্টিতে এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। ড্রেনেজ ব্যবস্থার কোনো উন্নয়ন না করার পানি দীর্ঘক্ষন জমে থাকে। এই নতুন ওয়ার্ডগুলোর অধিকাংশ রাস্তা মানুষ ও যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী।
সরেজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ রাস্তাই পানি জমে আছে, কোন কোন জায়গায় কার্পেটিং উঠে গিয়েছে, কোথাও কাঁচা রাস্তায় ইটের সলিং ভেঙ্গে বিরাট বিরাট গর্তে পরিনত হয়েছে, কয়েকটি রাস্তায় ড্রেনের মুখে ব্যবহৃত ডালাই করা কাভার ভেঙ্গে বড় গর্তের সৃস্টি হয়েছে। গর্তে পরে রিক্সা চালক ও যাত্রীরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। এই সমস্যাগুলোর মধ্যেই প্রতিদিন পথ চলতে হচ্ছে উত্তরখান ও দক্ষিনখান এলাকার ৬টি ওয়ার্ডের সাধারন জনগনের। পুলিশ ফাঁড়ি থেকে জয়নাল মার্কেট। গনকবরস্থান থেকে চৈতি গার্মেন্টস এর সড়ক, জয়নাল মার্কেট থেকে পাকারমাথা, ফায়দাবাদ চৌ-রাস্তা থেকে পুলিশ ফাড়ি সড়ক, ট্রান্সমিটার থেকে আজমিরি রোড, দক্ষিণখানের হলান অটো স্ট্যান্ড থেকে উত্তরা টেম্পো স্ট্যান্ড, হলান অটো স্ট্যান্ড থেকে আশকোনা প্রাইমারি স্কুল, উচ্চারটেক মেডিকেল রোড, দক্ষিনখান থেকে কসাইবাড়ি রোড, পন্ডিত পাড়া থেকে শোনার খোলা সিটি কমপ্লেক্স রোড, দক্ষিনখান বাজার থেকে মাজার রোড, মাস্টারপাড়া থেকে মুন্ডা ঘাট রোড, মাস্টারপাড়া হতে শাহী মসজিদ, চামুরখান থেকে মাজার রোড, দোবাইদা থেকে সাইনবোর্ড, আটিপাড়া থেকে রাজাবাড়ী ও নদীবন্দর রোড, কাচকুরা বাজার থেকে বাওথার পর্যন্ত সড়কগুলোর একেবারেই বেহাল দশা। এছাড়া আভ্যন্তরিন চলাচলের রাস্তাগুলোর আরোও খারাপ অবস্থা এই রাস্তা গুলোতে পায়ে হেটে চলাচলের অনপুযুগী।
এলাকার বসবাসরত একাধিক বাসিন্দা আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের এই ইউনিয়ন দুটি সিটি কর্পোরেশনের আওতায় নেওয়ায় আমাদের নিয়মিত ট্যাক্স বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা সেগুলো পরিশোধ করছি কিন্তু আমাদের কোনো সুযোগ-সুবিধা আমরা পাচ্ছিনা।
ফায়দাবাদ এলাকায় বসবাসকারী হুমায়ুন কবির দৈনিক আজকের অগ্রবাণীকে জানান, আমার প্রতিদিন ঢাকায় যেতে হয় এ এলাকার সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় কোমর পানি হওয়ায় আমাদের চলাচলে অত্যাধিক কষ্ট হয়। এলাকা রাস্তাঘাটগুলো উন্নয়নের দিকে সরকারের নজর দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
গনকবরস্থান রোডে বসবাসকারী একাধিক মুরুব্বী দৈনিক আজকের অগ্রবাণীকে বলেন, বাবা কত নেতা আসে যায় আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না। ভোটের আগে কত কথা বলে, কত স্বপ্ন আশা ও ভালবাসার কথা বলে, পরে কেউ কোনো কোন খবর রাখেনা। রাস্তার উন্নয়নের অভিযোগ করে কোন লাভ নাই ক্ষমতা তাদের হাতে, ইচ্ছাও তাদের হাতে আমরা সারাদিন চিৎকার করলেও কোন উপকার হবে না। নেতাদের প্রতিশ্রুতি জাদুঘরে বন্দি থাকে আমাদের রাস্তার উন্নয়ন হয় না।
এলাকাগুলোতে বাস চলাচলের কোন উপযোগী কোন রাস্তা না থাকায় বিশাল জনগোষ্ঠীর চলাচলের একমাত্র ভরসা অটোরিকশা। দৈনিক কয়েক হাজার অটোরিকশা এ সব রাস্তা দিয়ে চলাচল করে এবং রাস্তাগুলো ভাঙ্গাচুরা থাকায় নিয়মিত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
দায়িত্ব নিয়ে এলাকার অবকাঠামোগত কোন উন্নয়ন করতে পারেননি এলাকার কাউন্সিলররা। অকপটে স্বীকার করে বলেন এলাকার উন্নয়নে তেমন কোনো বাজেট পাননি। নির্বাচনের সময় জনগনকে অনেক কিছু করার আশ্বাস দিয়েছি। মানুষের কস্ট দেখলে অনেক খারাপ লাগে । তবে বর্তমানে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এলাকার উন্নয়নের কাজ দেওয়া হয়েছে। পয়ঃনিষ্কাশন, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কাজ শেষ হলে এলাকার বাসিন্দারা সুফল পাবে বলে জানালেন ওয়ার্ড কাউন্সিলররা।

 

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১০:২০ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]