নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ১১ অক্টোবর ২০২৩ | প্রিন্ট
অপপ্রচার ও গুজব রোধে সব সময় সতর্কচোখে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরির উদ্দেশ্যে চক্রান্তকারীদের গুজব তৎপরতা আরো বাড়তে পারে। এটি ঠেকাতে ও নস্যাৎ করতে দলটির বিশেষ উদ্যোগ চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।
নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, দেশ, দল ও সরকারের বিরুদ্ধে গুজবের ডালপালা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ব্যাপ্তি কখনো কখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাপিয়ে স্থান পায় গণমাধ্যমেও। এগুলো কোনোটি দেশের ভিতর থেকে, আবার কোনোটি দেশের বাইরে থেকে ছড়ানো হয়। মার্কিন ভিসানীতি নিয়েও গুজব ছড়ানো হচ্ছে। বেশিরভাগ গুজবই তৈরি হচ্ছে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে এবং উস্কানিমূলক। সরকারকে বিব্রত করা, দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করা এবং প্রশাসনের মনোবল ভেঙে দেওয়া তাদের উদ্দেশ্য। দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতেই দেশ ও বিদেশ থেকে পরিকল্পিভাবে এমন গুজব ছড়াচ্ছে বিএনপি-জামায়াতসহ তাদের মিত্রবাহিনী এবং বিদেশে থাকা তাদের পেইড এজেন্টরা।
যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, এসব গুজব ও অপপ্রচারের জবাব দিতে সরকারের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রয়েছে। নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ।
এ নিয়ে খোদ তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিদেশে বসে বিএনপির পেইড এজেন্টরা শুধু সরকারের বিরুদ্ধে নয়, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে নানা ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে। তবে আমরা বসে নেই। গুজব নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গুজবের জবাব দিতে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফর্মেশন (সিআরআই) ও আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রচারের পাশাপাশি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে এক লাখ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট কর্মী তৈরি করার লক্ষ্য রয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির এ সেলের মাধ্যমে কেন্দ্র এবং তৃণমূল নেতাদের কাছে সরকারবিরোধী অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সঠিক জবাব এবং সরকারের উন্নয়ন চিত্রের আদান-প্রদান করা হবে। যাতে যেকোনো অপপ্রচার বা গুজবের জবাব তৃণমূল নেতারাই দিতে পারেন এবং জনগণ যেন অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়।
সূত্র আরো জানায়, গুজব ঠেকাতে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট তৈরিতে চলমান এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আগামী ৫ বছর পর্যন্ত চলবে।
এরই মধ্যে অনলাইন ক্যাম্পেইনের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য ৭০ জন প্রশিক্ষকদের নিয়ে দুই দিনব্যাপী কর্মশালা দ্য ড্রিল সম্পন্ন হয়েছে। এরা সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা ছাত্রলীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবেন। এই প্রশিক্ষক্ষণের মধ্য দিয়ে ১০ হাজার অ্যাক্টিভিস্ট তৈরি করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কবির বিন আনোয়ার ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, চলমান প্রশিক্ষণ এখানেই শেষ নয়, সবে শুরু। আগামী ৫ বছর পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলমান থাকবে। তবে আসন্ন নির্বাচনের আগে জেলা এবং উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত প্রশিক্ষণ চলবে। নির্বাচনের পর এটি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত চলে যাবে।
আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, গুজব প্রতিরোধে আমাদের জেলা পর্যায়ে ১০ হাজার মাস্টার্স ট্রেইনার থাকবে। এসব প্রশিক্ষিত ট্রেইনাররা উপজেলা পর্যায়ে গিয়েও কাজ করবে। আমাদের লক্ষ্য ১ লাখ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট তৈরি করা। বিষয়টি আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটি এবং সিআইআর এর সমন্বয়ে হবে।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি-জামায়াতসহ তাদের মিত্র বাহিনীর অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সজাগ করার জন্য এই অনলাইন টিম ২৪ ঘণ্টা কাজ করবে।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, গুজব, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও ক্ষতিকর কনটেন্ট ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে লক্ষ্যে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ৯০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে। বাংলাদেশে তারা ফ্যাক্টওয়াচ, এএফপি ও বুমের সঙ্গে কাজ করছে। এছাড়া নিয়মিত সুশীল সমাজ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কাজ করছে। এছাড়া এসব ঘটনা ঠেকাতে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তিকে কাজে লাগাবে। যা দ্রুততার সঙ্গে আসন্ন হুমকি অনুমান করতে ও পদক্ষেপ নিতে সক্ষম।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, নির্বাচনকে ঘিরে ছড়ানো যেসব গুজব মানুষের ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, সে ধরনের গুজব তারা সরিয়ে ফেলবে। পাশাপাশি যেসব অ্যাকাউন্ট থেকে গুজব ছড়ানো হয়, সেই ধরনের অ্যাকাউন্ট দৈনিক ডিলিট করা হয়।
আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল এমপি ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে গুজবের ডালপালা ছড়াচ্ছে একটি বিশেষ মহল। এরা আগেও বিশেষ করে পদ্মাসেতুতে মানুষের মাথা লাগবে, ভিত্তিহীন এমন গুজব রটিয়ে সারাদেশে ছেলে ধরা সন্দেহে অন্তত ২২ জনকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করেছে। এরপর এ নিয়ে দেশজুড়ে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, আমরা এও দেখেছি ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নামে কোমলমতি শিশুদের ব্যবহার করে রাস্তায় নামানো হয়েছে। এরপর গুজব ছড়িয়ে অরাজগতার পরিস্থিতি সৃষ্টি করে একটি বিশেষ মহল রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করেছে। আর বর্তমানে পুরনো এসব গুজবের সঙ্গে নতুন গুজবের ডালপালা যোগ হয়েছ মার্কিন ভিসানীতি এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দৌড়ঝাঁপ নিয়ে নানা কল্পকাহিনী।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে যারা রাষ্ট্র ও আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গুজব রটাবে, তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। আমাদের সাইবার ব্রিগেড টিম যখনই অপপ্রচার দেখবে, তখনই রুখে দাঁড়াবে। মিথ্যার বিরুদ্ধে অতীতের মতো সঠিক ও সত্যতা তুলে ধরবে। এটি প্রতিনিয়ত করা হবে।
ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মাদ আলী আরাফাত ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, আমি মনে করি এই কর্মশালার মাধ্যমে আমাদের অনলাইন সাইবার গ্রুপ বিএনপি-জামায়াত, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির গুজব মোকাবিলায় সাইবার যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে। আরেকটি বিষয় হলো গুজব সত্য তথ্য থেকে ৬ গুণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই আমাদের দশগুণ বেশি পরিশ্রম করতে হবে গুজব মোকাবিলায়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, মিথ্যা, অপপ্রচার, গুজবের রাজনীতি বিএনপির শক্তি। তারা গুজব ছড়িয়ে, মিথ্যাচার করে, অপপ্রচার করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়। তারা দুর্নীতির জন্য মরিয়া হয়ে আছে।
Posted ৪:২২ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১১ অক্টোবর ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin