নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৩ | প্রিন্ট
‘আমার ছেলেরা এসে আমাকে নিয়ে যাবে। আমাকে এখানে বসে থাকতে বলেছে, তারা আসবে…’- এই কথাগুলো একজন বৃদ্ধ বাবার। ছেলেদের আসার অপেক্ষায় রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মহাসড়কের পাশে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন সত্তরোর্ধ্ব এই বৃদ্ধ। কিন্তু তার সন্তানরা আর আসে না।
গত ৬ অক্টোবর ভোর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বড়গোবিন্দপুর স্টেশন এলাকায় বসে আছেন সাদা চুল-দাঁড়ির এই বৃদ্ধ। পাশে একটি ভাঙ্গা হুইল চেয়ার। বেশ কয়েকদিন অযত্ন-অবহেলায় পাগল বেশে রূপ নিয়েছে তার। প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হওয়ায় বাম হাত ও পা তেমন নড়াচড়া করতে না পেরে একই স্থানে মল-মূত্র ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি।
দেখতে দেখতে ৮ দিন কেটে গেলেও খোঁজ নিতে আসেননি তার সন্তানরা। স্থানীয়দের মধ্যে অধিকাংশরাই এক নজর দেখে বাড়তি ঝামেলা মনে করে এড়িয়ে যান। আবার কারো মন কাঁদলেও আইনি ঝামেলার ভয়ে দূরে থাকেন।
তবে সবার থেকে এক ব্যতিক্রম নারী দেবীদ্বার উপজেলার বরকামতা ইউনিয়নের বাসিন্দা রাইহানা ইসলাম রুনা। তিনি বলেন, গত ২৯ সেপ্টেম্বর আমার বাবা মারা গেছেন।
গত ৮ অক্টোবর সকালে আমি মহাসড়কের গোবিন্দপুর স্টেশনে নেমে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য অটোরিকশায় উঠবো তখন দেখি এই বৃদ্ধ লোকটিকে ঘিরে রেখেছেন অনেক মানুষ। ওনাকে দেখার পর আমার বাবার কথা মনে পড়ে আবেগ ধরে রাখতে পারিনি। তার সঙ্গে কথা বলার পর জানতে পারি গত ৫ অক্টোবর রাতে ওনার ছেলেরা নাকি হাসপাতাল থেকে বাড়ি নেয়ার কথা বলে হুইল চেয়ারে বসিয়ে এখানে ফেলে যান। পুলিশ ও সাংবাদিকদের কাছে গিয়ে বিষয়টি জানাই।
শনিবার বিকেলে মহাসড়কের গোবিন্দপুর স্টেশন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের ঠিক পাশেই বসে আছেন এই বৃদ্ধ। হুইল চেয়ার থেকে পড়ে চোট পেয়েছেন কপালের পাশে ও পায়ে। মল-মূত্র ত্যাগ করে নিজেই ধুলোতে চাপা দিলেও দুর্গন্ধে একাকার। অসুস্থতার পাশাপাশি অনাহারে মুখ দিয়ে ঠিকমতো কথা আসছে না তার।
অস্পষ্ট ভাষায় তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন অসুস্থ, আমাকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাতে গাড়ি থেকে নামিয়ে এখানে রেখে যায় আমার ছেলে হারুনসহ আরো দুজন।
ঐ বৃদ্ধ নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার ছয়ানী ইউনিয়নের ভবানী জীবনপুরের নয়নপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার তিন ছেলে এক মেয়ের রয়েছে । বড় ছেলে হারুন, মেজো ছেলে মঈন ও ছোট ছেলে জসিম উদ্দিন। তারা সবাই চাকরি করেন।
এদিকে স্থানীয় লোকজন জানান, রাতের অন্ধকারে এই বৃদ্ধকে ফেলে রাখে গেছে যারা তাদের প্রতি ধিক্কার জানাই। দেশে আইন আছে। এমন ঘটনায় আইনের কোনো লোক এগিয়ে আসছে না। এই অসুস্থ লোকটি রাস্তার পাশে পড়ে থেকেই কী তার করুণ মৃত্যু হবে?
এ ব্যাপারে চান্দিনা থানার ওসি সাহাবুদ্দীন খাঁন বলেন, আমাকে কেউ এ ঘটনা অবহিত করেনি। এখন রাত সাড়ে ৯টা বাজে। তবুও ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি।
চান্দিনা ইউএনও তাপস শীল বলেন, আমি এখনই (রাত পৌনে ১০টা) গিয়ে বিস্তারিত জেনে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
Posted ১:৩৭ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin