শুক্রবার ১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট

নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন

আগামীকাল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন।

রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোটগ্রহণ চলবে। নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল ইসলাম মারা যাওয়ায় ঐ আসনের নির্বাচন স্থগিত করেছে ইসি। ফলে আগামীকাল ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯ আসনে ভোট গ্রহণ করা হবে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবশ্যই উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।

তিনি বলেন, সর্বাধিক সংখ্যক প্রার্থী এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। উৎসবমুখর ভোট হবে এটাই আশা। তিনি ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে এসে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানান।

যেকোনো মূল্যে এবারের নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে হবে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, এজন্য ইসির পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ভোটাররা যেন কেন্দ্রে এসে নির্ভয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন, সেজন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজনে এবং ভোটাররা যেন ভোটকেন্দ্রে অবাধে যাতায়াত করতে পারে, সেজন্য মাঠ পর্যায়ে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার-ভিডিপি, আর্মি, নেভী, কোস্টগার্ডসহ সবমিলিয়ে প্রায় ৮ লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনের দিন ভোট গ্রহণের কাজে ৮ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া ১ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী স্ট্যান্ডবাই থাকবে। ৩ হাজার ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারক মাঠে থাকছে। তারা যেকোনো অপরাধে তাৎক্ষণিক শাস্তি দিতে পারবেন।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শনিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।

সন্ধ্যা ৭টায় নির্বাচন কমিশন ভবন থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে তার ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। ভাষণে সিইসি জনগণকে সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়া এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রার্থীদের প্রতি আহ্বান জানাবেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে ভোটকেন্দ্র, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং ভবনের নিরাপত্তা জোরদার ও নজরদারি বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছে ইসি।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য স্থাপনায় মোট ৪২ হাজার ২৪টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, সম্পাদক বা অনুরূপ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষের সঙ্গে সভা করে বা যোগাযোগের মাধ্যমে অথবা দায়িত্ব দিয়ে ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা ও নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে।

এবার ভোটের সর্বশেষ আপডেট জানার জন্য ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি’ অ্যাপ চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ভোটের সর্বশেষ পরিস্থিতির সঠিক তথ্য সম্পর্কে জনগণ যেকোনো জায়গা থেকে সহজে জানতে পারবে। এছাড়াও ভোটাররা তার ভোটার নম্বর ও কেন্দ্রের নাম এবং অবস্থান জানতে পারবে। গোগল প্লে স্টোরে গিয়ে অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে।

এবার ভোটে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে ৬৬ জন দায়িত্ব পালন করছেন। এরমধ্যে দুইজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন জেলা প্রশাসক।

কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি সংসদীয় আসনে ১ হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইসিতে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে এই নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১ হাজার ৫৩৪ জন প্রার্থী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে আছেন ৪৩৬ জন।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী ২৬৬ জন, জাতীয় পার্টির ২৬৫, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ১৩৫ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ৬৬ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, জাতীয় পার্টির (জেপি) ১৩ জন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের ১০ জন প্রার্থী রয়েছেন। নির্বাচনে নারী প্রার্থী হিসেবে রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯০ জন। আর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অন্যান্য মিলে ৭৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

২৯৯ সংসদীয় আসনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ২৪টি। এসব কেন্দ্রেভোট কক্ষ ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২টি। সর্বশেষ প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৯ হাজার ৭৪১ ও নারী ভোটারের সংখ্যা ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৮ হাজার ৬৯৯। এছাড়া সারাদেশে এবার তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ৮৪৯ জন।

এবারই প্রথমবারের মতো ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হচ্ছে। শুধু দুর্গম অঞ্চলের ২ হাজার ৯৬৪টি কেন্দ্রে ব্যালট পাঠানো হবে ভোটের আগের দিন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন স্থানীয় ২০ হাজার ৭৭৩ জন পর্যবেক্ষক। এছাড়া প্রায় দুই শতাধিক বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকছেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।

বুধবার বিকেল পর্যন্ত ১৮৬ জন পর্যবেক্ষক-সাংবাদিককে অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন, যাদের মধ্যে ১২৭ জন পর্যবেক্ষক আর ৫৯ জন গণমাধ্যমকর্মী। আরো কিছু বিদেশি পর্যবেক্ষকের আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সব মিলিয়ে ২শ’র বেশি হবে।

নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা দেওয়ার জন্য গত ৩ জানুয়ারি থেকে সেনাবাহিনী ৬২টি জেলায় নিয়োজিত হয়েছে। উপকূলীয় দুটি জেলাসহ (ভোলা ও বরগুনা) সর্বমোট ১৯টি উপজেলায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। সমতলে সীমান্তবর্তী ৪৫টি উপজেলায় বিজিবি এককভাবে দায়িত্ব পালন করবে এবং সীমান্তবর্তী ৪৭টি উপজেলায় সেনাবাহিনী বিজিবির সঙ্গে এবং উপকূলীয় ৪টি উপজেলায় কোস্টগার্ডের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে যৌথভাবে দায়িত্ব পালন করবে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী হেলিকপ্টারের সহায়তায় দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের ভোটকেন্দ্রগুলোয় প্রয়োজনীয় হেলিকপ্টার সহায়তা প্রদান করবে।

এই নির্বাচনে ১ লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়েন করা হয়েছে।

গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে সারাদেশে ৪৮৭টি বেজ ক্যাম্পে ১ হাজার ১৫৫ প্লাটুন বিজিবি নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। সারাদেশে নাশকতা এড়াতে বিস্ফোরক দ্রব্যের ওপর বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত বিজিবি ডগ স্কোয়াড দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজ করছে। একইসঙ্গে মাঠে কাজ করছে বিজিবি’র বিশেষায়িত ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন টিম (র‌্যাব)। এছাড়া বিজিবির কুইক রেসপন্স ফোর্সও প্রস্তুত রয়েছে, যারা বিজিবির অত্যাধুনিক হেলিকপ্টারের মাধ্যমে দেশের যেকোনো প্রান্তে যেকোনো অনাকাঙিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সক্ষমতা রাখে।

নির্বাচনে নিরাপত্তা রক্ষায় ৫ লাখ ৫ হাজার ৭৮৮ জন সাধারণ আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারা গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু করেছে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবে।

এদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় মনিটরিং ও কো-অর্ডিনেশন সেল গঠন করেছে। নির্বাচনকালীন সহিংসতায় অগ্নিকাণ্ডসহ যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবিলায় এ মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২ লাখ ১৫ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ৪ লাখ ৭২ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১৫ থেকে ১৭ জনের নিরাপত্তা সদস্যের একটি দল মোতায়েন করা হবে।

নির্বাচন কমিশন জানায়, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে অস্ত্রধারী দু’জন পুলিশ, অস্ত্রধারী একজন আনসার, অস্ত্র বা লাঠিধারী একজন আনসার, ১০ জন আনসার, লাঠি হাতে একজন বা দু’জন গ্রাম পুলিশ সদস্যসহ ১৫ থেকে ১৬ জনের একটি দল সব সাধারণ ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা দেবে। তবে প্রতি গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের ক্ষেত্রে অস্ত্রসহ ৩ জন পুলিশসহ ১৬ থেকে ১৭ জনের দল থাকবে।

নির্বাচন উপলক্ষে ৫ জানুয়ারি মধ্যরাত ১২টা থেকে ৮ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত মোটর সাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে ইসির স্টিকার লাগানো মোটরসাইকেল এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।

এছাড়া নির্বাচন উপলক্ষে ভোটগ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিবসের পূর্ববর্তী মধ্যরাত অর্থাৎ ৬ জানুয়ারি রাত ১২টা থেকে ৭ জানুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত কতিপয় যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এসব যানবাহনের মধ্যে রয়েছে ট্যাক্সি ক্যাব, পিক আপ, মাইক্রোবাস ও ট্রাক।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৭:০৩ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৬ জানুয়ারি ২০২৪

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]