শুক্রবার ১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কোর কমিটির সভা, কঠোর অবস্থানে বিজিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট

বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সেদেশের জান্তা সেনাবাহিনীর তুমুল লড়াই চলছে। উখিয়ার পালংখালী এবং টেকনাফের হোয়াইক্যং, উলুবনিয়া, উনচিপ্রাং, হ্নীলা, কাঞ্জরপাড়া ও শাহপরীর দ্বীপে নাফ নদের ওপারে মিয়ানমারের ভেতর থেকে মুহুর্মুহু গুলির শব্দ আসছে। এতে সীমান্ত পেরিয়ে ফের বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় কঠোর সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

মিয়ানমারের রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সোমবার কক্সবাজারে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করা বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে কোর কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৈঠকে মিয়ানমারের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সীমান্তের এপারে ‘অনুকূল’ পরিবেশ থাকায় ওপাশ থেকে রোহিঙ্গারা যাতে এ দেশে ঢুকতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা বাংলাদেশের ওপর। নতুন আর কাউকে জায়গা দেওয়া বাংলাদেশের পক্ষে কষ্টসাধ্য– এই বার্তা রোহিঙ্গাদের দিতে হবে।

চলমান পরিস্থিতিতে সব বাহিনীর মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানে কোর কমিটির সভায় জোর দেওয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, সীমান্তরক্ষী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাজে লাগানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। সীমান্ত-সংলগ্ন এলাকায় জনপ্রতিনিধিদের কাছে কোনো তথ্য থাকলে তা দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে বলা হয়। এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে যাতে মাদকসহ সীমান্ত হয়ে কোনো চোরাচালান পণ্য দেশে না ঢোকে, সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকারও কথা বলা হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নকেও (এপিবিএন) সজাগ দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। ক্যাম্পে খুনাখুনি রোধে গোয়েন্দা তথ্য বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ সীমান্ত-সংলগ্ন রাখাইনের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকায় কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত এলাকার মানুষ মর্টারশেল এবং গোলাগুলির আওয়াজে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে ২৪টি মর্টারশেলের হামলার পাশাপাশি মিয়ানমারের বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সঙ্গে সেনাবাহিনীর ব্যাপক গোলাগুলি চলে। এ পরিস্থিতিতে সকালে ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্ত এলাকার ৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদরাসা।

বান্দরবান জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ ফরিদুল আলম হোসাইনী বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো একেবারেই সীমান্তঘেঁষা হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তুমব্রু সীমান্তের বাসিন্দারা বলছেন, সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘুমধুমের বাজার পাড়া, বাইশ ফাঁড়িসহ তুমব্রু রাইটে মর্টারশেল এবং ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।

মর্টারশেলের খোসা বাংলাদেশে
মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেলের বিস্ফোরিত অংশ গতকাল দুপুরে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রুর পশ্চিম কূল এলাকায় বসবাসকারী বাহাদুল্লাহর বাড়ির উঠানে এসে পড়েছে বলে জানান তার স্ত্রী খালেদা বেগম। তবে এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

তুমব্রু সীমান্তের কোনাপাড়ায় বসবাসকারী শাহাজান মিয়া বলেন, মিয়ানমারের ভেতরে সকাল থেকে গুলির বিকট শব্দে এপার কেঁপে উঠছে। এখনো ব্যাপক মর্টারশেলের শব্দ হচ্ছে। ২৪টি মর্টারশেলের শব্দ পেয়েছি। টেকনাফ সীমান্তে বাংলাদেশের নলবিল গ্রামে গোলাবারুদ ও মর্টারশেল পড়েছে।

৮ এপিবিএনের অতিরিক্ত ডিআইজি আমির জাফর বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সহিংসতার কারণে বাংলাদেশে নতুন কোনো রোহিঙ্গা যেন ক্যাম্পে ঢুকতে না পারে, সে জন্য চেকপোস্ট ও ক্যাম্পে কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে।

এদিকে, মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী গণমাধ্যম ইরাবতীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরাকান আর্মি রোববার রাখাইন রাজ্যের মিনবিয়া শহরের পালেতোয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ৩৮০ ব্যাটালিয়নের সদরদফতর দখলে নিয়েছে। রাখাইনের ম্রাউক ইউ, কিউকটা ও রাথেডং এলাকায় দু’পক্ষের লড়াই চলছে। আরাকান আর্মির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জান্তার আর আমাদের সঙ্গে লড়াই করার সামর্থ্য নেই। তারা এখন আরো বেশি গোলা নিক্ষেপ ও আকাশ থেকে বোমা হামলা চালাচ্ছে।

বিজিবি সতর্ক আছে: হাছান মাহমুদ
মিয়ানমারে সংঘাত চলার মধ্যে বাংলাদেশে মর্টারশেল ছিটকে আসার ঘটনায় নজর রাখার পাশাপাশি দেশটির সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমাদের সীমান্তরক্ষীরা সতর্ক আছে।

আবারও সংঘাতের ফলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অনুপ্রবেশের কোনো শঙ্কা করছেন কিনা– এমন প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, এখনো (এ রকম) কোনো কিছু দৃশ্যমান হয়নি।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৪

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]