নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪ | প্রিন্ট
বঙ্গোপসাগরের বুকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা)। সমুদ্রের ২৪টি ব্লক ইজারা দিতে রোববার দরপত্র প্রকাশ করা হয়। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ মাস এ দরপত্র জমা দেওয়া যাবে।
সাগরে খনিজ অনুসন্ধানের এ দরপত্রে অংশ নিতে আমন্ত্রণ পাবে বিদেশি ৫৫টি কোম্পানি। এর মধ্যে- যুক্তরাষ্ট্রের এক্সন মবিল ও শেভরন, যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম, তাল্লো, শেল ও নেপচুন এনার্জি, চীনের চায়না ন্যাশনাল অফশোর অয়েল, চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন, সিনোপ্যাক, ভারতের ওএনজিসি ও অয়েল ইন্ডিয়া, ফ্রান্সের টোটাল এনার্জিস, অস্ট্রেলিয়ার সান্তোস, রাশিয়ার গাজপ্রম ও লুকঅয়েল উল্লেখযোগ্য।
আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলোকে (আইওসি) আগ্রহী করতে ঈদুল ফিতরের পর রোড-শো আয়োজন করবে সরকার। দরপত্র মূল্যায়ন শেষে চলতি বছরই এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করছেন পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা।
জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরের অগভীর ও গভীর অংশকে মোট ২৬টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে অগভীর অংশে ব্লক ১১টি, আর গভীর সমুদ্রে ব্লক ১৫টি। সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে সর্বশেষ দরপত্র ডাকা হয়েছিল ২০১৬ সালে।
২০১২ সালে ভারত ও ২০১৪ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। ২০০৮ সালে ডাকা দরপত্রের মাধ্যমে ২০১০ সালে গভীর সমুদ্রে দুটি ব্লকের কাজ নেয় মার্কিন কম্পানি কনোকো ফিলিপস। তারা দ্বিমাত্রিক জরিপ চালালেও পরে গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি পূরণ না হওয়ায় কাজ ছেড়ে চলে যায়। একইভাবে চুক্তির পর চলে যায় অস্ট্রেলিয়ার সান্তোস ও দক্ষিণ কোরিয়ার পস্কো দাইয়ু। কোরীয় কোম্পানিটি কাজ করেছিল গভীর সমুদ্রের ১২ নম্বর ব্লকে।
বর্তমানে একমাত্র বিদেশি কোম্পানি হিসেবে অগভীর সমুদ্রের দুটি ব্লকে অনুসন্ধান চালাচ্ছে ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ওএনজিসি বিদেশ লিমিটেড (ওভিএল)। এ দুটি বাদ দিয়ে বাকি ২৪টি ব্লকে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
পিএসসি সংশোধন
আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ট করতে এরই মধ্যে উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি-২০২৩) সংশোধন করেছে সরকার। সংশোধিত এই মডেল চুক্তি অনুযায়ী, সাগরে গ্যাস পাওয়া গেলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামের ১০ শতাংশ ধরে সরকার প্রতি ঘনমিটার গ্যাস কিনবে। ২০১৯ সালের মডেল পিএসসিতে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের প্রাথমিকভাবে অনুমিত মূল্য ধরা হয় অগভীর ও গভীর সমুদ্রে যথাক্রমে ৫ ডলার ৬০ সেন্ট ও ৭ ডলার ২৫ সেন্ট। এবার হিসাব করা হবে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজারের আদর্শ ব্রেন্টের দামের সারা মাসের গড় মূল্যের ওপর ১০ শতাংশ ধরে।
নতুন মডেল পিএসসি চুক্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের হিস্যা গভীর সমুদ্রে ৩৫ থেকে ৬০ শতাংশ এবং অগভীর সমুদ্রে ৪০ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত ওঠানামা করবে। তবে ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ের দুই বছরের মধ্যে কূপ খনন করে গ্যাস না পেলে বা বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য না হলে শর্ত সাপেক্ষে যথাক্রমে ১ ও ২ শতাংশ হিস্যা বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের গভীর সমুদ্রের ব্লকগুলোতে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহ দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দুই বহুজাতিক কোম্পানি এক্সন মবিল ও শেভরন। সম্প্রতি এক্সন মবিলের একটি প্রতিনিধি দল তাদের প্রস্তাব নিয়ে ঢাকায় এসে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও জ্বালানিস চিব মো. নূরুল আলমের সঙ্গে বৈঠক করে গেছে।
বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে গত বছরের মার্চে প্রথম আগ্রহ প্রকাশ করে এক্সন মবিল। সে সময় তারা গভীর সমুদ্রের ১৫টি ব্লক ইজারা চেয়েছিল। গত ১৬ জুলাই আরেকটি চিঠি দেয় এই মার্কিন কোম্পানি। সেই চিঠিতে গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানে ২৫ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
Posted ৭:৪৯ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪
ajkerograbani.com | Salah Uddin