বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২ কোটি টাকা চাঁদা দাবি, গাজীপুরে সেনা কল্যাণ সংস্থার কাজ বন্ধ

গাজীপুর প্রতিনিধি:   |   মঙ্গলবার, ১২ মার্চ ২০২৪ | প্রিন্ট

২ কোটি টাকা চাঁদা দাবি, গাজীপুরে সেনা কল্যাণ সংস্থার কাজ বন্ধ

গাজীপুরের কালীগঞ্জে প্রস্তাবিত পূর্বাচল প্রকল্পের রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ বাস্তবায়নকারী সেনা কল্যাণ সংস্থার নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নিকট ২ কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাঁদা না পেয়ে সন্ত্রাসীরা ওই প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় ভাঙচুর ও ২০/৩০ হাজার ইট লুট করে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশ মামলা নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগকারী জুহুরুল ইসলাম বলেন, রাজউক অনুমোদিত পূর্বাচল প্রকল্পের নতুন শহর প্রকল্পে বাংলাদেশ সেনা কল্যাণ সংস্থা অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও সারফেস ড্রেন নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে। এ কাজে সহায়তা করছে মাস্টার বিল্লার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি পূর্বাচলের ১০২ নং সড়কের ১৫ নং প্লট এলাকায় আভ্যন্তরীণ রাস্তা ও সারফেস ড্রেন নির্মাণ কাজ করছে। সম্প্রতি স্থানীয় অর্ণব ও সেলিম মেম্বারের নেতৃত্বে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মাস্টার বিল্ডার্সের কর্মকর্তার নিকট দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে ওখানকার কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি প্রদান করে। তারপরও প্রতিষ্ঠানটি চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত দুইটার দিকে ১০-১৫ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল নিয়ে অর্ণব ও সেলিম মেম্বারের নেতৃত্বে সেখানে হানা দেয়। তারা অফিসের দরজা-জানালার গ্লাস, চেয়ার-টেবিল, ফ্যান এসব ভাঙচুর করে এবং নির্মাণ কাজের জন্য রক্ষিত প্রায় ২০-৩০ হাজার ইট লুট করে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ থানায় ঘটনার পরপরই ওই প্রকল্পের লজিস্টিক এক্সিকিউটিভ অফিসার জহুরুল হক বাদী হয়ে উল্লেখিত দুজনসহ ১০-১৫ জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু ঘটনার পর প্রায় ১৪ দিন অতিক্রান্ত হলেও পুলিশ অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ (এফআইআর ) করেনি। ফলে ভীত সন্ত্রস্ত ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন কাজ বন্ধ করে এখন এলাকা ছাড়া।

তিনি আরো বলেন, এ ঘটনার পরপরই আমাদের প্রকল্প কর্মকর্তা জহুরুল হক বাদী হয়ে গাজীপুরের কালিগঞ্জ থানায় অর্ণব ও সেলিম মেম্বরসহ ১০-১৫ জনের নামে লিখিত এজাহার দায়ের করেন। কিন্তু কালিগঞ্জ থানা পুলিশ মামলাটি এখনো এফআইআর করেনি।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, থানার ওসি অর্ণবকে এজাহার থেকে বাদ দিয়ে এজাহার দিতে বলেন। অর্ণব এ মামলার প্রধান আসামী। তার নামে থানায় চাঁদাবাজীসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে বাদ দিয়ে মামলা করার কোন মানে নেই। সেই সবকিছুর হোতা। অর্ণবের নাম বাদ না দেওয়ায় পুলিশ মামলা নেয়নি। তারা কোন আসামীও ধরেনি। ঘটনার পর থেকে ভয়ে আমাদের লোকজন সেখানে কোন কাজ করতে পারছে না। আবার কখন কি ঘটনায় ঘটে এ নিয়ে তারা আতংকিত।

এ বিষয়ে মাস্টার বিল্ডার্সের সহকারী ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ বলেন, স্থানীয় সন্ত্রাসী অর্ণব ও সেলিম মেম্বারসহ ১০/১৫জন সন্ত্রাসী গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের ওখানে চাঁদা দাবি করে আসছিল। তারা আমাদের নিকট ২ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে, অন্যথায় কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি প্রদান করে। কিন্তু আমরা দাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তারা নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছিল। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত দুইটার সময় তারা দা, ছুরি, লাঠি সোটা ও দেশি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কয়েকটি ট্রাক নিয়ে আমাদের প্রকল্প কার্যালয়ে হামলা করে। তারা সেখানে থাকা লোকজনকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে একটি কক্ষে আটকে রাখে। তাদের মোবাইল কেড়ে নেয় এবং আমাদের প্রকল্প কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। তারা দরজা-জানালার গ্লাস, চেয়ার, টেবিল, ফ্যান ইত্যাদি ভাঙচুর করে। এতে আমাদের প্রায় এক লক্ষ টাকার ক্রয় ক্ষতি হয়েছে। পরে তারা নির্মাণ কাজের জন্য রক্ষিত প্রায় ২০-৩০ হাজার ইট (মূল্য অনুমান ৩ লাখ টাকা) ট্রাকে ভর্তি করে লুট করে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিলেও মামলা রেকর্ড না করায় আজ (১২ মার্চ, মঙ্গলবার) আমরা গাজীপুর পুলিশ সুপারের সাথে দেখা করেছি। তাকে সবকিছু জানিয়েছি। তিনি আমাদের আইনী সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত অর্ণব সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে, তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। তার দাবী অভিযোগটি মিথ্যা ও সাজানো। অর্ণব দাবী করেন, থানা পুলিশ তদন্ত করে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন সত্যতা পায়নি। পুলিশের কে বলেছে, তদন্ত করে সত্যতা পায়নি, জানতে চাইলে তিনি নাম বলতে রাজী হননি।

অভিযুক্ত সেলিম মেম্বার বলেন, আমাদের সুনাম নষ্ট করার জন্য এটি আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ষড়যন্ত্র। আমরা ঘটনার বিষয়ে কিছু জানি না।

এ বিষয়ে জানার জন্য কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহতাব উদ্দিন বলেন, আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, আমি কারো নাম দিতে কাউকে বলিনি।

ঘটনার বিষয়ে গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম বলেন, অভিযোগকারী পক্ষের লোকজন আমার সাথে দেখা করেছেন। আমি তাদের সব রকম আইনী সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছি। দেশটা মগের মুল্লুক নয়। তাদের কাজ শুরু করতে বলেছি। প্রয়োজেনে সেখানে পুলিশ পাহাড়া দেয়া হবে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৫:০১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১২ মার্চ ২০২৪

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]