বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফুলেশ্বরীর পানি বঞ্চিত তিন ইউনিয়ন, বিবর্ণ বোরো ক্ষেত

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪ | প্রিন্ট

ফুলেশ্বরীর পানি বঞ্চিত তিন ইউনিয়ন, বিবর্ণ বোরো ক্ষেত

কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ১ হাজার ২৮৪ হেক্টর জমির বোরো ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়েছে। উজানের ড্যাম অতিরিক্ত পানি ধরে রাখায় ভাটি অঞ্চলের যথাক্রমে পোকখালী, চৌফলদণ্ডি ও জালালাবাদ ইউনিয়নের ১ হাজার ২৮৪ হেক্টর জমির শুষ্ক মৌসুমে বোরো আবাদ নিশ্চিত করতে ফুলেশ্বরী নদীর ওপর নির্মাণ করা হয় রাবার ড্যাম। উজান থেকে নেমে আসা মিঠা পানি ধরে রেখে চাষাবাদ নির্বিঘ্ন করতেই এই ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছিল। একই নদীর উজানে তথা ঈদগাঁও পয়েন্টে আরো একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা জানান, কিন্তু ঈদগাঁও পয়েন্টে নির্মিত রাবার ড্যামের রাবার ফুলিয়ে উজান থেকে নেমে আসা পানি ধরে রাখায় ভাটির দিকের তিন ইউনিয়নের কৃষকদের মাথায় হাত উঠেছে। মিঠাপানি না পেয়ে এসব ইউনিয়নের ১ হাজার ২৮৪ হেক্টর জমির রোপিত বোরো ধানের চারা পুড়ে বিবর্ণ হয়ে পড়ছে। অনেক কৃষক তাদের জমিতে রোপিত ধানের চারার থোড় যাতে বের হয় সেজন্য দূর থেকে কলসি করে পানি এনে সেচ দিচ্ছেন। এই অবস্থায় ঈদগাঁও রাবার ড্যামের ধরে রাখা পানি না ছাড়লে এবার আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কায় কৃষকের ঘরে ঘরে কান্নার রোল পড়েছে।

এই পরিস্থিতিতে গত বুধবার রাত থেকে পরদিন বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত যেন কপাল পোড়া হাজারো কৃষকের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। অবশ্য বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকায় মিঠা পানির উৎস নিয়ে ফের আতঙ্ক ভর করেছেন কৃষক পরিবারগুলোতে।

ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, উজান থেকে পানি কম আসায় ঈদগাঁও রাবার ড্যাম পরিচালনা কমিটি পানি ছাড়ছেন না। এতে পোকখালী রাবার ড্যাম ফোলানো হলেও তা পানিশূন্য। এই অবস্থায় উপজেলার পোকখালী, চৌফলদণ্ডি ও জালালাবাদ ইউনিয়নে এক হাজার ২৮৪ হেক্টরের বেশি জমিতে চাষ করা বোরো ধান ও শীতকালীন সবজিক্ষেত শুকিয়ে মারা যাচ্ছে।

জালালাবাদ ইউনিয়নের কৃষক আবদুল করিমসহ বেশ কয়েকজন বলেন, শুষ্ক ও বোরো মৌসুমে জমিতে রোপিত ধানসহ রকমারী সবজি ক্ষেতের সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতেই ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদীর ঈদগাঁও এবং পোকখালীতে নির্মাণ করা দুটি রাবার ড্যাম। উজান থেকে আসা পানি জমিয়ে সেচের চাহিদা মেটানোই ছিল এর উদ্দেশ্য। কিন্তু শীত মৌসুম থেকে চলতি সময় পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় আশানুরূপ পানি নামেনি নদীতে।

এতে কুয়াশা ও পাহাড় ঘেমে নদীতে নেমে আসা অল্প পরিমাণ পানি জমেছে ঈদগাঁও রাবার ড্যামের উপরি অংশে। অথচ অনেক আগে থেকেই রাবার ড্যাম ফোলানো হলেও শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়ে আছে পোকখালী রাবার ড্যাম অংশের নদী। একইভাবে প্রয়োজনীয় সেচের অভাবে রাবার ড্যাম অংশের হাজারের অধিক হেক্টর বোরো চাষের জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।

পোকখালী ইউনিয়নের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকার কৃষক জিয়াউর রহমান বলেন, আমার পাঁচ একর ধান চাষের জমি রয়েছে। সেই জমিতে বোরো আবাদ করার জন্য এনজিও থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। উদ্দেশ্য ছিল– বোরো আবাদের পর ধান গোলায় তুলে এনজিও থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধ করে দেবো। পাশাপাশি নিজেও আর্থিকভাবে লাভবান হব। কিন্তু দেরিতে রাবার ড্যাম ফোলানোর কারণে পর্যাপ্ত মিঠা পানি মিলছে না নদীতে। এই পরিস্থিতিতে কলসি করে দূর থেকে পানি এনে জমিতে ছিটাচ্ছি। কিন্তু আশানুরূপ পানির অভাবে জমিতে রোপিত ধানের চারা পুড়ে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে।

পোকখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও পোকখালী রাবার ড্যাম ব্যবস্থাপনা সমিতির সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন বলেন, ফুলেশ্বরী নদীর ওপর দুই পয়েন্টে দুটি রাবার ড্যাম নির্মাণ হলেও উপরি অংশের রাবার ড্যাম উজানের সব পানি ধরে রেখেছে। এতে নিচু অংশের জমির চাষাবাদে সেচ নিয়ে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতায় পড়েছেন কৃষকরা। মূলত উজানের পানির সমবন্টন নিশ্চিত না করায় এই পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হচ্ছে।

চৌফলদন্ডী ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, কৃষকদের অনেক অনুনয়–বিনয়ের পর কয়েকদিন আগে ঈদগাঁও রাবার ড্যাম থেকে ধরে রাখা অল্প পানি ছেড়েছিল। কিন্তু সেই অল্প পানি মুহূর্তেই গিলে ফেলে শুকনো খালের তলদেশ। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ঋণ নিয়ে চাষ করা কৃষকরা নিশ্চিত পথে বসবেন।

ঈদগাঁও রাবার ড্যাম ব্যবস্থাপনা সমিতির সভাপতি ও মেম্বার আরমান উদ্দিন বলেন, প্রথমত শুষ্ক মৌসুম গত হয়েছে, তার ওপর বৃষ্টিপাতও নেই। আবার নদীর উপরি অংশের বিভিন্নস্থানে শ্যালো মেশিনে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হওয়ায় নদীর পানির বেশ অপচয় হচ্ছে। তাই আমাদের অংশেও পানি সংকট রয়েছে। এসব কারণে নিচের দিকে পানি ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না।

ঈদগাঁও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদ হাসান বলেন, ঈদগাঁও উপজেলার সবকটি ইউনিয়নে এবার বিপুল পরিমাণ বোরো আবাদ হয়েছে। কিন্তু রাবার ড্যামে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পোকখালী, চৌফলদন্ডী ও জালালাবাদের কয়েকশ হেক্টরের বেশি জমির চাষ প্রায় নষ্ট হওয়ার পথে। সংকট কাটানো সম্ভব না হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। তবে সংকট সমাধানের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা বলেন, এ বিষয়ে ঈদগাঁও-পোকখালী রাবার ড্যাম পরিচালনা কমিটির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে পানি সমভাবে বণ্টন করা হবে। যদি এর ব্যত্যয় হলে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]