নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | প্রিন্ট
ঢাকার পর এবার আশার আলো দেখাচ্ছে চট্টগ্রাম মেট্রোরেল। নগরের অভ্যন্তরে মূল শহরে চলবে মাটির নিচ দিয়ে, শহরের আশপাশে চলবে মাটির ওপরে। তিনটি রুটকে কেন্দ্র করে আগামী মাসে শুরু হবে মেট্রোরেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেট্রোরেল পথের দৈর্ঘ্য হবে ৫৪ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। বিভিন্ন জংশনে যাত্রী ওঠানামার জন্য থাকবে মোট ৪৭টি পয়েন্ট। বাংলাদেশ সরকার ও কোরিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (কোইকা) যৌথ উদ্যোগে ‘ট্রান্সপোর্ট মাস্টারপ্ল্যান অ্যান্ড প্রিলিমিনারি ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর আরবান মেট্রোরেল ট্রানজিট কনস্ট্র্রাকশন অব চিটাগাং মেট্রোপলিটন এরিয়া’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। দেশে প্রথমবারের মতো ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সরকার।
চট্টগ্রাম মেট্রোরেল বাস্তবায়নে সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মোজাম্মেল হককে আহ্বায়ক করে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে চসিক, চউক, চবি, চুয়েট, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ), এলজিইডিসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি রাখা হয়।
গত ৩ এপ্রিল সবাইকে নিয়ে চসিকের সম্মেলন কক্ষে একটি সমন্বয় সভা হয়। সভায় ‘আগামী মে মাস থেকে চট্টগ্রাম মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। নগরের কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর, সিটি গেট থেকে নতুন ব্রিজ এবং অক্সিজেন থেকে ফিরিঙ্গিবাজার- এই তিনটি রুটকে কেন্দ্র করে শুরু হবে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ), চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এই তিন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ হবে।
চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, মেট্রোরেলের জন্য প্রয়োজনীয় দাফতরিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী মে মাস থেকে থেকে শুরু হবে সম্ভাব্যতা যাচাই। মেট্রোরেল চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। এটি হলে নগরীর অভ্যন্তরে যানজট অনেকাংশে কমে আসবে।
উপদেষ্টা কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর মোজাম্মেল হক বলেন, শিগগিরই মেট্রোরেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হবে। নগরের অভ্যন্তরের মূল শহরে মাটির নিচে এবং আশপাশে মাটির ওপরে মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্দেশ্য নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলবে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রায় ৭০ লাখ মানুষের বসবাস। বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে চট্টগ্রামে শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্রমবর্ধমান প্রসার হচ্ছে। এর সঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দ্রুত নগরায়ণ ঘটেছে। ফলে চট্টগ্রাম মহানগরীর পরিবহন ব্যবস্থার ওপর চাপ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ট্রাফিক জ্যাম, দুর্ঘটনা, বায়ুদূষণ ইত্যাদি সমস্যা বেড়ে চলছে। ফলে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, মেট্রোরেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০ কোটি ৬২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে জানুয়ারি ২০২৩ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত। আগামী মাসে কাজ শুরু হলে তিন থেকে চার মাসের মধ্যে তা শেষ হওয়ার কথা। এটি বাস্তবায়িত হলে নগরের যানজট হ্রাস ও চট্টগ্রাম মহানগরীর জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য পরিবেশবান্ধব মেট্রো সিস্টেম চালু করা হবে।
চট্টগ্রাম শহর ও আশপাশের পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) ও চট্টগ্রাম বন্দর বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। চউক ১৯৯৫ সালে নগরের ট্রাফিক ও পরিবহনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন কৌশল একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে। পরে চসিক এমআরটি লাইন স্থাপনের জন্য একটি প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করে। কিন্তু সমন্বিত উদ্যোগের অভাবে তা বাস্তবায়ন হয়নি। তবে ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী একনেক সভায় মেট্রোরেল ঢাকায় সীমাবদ্ধ না রেখে পাশাপাশি চট্টগ্রামেও করার নির্দেশনা দেন। এরপর থেকে গতি পায় চট্টগ্রাম মেট্রোরেল।
Posted ৬:৫৪ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
ajkerograbani.com | Salah Uddin