শুক্রবার ১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২২ দিনের অভিযানের খবরে দিশাহারা ভোলার জেলেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ০৫ অক্টোবর ২০২২ | প্রিন্ট

২২ দিনের অভিযানের খবরে দিশাহারা ভোলার জেলেরা

ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ৭০ বছর বয়সী জেলে মো. শাহজাহান মাঝি। ছোটবেলা থেকেই মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। তার সংসারে তিন ছেলে ও এক মেয়ে। দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছেন। এক ছেলে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। বর্তমানে তার সংসারে স্ত্রী ও এক সন্তানসহ তিন সদস্য। প্রথমে নিজের মাছ ধরার ট্রলার থাকলেও আট বছর ধরে তিনি অন্যের ট্রলারে সাধারণ জেলে হিসেবে কাজ করছেন। একসময় নদীতে মাছ শিকার করে সংসারের খরচ মেটানোর পরও বছরে কিছু সঞ্চয় করতেন। কিন্তু এক যুগ ধরে সেটি আর হয়ে উঠছে না। নদীতে ইলিশের সংখ্যা কমে যাওয়ায় লোকসানের মুখে নিজের ট্রলারটিও বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন অন্যের ট্রলারে ইলিশ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে তাকে। কিন্তু তাও সম্ভব হচ্ছে না।

জানা গেছে, নদীতে ইলিশ কম থাকায় সারা দিন নদী থেকে ট্রলারের তেলের খরচও ওঠে না। গত বছরের তুলনায় এ বছর মাছের সংখ্যা আরো কমে গেছে। তাই প্রতিদিনই লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। তাই ধারদেনা করেই চলতে হচ্ছে। এরই মধ্যে আবার এনজিও সংস্থার ঋণের সাপ্তাহিক কিস্তি পরিশোধের চিন্তা তো আছেই।

 

শাহজাহান মাঝি জানান, আগে নদীতে কোনো অভিযান ছিল না। প্রায় সারা বছরই মাছ শিকার করা যেত। বর্তমানে নদী ও সাগর বছরে প্রায় পাঁচ মাস নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকে। তাই ভরা মৌসুমে মাছ না পাওয়া গেলে অন্য সময় নদীতে মাছ ধরার সুযোগ থাকে না। এ ছাড়াও সরকার নিষেধাজ্ঞাকালীন যে সহায়তা দিয়ে থাকে তা একেবারে সামান্য। জেলে কার্ড না থাকায় অনেক জেলে এই সামান্য সহায়তাটুকুও পাচ্ছেন না। তাই বাধ্য হয়ে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও অনেক জেলেকে মাছ শিকারে নদীতে গিয়ে জেল-জরিমানার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। শুধু শাহজাহান মাঝিই নন, ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ শিকার করা প্রায় সকল জেলেরই একই অবস্থা।

ভোলা সদর উপজেলার তুলাতুলি মাছ ঘাটে মাছ কিনতে আসা শিক্ষক আনোয়ার পারভেজ জানান, কাগজে-কলমে সারা দেশের মধ্যে ৩৩ শতাংশ ইলিশ উৎপাদন হয় ভোলা জেলায়। কিন্তু সেখানে ভোলার সাধারণ মানুষ ইলিশ কিনে খেতে পারছে না। কারণ নদীতে ইলিশ কম ও দাম বেশি। বাজারে ইলিশের দাম বেশি থাকায় তিনি ঘাটে এসেছেন ইলিশ কিনতে। কিন্তু কিছুটা ইলিশের দেখা পাওয়া গেলেও দামের কারণে মাছ না কিনেই বাড়ি চলে যাচ্ছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এবার আর ইলিশ খাওয়া হলো না।

বুধবার (৫ অক্টোবর) সকালে ভোলার তুলাতুলি মাছঘাটে গেলে কথা হয় জেলে মো. শাহে আলম, মো. শফিক ও মো. শেখ ফরিদসহ ১০-১৫ জনের সাথে। জেলেরা জানান, সরকার নদীতে মাছ বৃদ্ধির জন্য অভিযান করে। কিন্তু অভিযানের পর ভরা মৌসুমে নদীতে মাছের দেখা মেলে না। তাই ধারদেনা করে চলতে হয় তাদের। বড় ধরনের কোনো সমস্য হলে এনজিও থেকে ঋণ নিতে হয়। আবার এই ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়।

 

তারা আরো জানান, সরকার কয়েক মাস আগে মার্চ ও এপ্রিল দুই মাস নদীতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এরপর আবার ৬৫ দিন সাগরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এরই মধ্যে নদীতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে ৭ অক্টোবর থেকে। এ বছর ভরা মৌসুমে নদীতে ইলিশের তেমন দেখা মেলেনি। গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে কিছুটা ইলিশের দেখা মিলতে না মিলতেই ডাক পড়েছে অভিযানের। এ রকম হলে জেলেদের আর উপায় থাকবে না। এ ছাড়াও অনেক জেলের নিবন্ধন কার্ড না থাকায় অভিযানের সময় সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আবার সরকার জেলেদের জন্য যে সহায়তা দিয়ে থাকে তাও পুরোপুরি পায় না বলে অভিযোগ করেন জেলেরা।

জেলেরা দাবি করেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন জেলেদের জন্য বরদ্দকৃত চাল নিষেধাজ্ঞার শুরুতেই সঠিকভাবে বণ্টন, নিষেধাজ্ঞাকালীন এনজিওর ঋণের কিস্তি মওকুফের ব্যবস্থা করাও যে সকল জেলে এখনো নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে তাদেরকে দ্রুত নিবন্ধনের আওতায় আনার পাশাপাশি যারা জেলে পেশায় নেই তাদের জেলে কার্ড বাতিলের দাবি করেন তারা।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১২:০৮ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৫ অক্টোবর ২০২২

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]