শুক্রবার ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জলকেলি আর খুনসুটিতে অতিথিদের আনন্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট

জলকেলি আর খুনসুটিতে অতিথিদের আনন্দ

ভোরের আলোতে প্রকৃতি এলো নতুন দিন। আকাশ আলো করে উদয় হয়েছে সকালের সূর্য। দরজা ঠেলে বাইরে বের হতেই দেহ হিম করা বাতাস। চোখের সীমানায় কুয়াশার আবরণ। সবুজ দূর্বাঘাসে পা ফেলতেই শিশির বিন্দুকণার পরশ বুলিয়ে দেয়। ঠিক তখনই অনুভূতির ভাষায় শব্দ জমাট হয় ‘এ যে শীতের আগমন’। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাস খ্যাত নারিকেলবাড়িয়ায় এই বার্তা নিয়ে এসেছে অতিথি পাখিরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, চারদিকে সবুজ গাছপালায় আচ্ছাদিত ছোট এক টুকরো ক্যাম্পাস। রয়েছে বড় একটি পুকুর। তার বিপরীত পাশে কচুরিপানায় ভরা ছোট একটি জলাশয়। সেখানে বসেছে পাখির মেলা। আকাশ-জুড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে তারা আর মেতে উঠেছে জলকেলিতে। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ ভারি হয়ে উঠেছে আশেপাশের পরিবেশ। তাদের ঝাঁকে ঝাঁকে বিচরণ, জলকেলি আর খুনসুটিতে যেন মুখর পুরো অঙ্গন।

এ যেন এক টুকরো পাখির রাজ্য। কিছু পাখি ডুব সাঁতার খেলছে, কিছু উড়ে যাচ্ছে আকাশে, এ ডাল থেকে ও ডাল ঘুরে আবার নেমে আসছে পুকুরে। আবার কিছু পাখি চক্রাকারে আকাশে ঘুরে এসে আবার নামছে জলাশয়ে। কিছু আবার পালকের ভেতর মুখ গুঁজে রোদ পোহাচ্ছে। মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় নামছে কিছু পাখি। সব মিলিয়ে যেন পাখিদের মেলা বসেছে। এ যেন মুগ্ধতার আরেক রূপ। প্রতিটা মুহূর্তই যেন নতুন। এসব পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ছোট সরালি। এছাড়াও আছে বড় সরালি, ল্যাঞ্জা হাঁস, খুন্তে হাঁস, ভূতি হাঁস ও ঝুঁটি হাঁস। বেশির ভাগই হাঁস জাতীয়।

পাখি বিশেষজ্ঞরা জানান, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে হিমালয়ের উত্তরে প্রচণ্ড শীত নামে। সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, নেপাল ও ভারতে প্রচুর তুষারপাত হয়। শীতের তীব্রতা সইতে না পেরে পাখিরা উষ্ণতার খোঁজে পাড়ি জমায় বিভিন্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে। বাংলাদেশের যেসব এলাকায় পাখি আসে এর মধ্যে রাবির নারিকেলবাড়িয়া ক্যাম্পাস অন্যতম।

রাবির নারিকেলবাড়িয়া ক্যাম্পাসে মানুষের তেমন আনাগোনা নেই বললেই চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স বিভাগ ও ক্রপ সায়েন্স বিভাগের বিভাগের ব্যবহারিক ক্লাস নেয়া হয় সেখানে। মানুষের খুব একটা আনাগোনা না থাকায় স্থানটি পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। পাখিদের সংরক্ষণে এলাকাটিতে কাটা তারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। সর্বসাধারণের প্রবেশও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ঘুরতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী জাবের বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নারিকেলবাড়িয়া নামে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস রয়েছে, তা শুনেছিলাম। আজ এখানে এসে স্বচক্ষে তা দেখতে পেলাম। চারদিকে গাছপালায় ঘেরা সুন্দর নিরিবিলি একখণ্ড জায়গা। এখানকার মূল আকর্ষণ শীতের অতিথি পাখিরা। মূল ক্যাম্পাসে আগে অতিথি পাখির আগমন ঘটলেও এখন তা একেবারেই নেই। পুকুর ভরাট করে অবকাঠামো তৈরি করার কারণে অতিথি পাখিরা তাদের স্থান ত্যাগ করেছে। এখন তারা নারিকেলবাড়িয়া ক্যাম্পাসে এসে বিচরণ করছে।

নারিকেলবাড়িয়া ক্যাম্পাসের উপ-প্রধান ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ডা. মো. হেমায়াতুল ইসলাম বলেন, ২০১৬ সাল থেকেই এখানকার জলাশয়ে শীত আসলেই অতিথি পাখি লক্ষ্য করা যায়। শীতে হিমালয়ে প্রচুর তুষারপাত হয়, তাই এসব পরিযায়ী পাখিরা নাতিশীতোষ্ণ এলাকায় বংশবৃদ্ধির জন্য আসে। এখানে পাখিদের অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে। মানুষের আনাগোনা কম থাকায় এখানে পাখিরা অবাধে বিচরণ করতে পারে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৭:৩১ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর ২০২২

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]