নিজস্ব প্রতিবেদক | শুক্রবার, ১২ মে ২০২৩ | প্রিন্ট
সৌদি আরবে জন্ম নেয়া চার এতিম শিশুর দায়িত্ব নিয়েছে সরকার। একসঙ্গে বেড়ে উঠবে খাগড়াছড়ি মিশ্র শিশু পরিবারে। দেশে আসার চার মাস পার হলেও সৌদি আরবে জন্ম নেয়া শিশুদের দায়িত্ব নিতে স্বজনরা এগিয়ে আসেননি। পরে তাদের দায়িত্ব নেয় সরকার।
মৃত বাবা জাহাঙ্গীর আলম ও ইন্দোনেশিয়ান মায়ের চার সন্তান সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত খাগড়াছড়ি মিশ্র শিশু পরিবারে বেড়ে উঠবে। থাকা-খাওয়ার পাশাপাশি লেখাপড়া ও কারিগরি শিক্ষার সুযোগ পাবে তারা।
জানা যায়, জামিলা, মোজাহিদ, ইয়াসমিন ও সামিয়ারার জন্ম হয়েছিল মরুর দেশ সৌদি আরবে। কয়েক বছর আগেও বাবা-মায়ের সুন্দর সংসারে হেসে-খেলে দিন পার করছিল তারা। অথচ আজ বাবাও নেই, মা-ও নেই তাদের। নিয়তির পরিহাসের কাছে হেরে গিয়ে শেষ আশ্রয় হয়েছে খাগড়াছড়ির সরকারি মিশ্র শিশু পরিবারে।
কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও জাগিরপাড়া এলাকার জাহাঙ্গীর আলম ২১ বছর আগে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। সেখানেই পরিচয় হয় ইন্দোনেশিয়ান এক নারীর সঙ্গে। পরিচয় গড়ায় পরিণয়ে। একে একে তাদের কোল জুড়ে আসে তিন কন্যা ও এক পুত্রসন্তান। স্ত্রী আর চার সন্তানকে নিয়ে ভালোই কাটছিল সবজি দোকানি জাহাঙ্গীর আলমের সংসার। তবে তা খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হলো না, হঠাৎই বিনা মেঘে বজ্রপাত। বছর ছয়েক আগে কাউকে কিছু না বলে স্বামী আর চার সন্তান ফেলে নিরুদ্দেশ হয়ে যান ইন্দোনেশিয়ান ওই নারী। এরপর আর খোঁজ মেলেনি তার। গেল বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীর আলমও অসুস্থ হয়ে মারা যান জেদ্দায়। সেখানেই সমাহিত করা হয় তাকে।
সৌদিপ্রবাসী জাহাঙ্গীর আলমের বড় মেয়ে জামিলা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কথা হয়। সে জানায়, হঠাৎ মায়ের চলে যাওয়া আর বাবার মৃত্যু, আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে চার অবুঝ শিশু। এরপর তাদের ঠাঁই হয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স বোর্ড পরিচালিত জেদ্দার বাংলাদেশি দূতাবাসের সেফ হোমে। সেখানে আট মাস পার করে তারা। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সহায়তায় পিতৃভূমি বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয় ওই চার শিশুকে।
বিমানবন্দর থেকে পাঠানো হয় সমাজসেবা অধিদফতরের তেজগাঁও সরকারি শিশু পরিবারে। চার মাস সেখানেই ছিল চার ভাই-বোন। চার মাসে নিকটাত্মীয়দের কেউই তাদের নিতে এগিয়ে আসেননি। অবশেষে চার ভাই-বোনকে একসঙ্গে রাখার সরকারি সিদ্ধান্তে পাঠানো হয় খাগড়াছড়ি সরকারি মিশ্র শিশু পরিবারে। সব হারিয়েও এখন একসঙ্গে থাকতে পারাটাই তাদের কাছে আনন্দের, খুশির।
খাগড়াছড়ি সমাজসেবা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক রোকেয়া বেগম জানান, খাগড়াছড়ির এই মিশ্র শিশু পরিবারে একসঙ্গে বেড়ে উঠবে এতিম চার ভাই-বোন। প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত এখানেই বেড়ে উঠবে তারা। এখন তাদের বিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে শিশু পরিবার কর্তৃপক্ষ।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, সমাজসেবা অধিদফতর পরিচালিত মোট ৮৫ শিশু পরিবার রয়েছে। পিতা-মাতাহীন এই চার ভাই-বোন সরকারি শিশু পরিবারে সুন্দরভাবে একসঙ্গে বেড়ে উঠতে পারবে। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত খাগড়াছড়ি শিশু পরিবারে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জামিলারাসহ এখানে বর্তমানে আরও ৫০ জন ছেলে আর ৫০ জন মেয়েশিশু রয়েছে।
Posted ৭:৫৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১২ মে ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin