নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ১৫ জুলাই ২০২৩ | প্রিন্ট
কুড়িগ্রাম ও রংপুরে সব নদনদীর পানি শনিবার থেকে কমতে শুরু করেছে। ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও গত তিন দিনের ভারী বৃষ্টিপাতে ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আস্তে আস্তে পানি কমলেও থেকে যাচ্ছে বন্যার ক্ষত। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষেত। দেখা দিয়েছে খাবার পানির সংকট। ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের হাতে ঘরবাড়িসহ অবকাঠামো নির্মাণ ও খাবার সংগ্রহের মতো অর্থসংস্থান নেই। এ জন্য পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপদে আছেন তারা।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তাসহ ১৬টি নদনদীর পানি কমতে শুরু করেছে। যদিও গত দুই দিন ধরে দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানি বইছে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে। ফলে ৯ উপজেলার নিচু অঞ্চলে পানি প্রবেশ করে। এতে ১৪ হাজার পরিবারের ৫৬ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে উঁচুস্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। লোকালয় তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। পানি কমতে শুরু করায় থেকে যাচ্ছে বন্যার ক্ষত। ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে।
সদর উপজেলার চর ইয়ুথনেটের বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চরের ঘরবাড়িতে প্রবেশ করেছে। চলাচলের খুব অসুবিধা হচ্ছে। ভোগডাঙা ইউনিয়নের বাসিন্দা আলো বেগম বলেন, ধরলার পানি বাড়ার কারণে তাঁর তিনটি ঘর তলিয়ে গেছে। বাচ্চাদের নিয়ে খুব কষ্টে আছেন তিনি।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ১৯ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার, তিস্তা কাউনিয়া পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে ধরলা সদর পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ও দুধকুমার পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বড় বৃষ্টি না হলে কমতে থাকবে পানি। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, গতকাল ৯ উপজেলার ৬ হাজার পরিবারের মাঝে চাল, ডাল, তেল, চিড়াসহ শুকনো খাবারের প্যাকেট এবং নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে।
নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের দুধকুমারের তীরঘেঁষা ফান্দের চরের বাসিন্দা জহির উদ্দিন বলেন, গত চার দিন পরিবার নিয়ে বন্যায় খেয়ে না খেয়ে কাটিয়েছেন। ঘরের মেঝেতে সৃষ্টি হয়েছে বড় গর্ত। ঘর ঠিক করার টাকা নেই। বন্যা সব শেষ করে দিয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলেও ফান্দের চরের বাসিন্দা আছর উদ্দিনের মুখে হাসি নেই। তাঁর বাড়ির চারটি ঘরের বেড়া ভেসে গেছে। দু’দিন না খেয়ে ছিলেন। সব জমি নষ্ট হয়ে গেছে।
রংপুর অফিস জানায়, শনিবার তিস্তা, দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানি কিছুটা কমেছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে গতকাল সকাল থেকে ওই পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ দশমিক ১৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানি ধীরগতিতে কমতে থাকবে।
Posted ৪:২৫ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৫ জুলাই ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin