নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৩ | প্রিন্ট
গাজীপুর কালীগঞ্জের নিম্নাঞ্চলগুলোতে বর্ষার পানিতে এখন টইটম্বুর। বিশেষ করে উপজেলার বিলগুলোতে এখর ভরা যৌবন। বর্ষার নতুন পানিতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে বিল বেলাই, ভাটিরা বিলসহ উপজেলার বেশকিছু বিল। জেলেদের পাশাপাশি ব্যস্ততা বেড়ে গেছে বিলপাড়ের মানুষের। জীবন জীবিকার অন্বেষণে তারা চষে বেড়াচ্ছেন এই প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্তে। বিলের জলাশয়গুলো স্থানীয় মানুষের আহারের ব্যবস্থা করে চলেছে বিভিন্ন উপায়ে।
সাধারণত বর্ষা মানুষের জীবনে দুর্ভোগ নিয়ে আসলেও বিলপাড়ের মানুষের জন্য বয়ে নিয়ে আসে আশীর্বাদ। নতুন পানিতে ফুটে অসংখ্য শাপলা ফুল। ভোরে এসব ফুল একসঙ্গে ফুটে উঠলে মনে হয় যেন শাপলার সম্রাজ্য। আর এই শাপলাই স্থানীয়দের আহার যোগাতে সহযোগিতা করে।
জানা গেছে, এখন আর আগের মতো বিলে পানি আসে না। পানি বেশি হলে শাপলা ফুল ফোটেও বেশি। রাজধানী ঢাকায় শাপলার ব্যাপক চাহিদা থাকায় প্রতিদিন বিলপাড়ের মানুষেরা শাপলা সংগ্রহে ভোর রাতে বেড়িয়ে পড়েন। বছর দশেক আগে এমন অবস্থা ছিল না। হাতেগোনা কয়েকটা নৌকা দেখা যেত বিলে, যারা শাপলা সংগ্রহ করতেন। এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। সবারই চাহিদা রয়েছে, মোটামুটি ভালো দামে বিক্রিও করা যায়। তাই কদর বেড়েছে শাপলার।
ভোর রাত থেকে সকালের নাস্তা নিয়ে শাপলা তুলতে বের হয়ে যান ইকাবাল হোসেন (৩৫)। তিনি বেলাইপাড়ের বাসিন্দা। পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় কর্তব্যের বোঝা এখন তার ঘাড়েই। সবশেষ বাবা রেখে যাওয়া অল্প জায়গাতে শুকনো মৌসুমে চাষাবাদ এবং বর্ষায় শাপলা বেচে সংসারের আহার জোগাড় করে চলেছেন। ইকবালের মতো আরো অনেকেই প্রকৃতির দান আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা বিক্রি করে তাদের সংসার চালিয়ে আসছেন কয়েক দশক ধরে।
বেলাই বিলপাড়ের বাসিন্দা শরৎ আলীর (৬৫) সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, শুষ্ক মৌসুমে গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ করেন এবং বর্ষাকালে শাপলা বিক্রি করেন। তিনি সকাল ৯টায় বের হন বিকেল ৫টা পর্যন্ত শাপলা তোলার কাজ করেন। এতে তিনি প্রতিদিন হাজার তিনেক টাকার শাপলা উত্তোলন করতে পারেন।
বিলপাড়ের আরেক বাসিন্দা আজহার মোল্লা (৪৫) বলেন, ‘বর্ষায় আমগো কোনো কাম কাইজ থাহে না। বিলের হাবলা (শাপলা) বেইচ্চা যেই টেহা পাই তাই দিয়া কোনরকমে সংসার চালাইতে পারি। সমস্যা হইলো আগের মত এহন আর হাবলা ফুডে না বিল। মানুষের সংখ্যা বাড়তাছে, সবাই হাবলা তোলার কারণে হাবলার পরিমাণও কইমা আইতাছে। আর কিছুদিন পরে হয়ত পাওয়াও যাইবো না’।
জমির উদ্দিন (৩৭) জানান, শাপলা বিক্রির জন্য তিনি ঢাকার এক বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে চুক্তি করেছেন। প্রতিদিন প্রায় ১০০ আঁটি শাপলা ঐ ব্যবসায়ীকে দিলে তার আয় থাকে প্রায় ৫০০-৬০০ টাকা। কিন্তু এত বেশি শাপলা তুলতে অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
তিনি আরো জানান, শাপলা যে শুধু বিলপাড়ের মানুষ তোলে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন তা কিন্তু নয়। এই শাপলা তুলে অনেকে আবার সবজির চাহিদাও মেটান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ ফারজানা তাসলিম বলেন, শাপলা মানুষ চাষাবাদ করে ফলায় না। প্রাকৃতিক নিয়মেই বর্ষার পানিতে বেড়ে ওঠে। কোনো ধরনের যত্ন ও পরিচর্যাও করা লাগে না। কিন্তু আমরা যদি আমাদের মাটিকে উর্বর, কিটনাশক মুক্ত রাখতে না পারি তাহলে প্রকৃতির এই উপহার একদিন আমাদের চোখের সামনেই হারিয়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, উপজেলার বেশ কয়েকটি জায়গায় থেকে প্রায় শতাধিক কৃষক ১০০ টনের মতো শাপলা সংগ্রহ কের প্রতিবছর। শাপলা অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি। এতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ পদার্থ আছে। এছাড়া শর্করা, ক্যালসিয়াম, আমিষ পাওয়া যায়। তাই শাপলা দিনদিন জনপ্রিয় সবজি হয়ে উঠছেও তিনি জানান।
কালীগঞ্জ ইউএনও আজিজুর রহমান বলেন, বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের মানুষের আয়ের পথ কমে যায় অনেকাংশে। বর্ষার পানির সঙ্গে নতুন মাছ এবং বিলের শাপলা দুটি উপায়ে মানুষ বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে। তবে অতিরিক্ত সংগ্রহে যেন আমাদের জাতীয় ফুলের বীজ ধ্বংস হয়ে বিলুপ্তির পথে না যায় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
Posted ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin