নিজস্ব প্রতিবেদক | শুক্রবার, ১০ নভেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট
শ্রমিক অসন্তোষের কড়া মাশুল দিতে যাচ্ছে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প। জানুয়ারির আগে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না রফতানি আয় কমার নেতিবাচক ধারা। এমন আশঙ্কার মধ্যেই নতুন করে সব ধরনের নিয়োগ বন্ধের পাশাপাশি ‘নো ওয়ার্ক, নো পে’ নীতিতে কারখানা বন্ধ রাখার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মালিকরা। এ অবস্থায় অটো মাইগ্রেশনসহ কোনো কারণে শ্রমিকরা চাকরি ছাড়লে কারখানাগুলোর চলমান কাজ শেষ হবে কীভাবে–সেই প্রশ্ন তুলেছেন পোশাক খাত বিশ্লেষকরা।
চলতি বছরের আগস্টে ৪০৪ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের পর প্রায় ৪৩ কোটি ডলার কমে সেপ্টেম্বরে পোশাক খাতের রফতানি আয় নামে ৩৬১ কোটি ৮৯ লাখ ডলারে। সেখান থেকে আরও ৪৫ কোটি ডলার কমে গত অক্টোবরে দেশের তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয় আসে ৩১৬ কোটি ৫৬ লাখ ডলার; যা এক বছর আগের তুলনায় প্রায় ১৪ শতাংশ কম।
এর মধ্যে আবার অটেক্সা জানিয়েছে, এক বছর আগের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের রফতানি কমেছে ২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
যখন যুদ্ধ আর মূল্যস্ফীতির চাপে বিশ্ববাজার থেকে আসছে হতাশার খবর তখন আবার বেশ কিছু দিন ধরেই কারখানা ভাঙচুর আর শ্রমিক অসন্তোষে অস্থিরতা বিরাজ করছে দেশের তৈরি পোশাক খাতে।
অযৌক্তিক মজুরি বাড়ানোর নামে আন্দোলন বা জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতায় শিল্পকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে বিপর্যয়ের পথে–এমন দাবি করে বরাবরই শিল্প মালিকরা হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিলেন, যে কোনো ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের চড়া মাশুল গুনতে হবে দেশকেই।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, অনেক শ্রমিক অটো মাইগ্রেশন বা অন্য কোনো কারণে এক কারখানা ছেড়ে অন্য কারখানায় যোগ দেয়ার পরিকল্পনা করতে পারে। তারা যাতে জায়গা পরিবর্তন করতে না পারে তার জন্যই নিয়োগ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এবার পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও কঠিন পথে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিল্প মালিকরা। একযোগে সব কারখানায় সব ধরনের নতুন নিয়োগ বন্ধের মতো কঠিন সিদ্ধান্তের পাশাপাশি কাজ না করলে শ্রমিকরা বেতন পাবেন না নীতিতে চলতে কারখানা মালিকদের নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ দুই সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ও বিকেএমইএ।
বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি বলেন, হঠাৎ করে কাজ বন্ধ করে দেয়া শ্রম আইনে অপরাধ বলে বিবেচিত হয়। কাজ না করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ‘নো ওয়ার্ক, নো পে’ নীতিতে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হতে পারে।
তবে খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিমাসে স্বাভাবিকভাবে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত শ্রমিক-কর্মচারী, কর্মকর্তা বাড়তি সুবিধা নিয়ে কারখানা বদল করে থাকেন। নিয়োগ বন্ধ রাখার এমন সিদ্ধান্ত শ্রমিক হারানো কারখানাগুলোকে চাপে ফেলতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
তৈরি পোশাক শিল্প বিশেষজ্ঞ অমিত কুমার বিশ্বাস বলেন, অনেকে কাজ ছেড়ে দেয় আবার অনেকে কারখানা পরিবর্তন করে। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে নিয়োগ বন্ধ রাখার এমন সিদ্ধান্তে শ্রমিক হারানো কারখানাগুলো সময়মতো ক্রয়াদেশ শেষ করতে চাপে পড়বে।
এ অবস্থায় শিল্প মালিকদের কোনো সিদ্ধান্তে যেন রফতানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সেদিকে বিশেষ নজর রাখার পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের।
Posted ৯:০০ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১০ নভেম্বর ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin