নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট
সাজন সাহা। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া অবস্থাতে তার শরীরে ধরা পড়ে জটিল রোগ থ্যালাসেমিয়া। এ কারণে তিন মাস পর পর শরীরে রক্ত দিয়ে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে হয় তাকে। ২ বছর আগে একমাত্র ছোট বোনটিও মারা যায় শারীরিক অসুস্থতায়। সব মিলিয়ে তার জীবন যুদ্ধ যেন হার মানায় সবকিছুকেই। এতসব কঠিন পরিস্থিতির মাঝেও লেখাপড়া থেকে পিছু হটেননি সাজন।
মায়ের অনুপ্রেরণায় ভালো কিছু করার ইচ্ছা নিয়ে ছুটে গেছেন দুর্বার গতিতে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে ভোলাচং উচ্চ বিদ্যালয় শাখা থেকে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসিতে ৪ পয়েন্ট এবং এবার এইচএসসিতে ‘এ’ প্লাস অর্জন করে সাড়া ফেলেছেন সর্বত্র। তার এই সাফল্যে পরিবার যেমন গর্বিত, তেমনি কলেজের শিক্ষক থেকে শুরু করে সহপাঠীরাও গর্বিত।
সাজন সাহা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার ভোলাচং পালপাড়া গ্রামের বাবা সঞ্জিত সাহা ও মা স্মৃতি রাণী সাহার ছেলে। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় সে নবীনগর সরকারি কলেজ থেকে মানবিক শাখা থেকে ‘এ’ প্লাস পেয়েছেন।
জানা যায়, সাজনের জীবনের গল্পটা অন্যদের থেকে একবারেই আলাদা। বাবা হোটেল শ্রমিক হওয়ায় একদিকে দারিদ্রের কষাঘাত অন্যদিকে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া লেখা করা অবস্থাতে তার শরীরে ধরা পড়ে জটিল রোগ থ্যালাসেমিয়া। আর এ কারণে তিন মাস পর পর শরীরে রক্ত দিয়ে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে হয় তাকে। গত ২ বছর আগে একমাত্র ছোট বোনটিও মারা যায় শারীরিক অসুস্থতায়। সব মিলিয়ে তার জীবন যুদ্ধ যেন হার মানায় সবকিছুকেই। এতসব কঠিন পরিস্থিতির মাঝেও লেখাপড়া থেকে পিছু হটেননি সাজন।
মায়ের অনুপ্রেরণায় ভালো কিছু করার ইচ্ছা নিয়ে ছুটে গেছেন দুর্বার গতিতে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে ভোলাচং উচ্চ বিদ্যালয় শাখা থেকে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসিতে ৪ পয়েন্ট এবং এবার এইচএসসিতে ‘এ’ প্লাস অর্জন করে সাড়া ফেলেছেন সর্বত্র। তার এই সাফল্যে পরিবার যেমন গর্বিত, তেমনি কলেজের শিক্ষক থেকে শুরু করে সহপাঠীরাও গর্বিত।
সাজন সাহা বলেন, শরীরে যখন রক্ত কমে আসে তখন শরীরজুড়ে জ্বর আসে, মাথা ব্যথা হয়, শরীর দুর্বল হয়ে ভেঙে আসে। তবু হার মানিনি। রক্ত দিয়ে আবারো নেমে পড়ি ভালো কিছু করার উদ্দেশ্যে। আমার মা আমাকে সব সময় অনুপ্রেরণা দেন ভালো কিছু করার জন্য। তবে শারীরিক দুর্বলতা আমাকে হার মানাতে না পারলেও দারিদ্রতা আমার এগিয়ে যাওয়ায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। বাবার সামান্য আয় দিয়ে আমার চিকিৎসা আর সংসার চালাতে হিমশিম খায়। আমার ইচ্ছে ছিল আইনজীবী হওয়ার। যেন দরিদ্র মানুষের ন্যায় বিচারে কাজ করে যেতে পারি। তারপরও আমি হতাশ হচ্ছি না। সৃষ্টিকর্তা যখন এইটুকু এগিয়ে নিয়ে এসেছেন, হয়তবা তার ইচ্ছাতেই সবাই আমার পাশে থাকবে। আমার এগিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করবে।
তিনি আরো বলেন, আমার রক্তের গ্রুপ ‘ও’ পজেটিভ। নবীনগর স্বেচ্ছাসেবী ব্লাড ফাউন্ডেশন তিন মাস পর পর আমার জন্য রক্তের ব্যবস্থা করে থাকে। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
সাজনের মা স্মৃতি রাণী বলেন, আমার ছেলে প্রায় ১০ বছর ধরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। আমার ছেলেকে নিয়ে আমি অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখি। তবে সাদ আর সাধ্যের ফারাক যে নির্মম বাস্তবতা। অর্থহীন সংসারে এগিয়ে যাওয়া অনেক কঠিন। আমার ছোট মেয়েটিও দুই বছর আগে মারা গেছে। এখন সাজনই আমার একমাত্র সম্বল।
নবীনগর সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ এ কে এম রেজাউল করিম জানান, সাজনের কৃতিত্বে আমরা গর্বিত এবং আনন্দিত। সে কলেজের একজন নিয়মিত ছাত্র। আমরা আশা করি তার স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি চিকিৎসা চালিয়ে যেতে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসবে। আমরাও নিজস্ব উদ্যোগে তার সহযোগিতায় পাশে থাকব।
নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর ফরহাদ শামীম বলেন, বিষয়টি শুনেছি। খোঁজখবর নিয়ে তার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।
Posted ৭:৫০ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin