নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট
ঈদে নতুন জামা আবদার করেছিল পাবনার চাটমোহর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী লতা খাতুন (১৪)। দরিদ্র বাবা রওশন আলীর পক্ষে সম্ভব হয়নি তার নতুন জামা কিনে দেবার। অভিমান করে চলতি বছরের ৬ জুলাই রাতে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে সে। গত ২১ মে একই উপজেলার হান্ডিয়ালে প্রেমের সম্পর্কের জেরে বিষপানে আত্মহত্যা করে দুই স্কুলছাত্রী যুথী আক্তার (১৫) ও শাবানা খাতুন (১৫)।
এভাবে তুচ্ছ ও ছোটখাটো ঘটনায় রাগে-অভিমানে চাটমোহর উপজেলায় ক্রমশ বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। এ বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট এই আট মাসে জেলার ১১টি থানা এলাকায় মোট আত্মহত্যা করেছেন ৩০৫ জন। এর মধ্যে চাটমোহর উপজেলায় আত্মহত্যা করেছেন ৩৭ জন। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে শিশু, কিশোর, শিক্ষার্থী, পুরুষ, নারী রয়েছে। সব আত্মহত্যার মধ্যে ৭০ শতাংশ নারী ও ৩০ শতাংশ পুরুষ রয়েছে।
বিষণ্নতা ও হতাশা থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় বলে মনে করেন চাটমোহর মহিলা ডিগ্রি কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অনুপ কুমার কুন্ডু। তিনি বলেন, আত্মহত্যা একটা মানসিক রোগ। একজন মানুষ যখন সে যা চায় সেই উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারে না, লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তখন সে হতাশা বা বিষণ্নতায় ভোগে। বর্তমানে আমাদের মাঝে দিন দিন ধৈর্য্যের অভাব দেখা দিচ্ছে। বাস্তবতা সম্পর্কে জানতে বা মানতে পারি না। দীর্ঘদিন রোগশোকে আক্রান্ত, কোনো কাজে পরাজয় হওয়া, প্রেম-বিরহ, সম্পদ হারানো, পরীক্ষায় ব্যর্থতা এসব কারণে মানুষের মাঝে হতাশা তৈরি হয়। এর বহিঃপ্রকাশ হিসেবে সে তখন আত্মহত্যার পথ বেছে নেবার মাধ্যমে শান্তি খুঁজে পেতে চায়।
চাটমোহরে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি কেন এ প্রসঙ্গে মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক অনুপ কুমার কুন্ডু মনে করেন, যে আত্মহত্যার ঘটনাগুলো ঘটে সেগুলো বেশি প্রচার হওয়া, বেশি মানুষের মধ্যে জানাজানি হওয়াটা একটা কারণ। বলা যায় আত্মহত্যার বিষয়ে অনুপ্রেরণা। অর্থাৎ একটা মানুষের মধ্যে যখন বিষণ্নতা বিরাজ করে, সে তখন ভাবে অমুক তো আত্মহত্যা করেছিল, আমিও করবো। আগের ঘটনাগুলো জানার কারণে সে সেখান থেকে আত্মহত্যার অনুপ্রেরণা হিসেবে নেয়। সে যদি আত্মহত্যার বিষয়টা না জানতো তাহলে তার মধ্যে সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা আসার কথা নয়। আর এখনকার মানুষ খুবই আবেগপ্রবণ, এটাও কারণ।
প্রতিকার বিষয়ে তার পরামর্শ, নিজেদের পরিবারকে সময় দিতে হবে। সন্তানদের বুঝতে চেষ্টা করা। সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, কার সাথে মিশছে, সেগুলো দেখতে হবে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কার কী সমস্যা সেগুলো জানার চেষ্টা করা এবং বন্ধুর মতো ভালোবাসা দিয়ে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা। সামাজিকভাবেও আমরা কারো পাশে দাঁড়াই না। কারো দাম্পত্য কলহ দেখা দিলে সেটি মেটানোর চেষ্টা করি না।
Posted ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২
ajkerograbani.com | Salah Uddin