শুক্রবার ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাবিতে শিক্ষক দিবস আজ, ৫৪ বছরেও মেলেনি স্বীকৃতি

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট

রাবিতে শিক্ষক দিবস আজ, ৫৪ বছরেও মেলেনি স্বীকৃতি

১৯৬৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি আইয়ুব খান সরকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। সেই হামলায় রক্তে রঞ্জিত হয় কয়েক শিক্ষার্থী। সেদিন সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে ছাত্রদের রক্ত লাগা নিজের শার্ট দেখিয়ে এক শিক্ষক বলেছিলেন- ‘আজ আমি ছাত্রদের রক্তে রঞ্জিত, এরপর কোনো গুলি হলে তা ছাত্রকে না লেগে যেন আমার গায়ে লাগে’। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর ও গণঅভ্যুত্থানে নিহত প্রথম শহিদ ড. শামসুজ্জোহা। যিনি ছাত্রদের জীবন বাঁচাতে নিজের বুক পেতেছিলেন হানাদার বাহিনীর বন্দুকের সামনে।

যা ঘটেছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি

১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সার্জেন্ট জহুরুল হকের মৃত্যুর খবরে দেশব্যাপী গণআন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করার চেষ্টা করে। প্রক্টর শামসুজ্জোহা তখন বুঝতে পারেন আন্দোলনকারী ছাত্ররা মিছিল বের করলে অনেক ছাত্রের প্রাণনাশের আশঙ্কা রয়েছে। তাই তিনি নিজের জীবন বাজি রেখে ছাত্রদের মূল ফটক থেকে ফিরে যেতে বলেন। পাক সেনাসদস্যরা তখন মিছিলের সম্মুখভাগে অবস্থান করছিলেন। এই সঙ্কটাপন্ন মুহূর্তে ছাত্রদের প্রাণ বাঁচাতে শামসুজ্জোহা নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন সেনাসদস্যদের।

বলেছিলেন, ‘দয়া করে গুলি ছুঁড়বেন না, আমার ছাত্ররা এখনই চলে যাবে এখান থেকে।’ কিন্তু সেনা সদস্যরা তার কথা উপেক্ষা করে গুলি চালাতে গেলে ড. জোহা নিজে এগিয়ে যান। তখন তার ওপরই গুলি চালায় সেনারা। রাবির মূল ফটক থেকে বেরিয়ে একটু পূর্ব পাশে রাস্তার অপর ধারে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী নৃশংসভাবে হত্যা করে তাকে।

বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে শায়িত ড. জোহা

মহান শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহাকে সমাহিত করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সামনে। যা এখন জোহা চত্বর নামেই পরিচিত।

ড. জোহার স্মরণে যা রয়েছে

ড. জোহাকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হলের নামকরণ করা হয় শহীদ শামসুজ্জোহা হল। পরবর্তীতে সেই হলের পশ্চিম পাশে নির্মাণ করা হয়েছে স্ফুলিঙ্গ ভাস্কর্য। এছাড়াও জোহার শহিদ হওয়ার স্থানে (ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে) নির্মাণ হয়েছে ড. শামসুজ্জোহা স্মৃতিফলক। পাশাপাশি তার মৃত্যুর ৩৯ বছর পর ২০০৮ সালে তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করাসহ তার নামে একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়। এছাড়াও নাটোরে তার নামে একটি কলেজ রয়েছে।

১৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক দিবস

ড. জোহা নামটি শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচিত। ১৮ ফেব্রুয়ারি রাবিতে এই দিনটি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। অথচ গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ এই ব্যক্তিটির নাম সারাদেশে পরিচিত হওয়ার কথা ছিল। স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়ে গেলেও দিবসটি এখনও জাতীয় স্বীকৃতি পায়নি। বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দিবসটি জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে আসলেও ড. জোহার ৫৪তম শাহাদাত বার্ষিকীতেও জাতীয় স্বীকৃতি মেলেনি এই দিবসের।

ড. শামসুজ্জোহা শহিদ হওয়ার দিনটিকে ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়ে শহীদ শামসুজ্জোহা হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক একরামুল ইসলাম। তিনি বলেন, ১৮ ফেব্রুয়ারির দিনে রাবিতেই শুধু শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহিদ বুদ্ধিজীবী, তিনি ছাত্রদের জন্য নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছেন। আমরা চাই তার এই আত্মত্যাগ শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রতি বছর সারাদেশে পালিত হোক। তাই এই দিনটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, শহিদ ড. জোহার আত্মত্যাগ গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনকে বেগবান করেছিল। এরপর বঙ্গবন্ধুর মুক্তি, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকে ত্বরান্বিত করেছিল। এই দিনটি শুধু আমরা আনুষ্ঠানিকতার জন্য পালন করি না। ছাত্রবান্ধন এই মানুষটিকে জানা দরকার। তাকে জানতে পারলে আমরা আলোকিত মানুষ হব।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]