শুক্রবার ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শবে বরাতে কি ভাগ্য লেখা হয়?

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   মঙ্গলবার, ০৭ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট

শবে বরাতে কি ভাগ্য লেখা হয়?

হিজরি বর্ষের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে সৌভাগ্যের রজনী। মহিমান্বিত এ রাতে মহান রাব্বুল আলামিন তার বান্দাদের ভাগ্য নির্ধারণ করেন। ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা এ রাতে মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজগারসহ বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগী করে থাকেন।

‘শবে বরাত’ শব্দ দুটি ফারসি ভাষা থেকে এসেছে। ‘শব’ মানে রাত, ‘বরাত’ মানে মুক্তি। বরাত আরবি ‘বারাআতে’র সমশব্দ। যার অর্থও মুক্তি। পবিত্র কোরআনেও ‘বারাআত’ শব্দটি মুক্তি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই শবে বরাত অর্থ হবে মুক্তির রাত। কিন্তু হাদিস শরিফে এ রাতকে ‘শবে বরাত’ নামে আখ্যায়িত করা হয়নি; বরং একে বলা হয়েছে–‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা ‘শাবান মাসের মধ্য রজনী’।

এ রাতের ফজিলত সম্পর্কিত একাধিক সহি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। একটি উল্লেখ করা হলো– হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা অর্ধশাবানের রাতে (শবে বরাত) সৃষ্টির প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (মুসনাদে আহমদ : ৪/১৭৬)

শবে বরাতের ক্ষেত্রে ছাড়াছাড়িতে লিপ্ত অনেকে এই হাদিসটিসহ শাবানের রাতের সব হাদিসকে অস্বীকার করেন এবং শবে বরাতকে বিদআত বলেন। কিন্তু ইমাম মুনযিরী, ইবনে রজব, নুরুদ্দীন হাইসামী, কাসতাল্লানী, যুরকানীসহ আরও অনেক হাদিস বিশারদ এটিকে সহি বলেছেন। শুধু তাই নয়; শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানীও (রহ.) সিলসিলাতুল আহাদিসিস সাহিহা গ্রন্থে এই হাদিসের সমর্থনে আরও আটটি হাদিস উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, এসব বর্ণনার মাধ্যমে সমষ্টিগতভাবে এই হাদিসটি নিঃসন্দেহে সহি প্রমাণিত হয়। (সিলসিলাতুল আহাদিসিস সাহিহাহ: ৩/১৩৫-১৩৯)। সুতরাং শবে বরাত আছে এবং এটি একটি ফজিলতপূর্ণ রাত–হাদিসের আলোকে এটি নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হলো।

অনেকে বিশ্বাস করেন, ফজিলতপূর্ণ এ রাতে সৃষ্টিকুলের ভাগ্য লেখা হয়। এক্ষেত্রে তারা পবিত্র কোরআনের এই আয়াতটি প্রমাণ হিসেবে পেশ করেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হা-মিম! শপথ! উজ্জ্বল কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয়ই আমি ছিলাম সতর্ককারী। যাতে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। এ নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয়ই আমিই দূত পাঠিয়ে থাকি।’ (সুরা দুখান, আয়াত: ১-৫)। আয়াতে উল্লেখিত ‘বরকতময় রাত’কে ইকরিমা (রহ.)-সহ কয়েকজন তাফসিরবিদ ‘শবে বরাত’ দাবি করেছেন। তবে পবিত্র কোরআনের অন্য দুটি আয়াতের দিকে নজর দিলে খুব সহজেই স্পষ্ট হয় যে–এখানে ‘বরকতময় রাত’ দ্বারা শবে বরাত নয়; বরং শবে কদরকে বোঝানো হয়েছে।

কারণ, আমরা জানি–পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে রমজান মাসে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রমজান মাস! যে মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে মানবের দিশারিরূপে ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শন হিসেবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি এটি (কোরআন) নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে।’ (সুরা আল কদর, আয়াত : ১)

শেষোক্ত দুই আয়াতের প্রথমটিতে স্পষ্ট করা হয়েছে যে পবিত্র কোরআন রমজান মাসে নাজিল হয়েছে আর দ্বিতীয় আয়াতে বলা হয়েছে, কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে লাইলাতুল কদরে। প্রথম আয়াত যে মাসটির (রমজান) কথা উল্লেখ করেছে ওই মাসেরই একটি রাত হলো লাইলাতুল কদর তথা শবে কদর। এই দুই আয়াত স্পষ্ট করছে যে সুরা দুখানে উল্লেখিত ‘বরকতময় রাত’ দ্বারাও শবে কদরকে নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে। কেননা, কোরআন নাজিল হয়েছে রমজান মাসে, শবে কদরে। এখানে ‘বরকতময় রাত’ দ্বারাও সেটিই বলা হয়েছে। তাই একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে সৃষ্টির ভাগ্য লেখা হয় শবে কদরে; শবে বরাতে নয়।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২:১২ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৭ মার্চ ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]