বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সূরা আল কাহাফের চারটি ঘটনা, চারটি বক্তব্য ও উপদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ১৬ জুন ২০২৩ | প্রিন্ট

সূরা আল কাহাফের চারটি ঘটনা, চারটি বক্তব্য ও উপদেশ

সূরা আল কাহাফ পবিত্র কোরআনের ১৮তম সূরা। কাহাফ মানে গুহা। এ সূরার আয়াত সংখ্যা ১১০। মক্কায় অবতীর্ণ।

উল্লেখ্য, প্রতি জুমাবারে সূরা আল কাহাফ পড়তে বলা হয়েছে।

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পক্ষ থেকে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা আল কাহাফ পাঠ করবে, তার জন্য এক জুমা থেকে অপর জুমা পর্যন্ত নূর বর্ষিত হবে।’

হাদিসে আরো এসেছে- ‘যে ব্যক্তি সূরা আল কাহাফ এর প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে তাকে দাজ্জালের অনিষ্ট হতে নিরাপদ রাখা হবে’। (মুসলিম) (মিশকাত)

সূরা আল কাহাফে চারটি ঘটনা, চারটি বক্তব্য ও উপদেশ রয়েছে। যেমন- সূরার ১ থেকে ৮ আয়াতে রয়েছে বক্তব্য। ৯ থেকে ২৬ আয়াতে আছে আসহাবে কাহাফের ঘটনা। ২৭ থেকে ৩১ আয়াতে আবার বক্তব্য এসেছে। ৩২ থেকে ৪৪ আয়াতে দুটি বাগানের মালিকের ঘটনা রয়েছে। এরপর আবার লম্বা বক্তব্য ও উপদেশ এসেছে ৪৫ থেকে ৫৯ আয়াতে।

এ সূরায় দুটি কাহিনি এসেছে ৬০ থেকে ১০১ আয়াতে। সে দুটি হলো মুসা (আ.) এবং খিজির (আ.) জ্ঞানীর ঘটনা ও জুলকারনাইন- সম্পর্কিত ঘটনা। আবার সূরা শেষ হয়েছে বক্তব্য ও উপদেশ দিয়ে।

(১) গুহাবাসীর বিশ্বাসের ঘটনা: আসহাবে কাহাফের ঘটনা আমরা সবাই কমবেশি শুনেছি। কয়েকজন যুবক আল্লাহ তাআলার প্রতি পূর্ণ ঈমান আনার পর তারা একটি গুহার ভেতরে পৌঁছালেন। আল্লাহ তাদের সবাইকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। ঘুম ভাঙার পর তাদের একজনকে যখন খাবার কেনার জন্য শহরে পাঠানো হলো, তখন তিনি ভেবেছিলেন লোকজন হয়তো তাকে চিনে ফেলবে এবং তার ক্ষতি করবে। কিন্তু দেখা গেল কেউ তাকে চেনে না। শহরের লোকেরা তাকে এবং তার ব্যবহৃত পুরোনো মুদ্রা দেখে বিস্মিত হলো।

মূলত এ ঘটনায় আল্লাহ তার ওপর ভরসাকারী বান্দাদের কী করে চরম প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করেন, তা দেখানো হয়েছে।

(২) বাগানের মালিকের সম্পদের ঘটনা: এক ব্যক্তির সুন্দর বাগান ছিল। তিনি ছিলেন অহংকারী, তার বন্ধুকে বলেছিলেন, ‘আমি তোমার থেকে উত্তম। কেননা, তোমার থেকে আমার বেশি সম্পদ, কর্মচারী ও সন্তান রয়েছে’। (সূরা: আল কাহাফ, আয়াত: ৩৪)

অহংকারী হয়ে আল্লাহর নিয়ামতের কথা ভুলে যাওয়ায় আল্লাহ তার বাগানগুলো ধ্বংস করে দিলেন। ঘটনাটি তাদের জন্য, যারা দুনিয়ার মোহে আল্লাহর নিয়ামতের কথা ভুলে যায়। তারা ভুলে যায় আল্লাহ ইচ্ছা করলেই তাদের কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নিতে পারেন।

(৩) হজরত মুসা (আ.) ও খিজির (আ.) এর ঘটনা: হজরত মুসা (আ.) খিজির (আ.) এর সঙ্গে সফর করার সময় তিনটি ঘটনা সংঘটিত হয়। প্রথম ঘটনায় খিজির (আ.) একটি নৌকা ছিদ্র করে ফেলেন অথচ নৌকার মালিক বিনা ভাড়ায় তাকে নৌকায় উঠিয়ে ছিলেন। দ্বিতীয় ঘটনায় তিনি একটি নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করে ফেলেন। তৃতীয় ঘটনায় তিনি একটি দেয়াল উঠিয়ে দেন। হজরত মুসা (আ.) তিনটি ঘটনায় চুপ থাকতে পারেননি। খিজির (আ.) তিনটি ঘটনার ব্যাখ্যা করেন।

হজরত মুসা (আ.) বুঝতে পারলেন আল্লাহ যাকে খুশি তাকেই জ্ঞান দান করেন। যেহেতু সকল জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ, তাই কারো জ্ঞান নিয়ে অহংকার করা উচিত নয়। খিজির (আ.) নিজেও বলেছেন, আমি আমার ইচ্ছায় কিছুই করিনি। (আয়াত ৮২)

(৪) জুলকারনাইনের ঘটনা: জুলকারনাইন ছিলেন একজন ন্যায়পরায়ণ ও সৎ বাদশাহ, তিনি পশ্চিম থেকে পূর্ব পর্যন্ত সফর করেছিলেন। দুই পর্বতের মাঝে তিনি এক জনগোষ্ঠীকে খুঁজে পেলেন। তারা তার কাছে ইয়াজুজ ও মাজুজের হাত থেকে রক্ষা পেতে একটি দেয়াল নির্মাণের আবেদন জানাল। জুলকারনাইন কাজটি করে দিতে সম্মত হলেন। তিনি তার কাজ নিয়ে গর্ব করেননি। দেয়াল নির্মাণের পর তার দেওয়া ভাষণ কোরআনে এসেছে। ‘সে (জুলকারনাইন) বলল, এগুলো আমার মালিকের অনুগ্রহ, কিন্তু যখন আমার মালিকের নির্ধারিত সময় আসবে, তিনি এগুলো চূর্ণবিচূর্ণ করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেবেন, আর আমার প্রভুর ওয়াদাই চূড়ান্ত সত্য’। (সূরা: আল কাহাফ, আয়াত: ৯৮)

চারটি ঘটনা থেকে চার রকম পরীক্ষার কথা জানা যায়। আসহাবে কাহাফের ঘটনা থেকে ধর্মবিশ্বাসের ওপর পরীক্ষা, দুটি বাগানের মালিকের ঘটনা থেকে সম্পদের ওপর পরীক্ষা, হজরত মুসা (আ.) ও খিজির (আ.) জ্ঞানী ব্যক্তির ঘটনা থেকে, জ্ঞানের পরীক্ষা ও জুলকারনাইনের ঘটনা থেকে ক্ষমতার পরীক্ষার বিষয়ে জানা যায়।

উক্ত চারটি ঘটনায় মূলত দাওয়াতের কথা রয়েছে। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তো সব সময়ই আমাদের দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছেন। ১৪ নম্বর আয়াতে যুবকেরা বাদশাহকে দাওয়াত দিয়েছে (আসহাবে কাহাফের ঘটনা)। ৩৭ নম্বর আয়াতে একজন সঙ্গী আরেক সঙ্গীকে দাওয়াত দিয়েছে (দুটি বাগানের মালিকের ঘটনা)। ৭০ নম্বর আয়াতে একজন শিক্ষক তার ছাত্রকে দাওয়াত দিয়েছে (হজরত মুসা (আ.) এবং জ্ঞানী ব্যক্তির ঘটনা)। ৮৭-৮৮ আয়াতে একজন শাসক তার প্রজাদের দাওয়াত দিয়েছে (জুলকারনাইনের ঘটনা)।

ইয়া আল্লাহ! আমাদের প্রতি জুমাবারে এই অসাধারণ সূরাটি পড়ার ও বোঝার তৌফিক দিন। আমিন।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৬ জুন ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]