শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মারধর ও হুমকি দিয়ে শিক্ষার্থীর ১৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ ; অভিযুক্ত জবি ছাত্রলীগের দুই কর্মী 

রাশেদ হোসেন রনি, জবি প্রতিনিধি :    |   বৃহস্পতিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট

মারধর ও হুমকি দিয়ে শিক্ষার্থীর ১৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ ; অভিযুক্ত জবি ছাত্রলীগের দুই কর্মী 
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রসায়ন বিভাগের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ ইব্রাহিমকে মারধর শেষে হুমকি দিয়ে প্রায় তেরো হাজার টাকা ছিনতাই করার অভিযোগ উঠেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগে নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্তরা হলেন, দর্শন বিভাগের (১২তম আবর্তন, ২০১৬-১৭) শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মেহেদী হাসান ও অর্থনীতি বিভাগের (১৫তম আবর্তন, ২০১৯-২০) শিক্ষাবর্ষের ইকবাল মাহমুদ রানা। তারা দুজনই শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইনের অনুসারী। ইকবাল মাহমুদ রানা অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
ইব্রাহিম(১৭তম আবর্তন) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে ১৮তম ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন উপলক্ষে রসায়ন বিভাগের সাজসজ্জার কাজ শেষ করে ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার সময় অর্থনীতি বিভাগের ১৫তম আবর্তনের ইকবাল মাহমুদ রানা এবং দর্শন বিভাগের ১২তম আবর্তনের মোহাম্মদ মেহেদি ইব্রাহিমের পথ রোধ করেন এবং এবং বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। নানা ধরনের প্রশ্নের পর তারা মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে চেক করেন। মোবাইল ফোনে থাকা সকল পার্সোনাল এবং ফাইল খুলে দেখেন তারা। মোবাইল ফোনে কিছু না পেয়ে ইব্রাহিমকে বার বার মেরে ফেলার ও জেলে পাঠানোর হুমকি দেন। পরবর্তীতে তারা ওই শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে নিয়ে মারধর করেন এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দিতে পারলে ওই শিক্ষার্থী শিবির করে এমন প্রমাণ করে দিবে বলে হুমকি দেয়। পরবর্তীতে মারধর করে বাবা-মা ও  দুই টিউশনের গার্ডিয়ানদের বাসায় ফোন দিয়ে ১৩ হাজার টাকা নেন বিকাশে।
অভিযোগ সূত্রে আরো জানা যায়, অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মারধর ও ছিনতাই শেষে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তুই যদি এই বিষয়গুলো কারো সাথে শেয়ার করোস তাহলে তোরে শিবির ট্যাগ দিয়ে মেরে ক্যাম্পাসের মেইন গেইটে ঝুলায় রাখব। তুই যদি এখন টাকা না দেছ, তবে আকতার (জবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক) ভাইরে দিয়ে তোরে জেলে ঢুকায় দিব। আর এখন শিবির ট্যাগ নিয়ে একবার জেলে ঢুকলে নির্বাচনের আগে আর বের হতে পারবি না, সেটা তুই ভালো করেই জানোস। আমাদের ছাত্রত্ব নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। আগেও তোদের বিভাগের একটারে মারছিলাম। তোরা মানববন্ধনও করতে পারিস নাই। আমাদের কেউ ৭ দিনের বেশি বহিষ্কার করে রাখতে পারবে না।’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ইব্রাহিম বলেন, ‘আমাকে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিয়ে চড়-থাপ্পর দিয়ে জোরপূর্বক আমার বিকাশ এবং নগদের পাসওয়ার্ড জেনে নেয়। এরপর মেহেদি আমাকে ইকবাল মাহমুদ রানার সঙ্গে বসিয়ে রেখে আমার মোবাইল নিয়ে বিকাশের মাধ্যমে টাকা নিয়ে নেয় এবং দুইটা  নাম্বারে রিচার্জ করে। আমাকে মেরে শিবির ট্যাগ দিয়ে দেবে বলে। এমনকি আমি যেন মুখ না খুলি এই ভয় দেখিয়ে শিবির করি এই মর্মে জোর পূর্বক ভিডিও করে। তারা বলে আমি কোনো বিচার পাবো না, প্রক্টরও নাকি বিচার করতে পারবে না। আরো অনেক হুমকি দিয়েছে। আমি আমার নিরাপত্তা নিয়ে সঙ্কিত।’
অভিযুক্ত ইকবাল মাহমুদ রানা বলেন, ‘ইব্রাহিমের কাছে একটা ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম। সে ভুল স্বীকার করে পোস্ট মুছে দিয়েছে। তাকে মারধর ও টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
অভিযুক্ত মেহেদী বলেন, ‘ওই ছেলেটা নিজে স্বীকার করেছে, সে শিবির করে। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে। তাকে মারধর ও টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তার সঙ্গে ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে গেছিলো এজন্য ফোনে ফ্লেক্সিলোড দিছিলো।’
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস.এম আকতার হোসাইন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী ভুক্তভোগী হলে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ দেবেন। অভিযোগের ভিত্তিতে সেটার ব্যবস্থা নিবে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ। কোনো অপরাধের দায় ছাত্রলীগ নেবে না।’
রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘এমন ঘটনা কখনই কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় নিসে আসুক। দোষীরা যেকোনো দলেরই হোক তারা পার পেতে পারে না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছেন। আমরাও সেটাই করব। আমরা ঘটনাটা জানার সাথে সাথে আমাদের ট্রেজারার মহাদয়ের কাছে আমাদের সকল শিক্ষকবৃন্দ গিয়ে কথা বলেছি এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির আওতায় আনার জন্য বলেছি। তিনি আমাদেরকে বলেছেন দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। দোষীদের ছাড় দেওয়া হবে না।’
Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৩:৪০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]