শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘুষ দিতে বাধ্য হলে গুনাহ হবে কি?

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না এবং জনগণের সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে পাপ পন্থায় আত্মসাৎ করার উদ্দেশে শাসন কর্তৃপক্ষের হাতেও তুলে দিও না’। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৮৮)

ঘুষ শুধু শরিয়তের দৃষ্টিতেই হারাম নয়, সামাজিক ব্যাধি হিসেবেও স্বীকৃত।

অবৈধ পন্থায় অতিরিক্ত কিছু দেওয়া ও নেয়াকে ঘুষ বলে। ইসলামে ঘুষের আদান-প্রদান অত্যন্ত নিন্দনীয়, গর্হিত ও নিকৃষ্ট অপরাধ। এ দুটোই অভিসম্পাতযোগ্য অপরাধ। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতার ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত’ (ইবনে মাজাহ: ২৩১৩; আবু দাউদ: ৩৫৮০; তিরমিজি: ১৩৩৬)।

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়ই জাহান্নামি’। (মু’জামুল আউসাত: ২০২৬)

ঘুষ শুধু শরিয়তের দৃষ্টিতেই হারাম নয়, সামাজিক ব্যাধি হিসেবেও স্বীকৃত। ঘুষের আদান-প্রদানে সমাজে বহুমাত্রিক বিশৃঙ্খলা, বিনাশ, ধ্বংস ও বিপর্যয় নেমে আসে। ঘুষের কারণে অযোগ্য ব্যক্তিও বড় দায়িত্ব পেয়ে যায়। ফলে দেশ ও জাতি মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাছাড়া অযোগ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব গ্রহণ কেয়ামতের অন্যতম নিদর্শন।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন আমানত নষ্ট হয়ে যাবে, তখন কেয়ামতের অপেক্ষা করবে’। জিজ্ঞেস করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমানত কীভাবে নষ্ট হবে’? তিনি বললেন, ‘যখন কোনো দায়িত্ব অযোগ্য ব্যক্তির ওপর ন্যস্ত করা হবে, তখন কেয়ামতের অপেক্ষা করবে’। (বুখারি: ৬৪৯৬)

এরপরও ঘুষদাতা এবং ঘুষগ্রহীতার মধ্যে অনেক বড় পার্থক্য সূচিত করে ইসলাম। ঘুষগ্রহীতা সবসময়ই জালেম ও ধোঁকাবাজ বিবেচিত হয়। সে নির্লজ্জ হয়েই ঘুষ চায়, বিন্দুমাত্র সংকোচবোধ থাকে না বলেই সে ঘুষ চায়। তাই তার ঘুষের উপার্জনটি সবসময়ই হারাম।

কিন্তু ঘুষদাতা অনেক সময় বাধ্য হয়েই ঘুষ দেন। তাই অনন্যোপায় হলে ঘুষ দেওয়া তার জন্য বৈধ হয়ে যায়। যেমন চাকরির ক্ষেত্রে—অন্য কাজের সুযোগ না থাকলে এবং ঐ চাকরি করার যোগ্যতা ও মানসিকতা থাকলে ঘুষ দেওয়া বৈধ। কেননা, সে তো বাধ্য হয়ে দিয়েছে, এখানে কিছু করার নেই। সুতরাং এক্ষেত্রে সে আল্লার কাছে তাওবা করবে এবং অন্যকোনো কাজের সন্ধানে থাকবে। চাকরি ছাড়াও প্রত্যেকটি বিষয়ে ঘুষ দেওয়া ও নেওয়ার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

তবে, এই পার্থক্য কেবল বড় বিপদের শঙ্কা থাকলে। ইসলামি শরিয়তে আত্মরক্ষা করা, নিজেকে বাঁচানো অপরিহার্য বিষয়। তা যেকোনো বিষয়েই হোক না কেন। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমরা নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না’। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৯৬)

অতএব, সাধারণভাবে ঘুষদাতা ও গ্রহীতা দুজনই লানতযোগ্য হলেও নিজের হক আদায় বা জুলুম থেকে বাঁচতে ঘুষ দেওয়ার বিষয়টি আলাদা। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত মনীষী খাত্তাবি (রহ.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি নিজের অধিকার আদায় করতে গিয়ে কিংবা নিজের ওপর জুলুম প্রতিহত করতে গিয়ে ঘুষ দেয় তাহলে সে উক্ত সতর্কবাণীর (লানত) অন্তর্ভুক্ত হবে না’। (মাআলিমুস সুনান: ৫/২০৭)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঘুষ দেওয়া-নেয়া থেকে বিরত থাকার তাওফিক দিন। আমিন। (তথ্যসূত্র: রদ্দুল মুখতার: ০৮/৩৪; ইলাউস সুনান: ১৫/৬১; রদ্দুল মুখতার: ০৯/৬০৭; ফাতহুল কাদির: ০৭/২৫৫; আল-বাহরুর রায়েক: ০৬/২৬২)

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২:৩৫ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৪

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]