মঙ্গলবার ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্লেগের ধ্বংসযজ্ঞের ইতিবৃত্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট

প্লেগের ধ্বংসযজ্ঞের ইতিবৃত্ত

আলবেয়ার ক্যামুর ‘দ্য প্লেগ’ কেবলই উপন্যাস নয়। এটা মহামারী বিষয়ক এক অসাধারণ রিসার্চওয়ার্কও বটে। উপন্যাসটিতে বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্নস্থানে সংঘটিত প্লেগের ধ্বংসযজ্ঞের ইতিবৃত্ত তুলে ধরা হয়েছে। আমরা অবাক হয়ে লক্ষ করি যে এই ইতিবৃত্ততে ভূগোল, ইতিহাস, পুরাণ ও ধর্ম ও বর্তমান মিলে এক অসাধারণ মিথস্ক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। আমার অনুদিত ‘প্লেগ’ উপন্যাস থেকে নীচে এর কিয়দংশ উদ্ধৃত করলামঃ

“রিও’র স্মৃতিপটে দৃশ্যপটগুলো ভেসে আসতে লাগলো। এথেন্স, মৃত ব্যক্তিদের অস্থি রাখার স্থানে পরিণত হয়েছিল। পাখিরাও চলে গিয়েছিল সেখান হতে। চীনদেশের শহরগুলো পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল নীরব বেদনার্ত মানুষদের দিয়ে। মারসে শহরের আসামীরা মৃতদেহগুলোকে স্তূপ করে রেখেছিল। Provence এর গ্রেট ওয়ালের ইমারতগুলো প্রবল প্লেগ-বায়ুকে প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল। কনস্টান্টিনোপলের কূষ্ঠরোগীদের কুঠুরিগুলোর আর্দ্র, পচনশীল তৃণশয্যাগুলো কাদার মেঝেতে ডুবে গিয়েছিল এবং বিছানা থেকে আংটা দিয়ে রোগীদেরকে ওপরে তুলে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। ইংল্যান্ডের ব্ল্যাক ডেথ (Black Death) এর সময়ে মাস্ক পরে ডাক্তাররা উৎসব করেছিল। মিলানের সমাধিক্ষেত্রে নারী-পুরুষেরা মেতে উঠেছিল অবাধ যৌনসংগমে। লন্ডনের অলিতে-গলিতে ছড়িয়েছিল স্তূপীকৃত গলিত লাশ। প্রতিটি স্থানই মানুষের নিরন্তর কান্নার জায়গায় পরিণত হয়েছিল।

রাজা উম্বের্তোর সময়ে ইটালিতে প্লেগের প্রাদুর্ভাব হয়েছিল। সেখানে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল রোম ও পেভিয়া। এই প্লেগ এতটাই সর্বনাশা ছিল যে, মৃতদেরকে কবর দেয়ার জন্যেও মানুষের অভাব হয়েছিল। এই সময়ে মানুষেরা দেখতে পেয়েছিল দুইজন দেবদূতকে। একজন ভালো দেবদূত ও একজন খারাপ দেবদূত। ভালো দেবদূতটি খারাপ দেবদূতকে নির্দেশ দিচ্ছিলেন মানূষের বাড়ির উপরে আঘাত করার জন্যে। খারাপ দেবদূতটি একটা শিকারের বর্শা বহন করছিলেন।এই বর্শা দিয়ে একটা বাড়িতে তিনি যতবার আঘাত করছিলেন, সেই বাড়িতে ততজন মানুষ মারা যাচ্ছিল।”

…রিও’র মনের ভেতরে ভেসে উঠল এথেন্সবাসীর জ্বালানো প্লেগ-আগুনের (plague-fires) কথা, যা লুক্রেটাস ( Lucretius) বলে গেছেন। রাতের অন্ধকারে মৃতদেরকে আনা হয়েছিল। কিন্তু রাখার জায়গার সংকুলান হচ্ছিল না। ফলে জীবিতরা টর্চের আলোতে পরস্পরের সাথে মারামারি করেছিল নিজেদের প্রিয়জনদের জন্যে সমাধির জায়গা দখল করতে। শেষ পর্যন্ত তারা নিজেরাই রক্তাক্ত হয়েছিল।

…অবশেষে রিও’র চোখের সামনে আরেকটা একটা দৃশ্য ভেসে উঠল। সেটা বর্তমানের। চিতার লালচে আভা প্রতিফলিত হচ্ছে অন্ধকার ঘুমন্ত সাগরের বুকে, ঠিক যেন যুদ্ধরত টর্চগুলো আগুনের স্ফুলিঙ্গ তৈরী করছে। ঘন পূতিগন্ধময় ধুঁয়া উড়ে যাচ্ছে বিনিদ্র আকাশের দিকে। অমঙ্গলের অশনিসংকেত দোদুল্যমান হয়ে মানুষের কার্যকারণ ক্ষমতাকে ক্রমশ গ্রাস করছে। প্লেগ শব্দটি উচ্চারিত হবার মূহুর্ত হতেই এক বা একাধিক ব্যক্তি তাৎক্ষণিকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে।”

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৭:২৪ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]