বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্যাচ মিসের আইপিএল; ১৬ ম্যাচে যে সংখ্যা ৪১

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ০৫ এপ্রিল ২০২৪ | প্রিন্ট

ক্যাচ মিসের আইপিএল; ১৬ ম্যাচে যে সংখ্যা ৪১

বিধ্বংসী মেজাজে ব্যাট করছেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হেনরিখ ক্লাসেন। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে ২০৯ রান তাড়া করতে নেমে দলকে প্রায় জিতিয়ে দিয়েছেন তিনি। ক্লাসেনের ব্যাট থেকে একের পর এক শট গিয়ে পড়ছে বাউন্ডারিতে।

শেষ ৫ বলে দরকার ৭ রান। অতি বড় কেকেআর সমর্থকও ভেবে নিয়েছেন, ম্যাচ কলকাতা হেরে গেছে। ঠিক এমন সময় হারশিত রানার একটি বল ক্লাসেনের ব্যাটের কানায় লেগে শর্ট থার্ড ম্যান অঞ্চলে গেল। সেখানে দাঁড়িয়ে সুয়াশ শর্মা।

পিছন দিকে কয়েক পা ছুটে সুয়াশ ঝাঁপ মারলেন। তালুবন্দি করলেন বল। মাটিতে পড়েও বল ছাড়লেন না। ক্লাসেন ফিরতেই ঘুরে গেল খেলা। ৪ রানে ম্যাচ জিতল কলকাতা।

ক্রিকেটে প্রচলিত কথা, ‘ক্যাচেস উইন ম্যাচেস।’ অর্থাৎ, ক্যাচ ম্যাচ জেতায়। এবারের আইপিএলে যেমন দুরন্ত কিছু ক্যাচ দেখা গেছে, তেমনই সহজ ক্যাচ পড়েছে। সেই সংখ্যাটা কিন্তু কম নয়। প্রথম ১৬টি ম্যাচে ৪১টি ক্যাচ পড়েছে।

অর্থাৎ, গড়ে প্রতিটি ম্যাচে ক্যাচ পড়েছে ২.৫৬। প্রতি ম্যাচে ২টির বেশি ক্যাচ পড়া ফিল্ডিংয়ের জন্য মোটেও ভাল বিজ্ঞাপন নয়। এমন নয় যে তার মধ্যে সব ক্যাচ কঠিন ছিল। সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন অনেকে।

প্রতিটি দলেই এমন কিছু ফিল্ডার রয়েছেন যাদের বিশেষ সুনাম নেই। কলকাতা নাইট রাইডার্সে সেই তালিকায় পড়েন বরুণ চক্রবর্তী ও সুনীল নারাইন। তাদের হাত থেকে যেমন ক্যাচ পড়েছে তেমনই দলের অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ারও ক্যাচ ছেড়েছেন।

ফিল্ডার হিসেবে শ্রেয়স বেশ ভাল। কিন্তু তিনিও নিজের সুনাম রাখতে পারছেন না। ফিল্ডার হিসাবে ডেভিড ওয়ার্নার, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ফাফ ডু প্লেসিরা বেশ ভাল মানের। তাদের হাত থেকেও ক্যাচ পড়েছে এবারের আইপিএলে।

লখনৌ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে সহজ ক্যাচ ফস্কেছেন ম্যাক্সওয়েল ও ডু প্লেসি। সেই ম্যাচ হারতে হয়েছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুকে। ম্যাচ শেষে আরসিবি অধিনায়ক ডু প্লেসি স্বীকার করে নিয়েছেন, ক্যাচ ছাড়ার জন্যই হারতে হয়েছে তাদের।

ছবিটা সব দলেই কমবেশি এক। এমন কোনো দল এবার নেই যারা সব ক’টি ক্যাচ ধরেছে। ৩০ গজ বৃত্তের ভিতরের ফিল্ডার থেকে শুরু করে বাউন্ডারির ধার, সব জায়গায় ক্যাচ পড়ছে। এমন সময় এসব হয়েছে যেখানে খেলার ছবিটাই বদলে গেছে।

কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? তা হলে কি দলগুলো ব্যাটিং বা বোলিংয়ের উপর যেভাবে নজর দিচ্ছে, সেভাবে ফিল্ডিংয়ে নজর দিচ্ছে না? ফিল্ডিং কি দুয়োরানি হয়ে যাচ্ছে?

প্রতিটি দলে ফিল্ডিংয়ের জন্য আলাদা কোচ রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছে জন্টি রোডসের নামও। ক্রিকেটের ইতিহাসে তার মতো ফিল্ডার আর এসেছে কি না তা নিয়ে তর্ক হতে পারে। লখনৌ সুপার জায়ান্টসের ফিন্ডিং কোচ তিনি।

বাকি নয়টি দলেও রয়েছেন দেশি ও বিদেশি কোচ। তারা হলেন— জেমস পামেন্ট (মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স), রাজীব কুমার (চেন্নাই সুপার কিংস), রায়ান কুক (সানরাইজার্স হায়দরাবাদ), রায়ান টেন ডোশাটে (কলকাতা নাইট রাইডার্স), দিশান্ত যাজ্ঞিক (রাজস্থান রয়্যালস), মালোলান রঙ্গরাজন (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু), মিথুন মানহাস (গুজরাত টাইটান্স), বিজু জর্জ (দিল্লি ক্যাপিটালস) ও ট্রেভর গনসালভেস (পঞ্জাব কিংস)।

জন্টির মতো ফিল্ডার কোনো দলের কোচ থাকলে সেই দলের ফিল্ডিংয়ের মান বাকি সব দলের থেকে ভাল হওয়া উচিত। লখনৌ বাকি ন’টি দলের থেকে কম ক্যাচ ফেলেছে। কিন্তু সেখানেও তো ক্রুণাল পান্ডিয়ার মতো নির্ভরযোগ্য ফিল্ডার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্যাচ ধরতে পারেননি।

তা হলে এই রোগের আসল কারণ কী?

ক্যাচ মিস নিয়ে উদ্বিগ্ন সুনীল গাভাস্কার থেকে শুরু করে রবি শাস্ত্রী। ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় গাভাস্কারকে বলতে শোনা গেছে, এখন ফিল্ডাররা ক্যাচ ধরার নিয়ম মানে না। বেশির ভাগ ফিল্ডার রিভার্স হ্যান্ডে (হাত উপরের দিকে রেখে) ক্যাচ ধরতে যাচ্ছে।

ভারতের মাটিতে এ ভাবে ক্যাচ ধরলে হবে না। হাত বলের নীচে রাখতে হবে। নইলে ক্যাচ পড়বেই। সব ফিল্ডিং কোচের উচিত সেটা ক্রিকেটারদের বোঝানো।

আবার শাস্ত্রী মনে করেন, ম্যাচের চাপে ফিল্ডারেরা ভুল করে ফেলছেন। শুধু টেকনিককে দায়ী করে লাভ নেই। তিনি বলেন, কঠিন পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে ক্যাচ ধরা সহজ নয়। যে ফিল্ডার সেটা করতে পারবে সে ক্যাচ ধরবে। এবার অনেকে ম্যাচের চাপে ভুল করে ফেলছে।

শুধুই কি তাই? এবার খেলা দেখে বোঝা গেছে, কিছু ক্ষেত্রে ফ্লাডলাইটের কারণে ক্যাচ পড়ছে। লাইটের বিপরীতে ফিল্ডার দাঁড়িয়ে থাকলে তার পক্ষে বল দেখা মুশকিল। যে সময় তিনি বল দেখতে পান তখন সময় খুব কম থাকে। সেই কারণে ঠিক জায়গায় হাত নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না।

আবার রাতের দিকের খেলার উঁচু ক্যাচ পড়ছে। বল আকাশে বেশি উঁচুতে উঠলে কিছুক্ষণের জন্য তা ফ্লাডলাইটের থেকে বেশি উঁচুতে চলে যায়। সেই সময় বল অন্ধকারে থাকে। ফিল্ডার তখন বল দেখতে পান না। সেই সময় ফিল্ডারের কৃতিত্ব ঠিক জায়গায় গিয়ে নিজেকে দাঁড় করানো। তবেই তিনি ক্যাচ ধরতে পারবেন।

কিন্তু ফিল্ডার যদি সেই সময় বল থেকে দূরে থাকেন তাহলে তার পক্ষে বলের নীচে ঠিক জায়গায় দাঁড়ানো মুশকিল। তখনই ক্যাচ পড়ছে। যে বল আবার খুব বেশি না উঠে বাউন্ডারির দিকে যাচ্ছে, সেই ক্যাচ ধরতেও সমস্যা হচ্ছে ফিল্ডারদের।

কারণ, সেই সময় বলের পিছনে গ্যালারির দর্শকেরা থাকেন। রং-বেরঙের জার্সি পড়ে থাকা দর্শকদের মাঝে বল হারিয়ে যাচ্ছে। ঠিক জায়গায় হাত নিয়ে যেতে পারছেন না ফিল্ডাররা।

কারণ যা-ই হোক না কেন, ক্যাচ পড়ছে। প্রতিটি ম্যাচে পড়ছে। তবে ক্যাচ মিস খেলারই একটি অংশ। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে সামনে ফিল্ডারদের ক্যাচ ফেলার হার কমে আসবে, এমনটাই আশা ক্রিকেটভক্তদের।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২:৩৩ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৫ এপ্রিল ২০২৪

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]