মঙ্গলবার ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১৭৭ কোটি টাকার প্রাণিজ আমিষ উৎপাদন

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ১১ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট

১৭৭ কোটি টাকার প্রাণিজ আমিষ উৎপাদন

মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রাণিজ আমিষ হলো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। আমিষের প্রধান কাজ হল দেহের কোষ গঠনে সহায়তা করা। আমিষ দেহের এন্টিবডি উৎপাদনে মুখ্য ভূমিকা পালনসহ রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। আর প্রাণিজ আমিষের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে গোশত, দুধ ও ডিম।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় মানুষের আমিষের চাহিদা মেটাচ্ছে গোশত, দুধ ও ডিম। পৌর শহরসহ উপজেলায় বছরে ১৭৭ কোটি টাকারও বেশি প্রাণিজ আমিষ উৎপাদন হচ্ছে। যা পারিবারিকভাবে এবং খামার গড়ে তুলে স্থানীয় লোকজনা ওইসব উৎপাদন করে আসছে। ওইসব গোশত, দুধ ডিম স্থানীয় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যা অন্য জায়গাতেও তারা সরবরাহ করে অর্থনীতি উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখছে। আর এর সঙ্গে যুক্ত আছেন কয়েক হাজার মানুষ। সার্বিকভাবে সরকারি সহযোগিতা পেলে এ উপজেলা হয়ে উঠতে পারে প্রাণিজ উৎপাদনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে প্রাপ্ত তথ্যমতে এ উপজেলায় মোট গরুর সংখ্যা রয়েছে প্রায় ২৬ হাজার। এর মধ্যে দেশীয় গরু প্রায় ২১ হাজার, সংকর জাতের গরু প্রায় ৫ হাজার, মহিষ ৭শ, ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার ৩০০ রয়েছে। সেই সঙ্গে দেশি মুরগি প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার, ব্রয়লার মুরগি ১ লাখ ১২ হাজার, লেয়ার মুরগি ১০ হাজার, সোনালি মুরগি ৪৫ হাজার, দেশি-উন্নত জাতের হাঁস প্রায় ৫০ হাজার এবং কবুতর রয়েছে প্রায় ১০
হাজার।

গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, হাঁস মুরগি থেকে বাৎসরিক মাংস উৎপাদন হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার টন। যার মূল্য প্রায় ৯১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। দুধ উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৯ হাজার ৩০০ টন। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৫৬ কোটি সাড়ে ১৩ লাখ টাকা।

ডিম উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ২ কোটি ২১ লাখ পিস। যার আর্থিক মূল্য হচ্ছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। ওই সবের আর্থিক মূল্যমানে উপজেলার প্রাণিসম্পদ খাত থেকে বার্ষিক প্রাপ্তি ১৭৭ কোটি টাকারও বেশি। প্রাণিসম্পদ খাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত মানবসম্পদ উপজেলার মোট জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ৬৭ ভাগ রয়েছে।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৫টিরও বেশি সংখ্যক গরু এমন খামারের সংখ্যা প্রায় ৭১৫টি রয়েছে। পোল্ট্রি খামার ১৩০ টি, ছাগলের খামার ৩৯টি ও ভেড়ার ২৫টি
রয়েছে। কয়েক দশক আগেও হাট-বাজারে গোশত, ডিম, মুরগি তেমন সহজলভ্য ছিল না। ৯০ দশকের পরে বাণিজ্যিকভাবে গরুর খামার, ফার্ম বা পোল্ট্রি মুরগি পালন ও ডিমের উৎপাদন শুরু হয়। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকতে এর পরিধি। অল্প সময়েই ব্রয়লার, লেয়ার মুরগি, হাঁস, গরু, দুধ এবং ডিম মানুষের অন্যতম প্রধান খাবারের জায়গা করে নিয়েছে। স্থানীয় লোকজনরা পারিবারিক ও বাণিজ্যিকভাবে খামার গড়ে তুলে ওইসব থেকে ভালো টাকা উপার্যন করছেন।

পৌর শহরের তারাগন এলাকার খামারি মো. ইব্রাহিম ভূঁইয়া ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, গত ৫ বছর ধরে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু লালন পালন করে আসছি। বর্তমানে খামারে ৮ টি গাভী রয়েছে। ৮টি গাভী থেকে দৈনিক ৩০ কেজির উপর দুধ পাচ্ছি। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে দৈনিক ২৫ কেজি দুধ বিক্রি করছি। দুধ বিক্রির আয় দিয়ে সংসারের যাবতীয় খরচের জোগান দিচ্ছি।

তিনি আরো জানান, তার মতো অনেকেই পারিবারিক খামার থেকে দুধ, ডিম ও গোশতের জোগান দিয়ে আসছেন।

খামারি মো. রফিকুল ইসলাম জানান, গত প্রায় ৮ বছর ধরে তিনি খামারের মাধ্যমে গরু লালন পালন করছেন। বর্তমানে তার খামারে ছোট বড় মিলে ৩০টি গরুর মধ্যে ১০ টি গাভী রয়েছে। এই গাভী থেকে দৈনিক ৬০ কেজি দুধ বিক্রি করছেন। দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটা তাজাকরণের মাধ্যমে দুধ ও গোশত স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে আসছেন।

তিনি আরো বলেন, যেভাবে সয়াবিন খৈল, গমের ভূষি, মসুর ভূষি, ফিড ভুট্টাসহ গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে গরু পালন করা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে।

আজমপুর এলাকার মো. মহরম আলী বলেন, আমিষের চাহিদা পূরণে বড় আকারের তিনি ৫টি গাভী পালন করছেন। গাভী থেকে দৈনিক ৬০ টাকা দরে ৩০ কেজি দুধ বিক্রি করছেন। বর্তমান বাজারে দুধের ভালো চাহিদা রয়েছে। যেভাবে গো খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে না কমলে আমাদের ছোট খামারিদের অনেক লোকসান গুনতে হবে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার জুয়েল মজুমদার ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, এ উপজেলায় গত এক দশকে দুধ, ডিম ও গোশতের উৎপাদন কয়েক গুণ বেড়েছে। সরকারি সহযোগিতায় বাণিজ্যিকভাবে এ উপজেলায় ছোট বড় অসংখ্য গবাদি পশু হাঁস মুরগির খামার গড়ে উঠেছে। তাছাড়া পারিবারিকভাবে ওইসব পশু লালন পালন করছে লোকজনরা। লালন পালন করা ওইসব গবাদি পশু, হাঁস মুরগির গোশত, দুধ ও ডিম থেকে স্থানীয় লোকজনরা আমিষের চাহিদা পূরণ করছে। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে আমিষের চাহিদা মিটিয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায়ও সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানায়। এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে যা করার দরকার বর্তমান সরকার তা করে আসছে বলে জানায়।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২:২৮ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১১ মার্চ ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]