বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মদ নিষিদ্ধ থাকায় কাতার বিশ্বকাপ নারীদের জন্য নিরাপদ

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট

মদ নিষিদ্ধ থাকায় কাতার বিশ্বকাপ নারীদের জন্য নিরাপদ

কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব পাওয়ার পর থেকেই ফিফার সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। মুসলিম কট্টরপন্থী দেশটিতে মানবাধিকার পরিস্থিতি, নারীর পোশাকের স্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে ইউরোপিয়ানরা সোচ্চার অনেক আগে থেকেই। স্টেডিয়ামে অ্যালকোহল পান করতে না দেওয়া নিয়েও ছিল আপত্তি। দর্শকদের নানা দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর পর পরিস্থিতি পাল্টেছে অনেকটাই। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয়াংশ শেষে দেখা যাচ্ছে, মাঠে মদ (অ্যালকোহল) নিষিদ্ধ থাকায় বরং নারী দর্শকরা নিজেদের বেশি নিরাপদ মনে করেছেন।

২০১০ সালে কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব পাওয়ার পর থেকে ইউরোপিয়ানরা ফিফার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছে। তাদের চোখে ছোট্ট এই মুসলিম অধ্যুষিত দেশটি একটা ভয়ঙ্কর স্থান। বিশেষ করে নারীদের জন্য দেশটিকে খুব একটা ভালো চোখে দেখে না তারা।

কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে প্রথম সমালোচনা শুরু হয় বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে কাজ করা শ্রমিকদের প্রতি দেশটির অমানবিক আচরণ নিয়ে। আসর শুরুর ঠিক আগে এর সঙ্গে যোগ হয় সমকামিতা নিয়ে দেশটির দৃষ্টিভঙ্গি ও খেলার মাঠে অ্যালকোহল পান নিয়ে বিরুদ্ধ অবস্থান। বিশ্বকাপ শুরুর আগে দেশটি সাফ জানিয়ে দেয় -ফুটবল মহাযজ্ঞে স্টেডিয়ামে বসে পান করা যাবে না অ্যালকোহল।

এই সিদ্ধান্ত আরও খেপিয়ে দেয় ইউরোপীয়দের। ফুটবল মাঠে বসে অ্যালকোহল পান করতে করতে খেলা দেখা তাদের অভ্যাস। এর আগের প্রতিটি বিশ্বকাপে মাঠে বসে পানের সুযোগ ছিল। তাই এই সিদ্ধান্ত বিশ্বকাপের মজাটা কমিয়ে দিবে বলে মত প্রকাশ করেছিলেন অনেকেই।

তবে বিশ্বকাপের অর্ধেকের বেশি খেলা মাঠে গড়ানোর পর বদলে গেছে ধারণা। মাঠে অ্যালকোহল বিক্রি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের কারণে বরং নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন নারীরা।

ইংল্যান্ডের এক নারী সমর্থক এলি মলসেন কল্পনাও করেননি কাতারে এতটা নিরাপদ বোধ করবেন তিনি। দেশটিতে খেলা দেখতে এসে নিরাপত্তার ব্যবস্থা দেখে রীতিমতো অবাক বনে গেছেন।

মলসেনের ভাষায়, ‘আমি মনে করেছিলাম কাতার মেয়েদের জন্য খুবই ভয়ঙ্কর একটা জায়গা। আমি নিজের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু এখানে আসার পর যত দিন যাচ্ছে, মনে হচ্ছে আমি যা ভেবেছি, সেটি ঠিক ছিল না। নারী হিসেবে কাতারে ঘুরে আমি নিরাপদ বোধ করেছি।’

নারীবাদী সংগঠন ‘হার গেম টু’ ফুটবলের মাঠে নারীদের অংশগ্রহণ নিয়ে কাজ করে থাকে। সেই সংগঠনের হয়েই মাঠে নারী দর্শকদের অবস্থান নিশ্চিত করতে কাজ করেন মলসেন।

তিনি জানিয়েছেন, ‘কাতারে আসার আগে দেশটিতে তার নিরাপত্তা নিয়ে তার বাবা এতটাই চিন্তিত ছিলেন যে, তিনি নিজেও তার সঙ্গী হয়েছেন। তবে কাতারে উপস্থিত হয়ে ভুল ভাঙে তাদের।’

মলসেন মনে করেন স্টেডিয়ামে অ্যালকোহল পানের রাশ টেনে ধরায় মাঠের পরিবেশ আগের চেয়ে বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ। বিশ্বকাপের মাঠে বাজে পরিস্থিতির দেখা মিলেছে কম। তার মতে, কাতারের সবকিছু বেশ সাংস্কৃতিক ও সুন্দর।

তিনি বলেন, ‘মাঠে যেকোনো ধরনের অ্যালকোহল নিষিদ্ধ থাকাটা ভালো হয়েছে। এতে গ্যালারির পরিবেশ ভালো থাকছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে হইহুল্লোড় পছন্দ করি। উদ্দামতায় আমার আপত্তি নেই। তবে কাতারের স্টেডিয়ামগুলোর পরিবেশ অনেক ভালো, শান্ত। বেশ পারিবারিক।’

আর্জেন্টিনা সমর্থক আরিয়ানা গোল্ড রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণের আগে তিনি খুব নার্ভাস ছিলেন। এখানকার পরিবেশ কেমন হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল তার। এই দেশটিকে শুধুমাত্র পুরুষদের জন্যই মনে করেছিলেন তিনি। তবে বদলে গেছে তার ধারণাও।

তিনি বলেন, ‘নারীদের জন্য এখানকার পরিবেশ খুব ভালো। আমি ফুটবল খুব ভালোবাসি। দেশে থাকতে আমার ধারণা ছিল, কাতার হয়তো কেবল পুরুষদের জন্য (নিরাপদ) এবং হয়তো মেয়েদের জন্য এখানে হয়তো ঠিক স্বস্তিকর পরিবেশ নয়। কিন্তু না, আমি এখানে খুব স্বাচ্ছন্দ্যে আছি এবং এখানকার সবকিছু খুব ভালো।’

মাঠে অ্যালকোহল পান নিষিদ্ধ হলেও পানশালা ও হোটেলে পাওয়া যাচ্ছে অ্যালকোহল। তাই চাইলেই নিরাপদে বসে পান করা যাচ্ছে। অন্যান্য আসরে যেভাবে পান করা যেত তার থেকে পরিস্থিতি ভিন্ন হলেও ইংলিশ সমর্থক এমা স্মিথ দারুণ খুশি কাতারে এসে।

এমা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এখানকার আবহ খুব ভালো, যদিও অ্যালকোহল পানে বাধা আছে এবং এ ব্যাপারে সবাই বেশ সংবেদনশীল। বিষয়টার সঙ্গে সবাই মানিয়ে নিচ্ছে এবং সবাই খুশি।’

কাতারের পরিবেশ নিরাপদ কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে এমা বলেন, ‘হ্যাঁ অবশ্যই, অবশ্যই! কারণ এখানে কোনো অ্যালকোহলজনিত সমস্যা নেই, খুবই নিরাপদ।’

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২২

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]