মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাহাড়ে লাল পিঁপড়ার ডিমে চলে জীবিকা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট

পাহাড়ে লাল পিঁপড়ার ডিমে চলে জীবিকা

পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য মানুষ নানা ধরনের কাজকে জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন। তেমনি শীতের কুয়াশা ভেদ করে পূর্ব দিগন্তে যখন উঁকি দিচ্ছে সূর্য। ঠিক তখন গ্রামের একদল লোক জীবিকার তাগিদে লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহে বের হয় গাঁয়ের আঁকাবাকা মেঠো পথে-প্রান্তরে।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার গোমতি ইউনিয়নের রংমিয়া পাড়ার অনেকে এসব পিঁপড়ের ডিম সংগ্রহ করেন। সেই ডিম বিক্রি করে চালান সংসার।

জানা যায়, আম, লিচু ও কাঁঠালসহ দেশীয় গাছগুলোতেই পিঁপড়ার বাসা পাওয়া যায়। তাছাড়া ডোল পিঁপড়ার বাসাতেই ডিম থাকে বেশি। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পাহাড়ে ঘুরে মাছের খাবার ও বরশি দিয়ে মাছ ধরার টোপ হিসেবে ব্যবহার করা লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে স্থানীয় পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। আর সেই পাইকারদের হাত ধরেই এসব পিঁপড়ার ডিম বিক্রি হয় ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী ও কুমিল্লায়। মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পিঁপড়ের ডিম সংগ্রহের উপযুক্ত সময়।

ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজটি খুব সতর্কতার সঙ্গে করতে হয়। কারণ ডিম আস্ত না রাখলে মাছ তা খায় না। তাছাড়া পিঁপড়ার কামড় তো খেতেই হয়। লাল পিঁপড়ার একটা স্বভাব একবার কামড় দিয়ে ধরলে ছাড়তে চায় না।

রংমিয়া পাড়ায় মূল সড়কের পাশে দেখা যায় দুই যুবক বাঁশের মাথায় একটি ঝুড়ি বাঁধে। সেই লাল পিঁপড়ার বাসায় বাঁশটি ঠেকিয়ে নড়াচড়া করছে আর পিঁপড়ার বাসাটি ছিদ্র হয়ে সাদা সাদা ডিম সেই ঝুড়ির মধ্যে পড়ছে। পরে ঝুড়ি মাটিতে নামিয়ে পিঁপড়া থেকে ডিম আলাদা করেন। পথচারীরা কৌতূহল মন নিয়ে ডিম পাড়ার দৃশ্যটি উপভোগ করেন।

রুস্তম বলেন, সকাল হলেই বাঁশ ও ঝুড়ি নিয়ে বের হয়ে গাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করি। প্রতিদিন এক থেকে দেড় কেজি পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করা যায়। দিন শেষে এসব ডিম পাইকারদের কাছে বিক্রি করে থাকি। প্রতি কেজি ডিম ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি করি।

বাবুল জানান, পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করতে অনেক কষ্ট। পিঁপড়াগুলো সাধারণত মগডালে বাসা বাঁধে। ডিম সংগ্রহ করার সময় কমবেশি তাদের কামড় খেতে হয়। সারাদিন বনে জঙ্গলে ডিমের আশায় ঘুরে বেড়াই। পিঁপড়ের বাসা পাওয়ার ওপর নির্ভর করে আয়। গত এক যুগ ধরে আমি এ পেশার সঙ্গে আছি।

জামাল বলেন, সব পিঁপড়ায় ডিম পাওয়া যায় না। এ জন্য প্রয়োজন লাল পিঁপড়ার বাসা। লাল পিঁপড়ার বাসায় মিলে প্রচুর সাদা ডিম। লাল পিঁপড়ার ডিমই তাদের জীবিকা নির্বাহের হাতিয়ার। সাধারণত মেহগনি, আম, লিচু, কনক ও কড়াইসহ দেশীয় গাছগুলোতে লাল পিঁপড়ার বাসা পাওয়া যায়।

ডিম সংগ্রহকারী রহিম বলেন, এ ডিম সংগ্রহে কোনো ধরনের পুঁজি লাগে না। তাছাড়া ক্ষণস্থায়ী পেশা হলেও সেটাকে উপভোগ করি আমি। এ পিঁপড়ার ডিম মাছের খুব প্রিয় খাদ্য বিধায় সৌখিন মাছ শিকারিরা বরশিতে মাছ ধরতে ক্রয় করে থাকেন।

লাল পিঁপড়ার ডিম ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর বলেন, স্থানীয়রা পাহাড়ি বন থেকে লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে তার কাছে বিক্রি করেন। স্থানীয়দের কাছ থেকে পিঁপড়ার ডিম ক্রয় করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী ও কুমিল্লায় বিক্রি করি। মূলত মাছের খামারি ও সৌখিন মাছ শিকারিরা এই ডিম কিনে থাকেন।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৮:১৮ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]