নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ০১ জানুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট
পাহাড়ের আঁকাবাঁকা মেঠো পথ পেরিয়ে বিস্তৃত ফসলের মাঠ। ওই মাঠে খণ্ড খণ্ড হলুদ সরিষা ফুলের সমারোহ, মৌমাছির ভোঁ ভোঁ শব্দ। ফসলের মাঠে হলুদ সরিষার এমন দৃশ্য দেখা যায় খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলায়। এবার সরিষার বাম্পার ফলনে লাভবান হচ্ছেন কৃষক।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার গোমতী ইউনিয়নের বান্দরছড়া এলাকায়সহ উপজেলার প্রায় সব অঞ্চলের জমিতে এক থেকে দুটি ফসলের বেশি আবাদ হতো না। সরকারের কৃষিবান্ধব নানা পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে এই উপজেলার জমিতে চাষ হচ্ছে তিন ফসল। আমন কাটার পরেই জমিগুলোতে আবাদ হচ্ছে সরিষা। এতে লাভবান হচ্ছেন কৃষক।
সরিষা মাঠ ঘুরে দেখা যায়, কিছুদিন বাদেই ঘরে উঠবে সরিষা। বছরখানেক আগেও পানি সংকটসহ নানা কারণে বোরো ধান কাটার পর দীর্ঘ সময় পড়ে থাকত পাহাড়ী অঞ্চলের এসব জমি। তবে এখন পড়ে থাকা সেসব জমিতে এখন চাষ হচ্ছে দেশি-বিদেশি নানা জাতের সরিষা।
উপজেলার গোমতী ইউনিয়নের বান্দরছড়ায় একশ শতক জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন কৃষক রফিকুল। তিনি বলেন, আগে এই জমিতে শুধু ধান চাষ করতাম। পরিত্যক্ত হিসেবে এই জমি পড়ে থাকতো। পরে মাটিরাঙ্গা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় আমি এই জমিতে সরিষার চাষ করি। এই জমিতে আমার প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যদি ভাল ফসল হয় তাহলে ১ লাখ টাকার সরিষা বিক্রি করতে পারব।
আরেক কৃষক বলেন, আগে ধান কাটার পর জমি ফেলে রাখতাম। এখন ফেলে না রেখে সরিষার চাষ করছি। এতে বাড়তি আয় হচ্ছে। সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে চলতি মৌসুমে ধানের চাষ করব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মাটিরাঙ্গা উপজেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩ হেক্টর জমি। সেখানে অর্জিত হয়েছে ১৫ হেক্টর জমি। এবার ৮৫০ জন কৃষকের মাঝে বিভিন্ন প্যাকেজের আওতায় বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে উপজেলার ১১৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। অনেক জায়গায় বাম্পার ফলনও হয়েছে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন বলেন, কৃষকদের সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়াতে মাঠ পর্যায়ে নানা ধরনের সহায়তা করা হয়েছে। সরকার এবং পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে বিনামূল্য প্রাপ্ত বীজ এবং সার বিতরণ করা হয়েছে। কৃষক এসব পেয়ে পতিত জমি চাষ করার আগ্রহ বেড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে। কৃষক যদি কাঙ্খিত ফসল পায় তাহলে আর্থিকভাবে লাভবান হবে। এছাড়াও চলতি মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি সরিষা পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা করছেন।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মাটিরাঙ্গা উপজেলায় আমন ধানের চাষ বেশি হয়। আর আমর ধানের পর পরই বোরো ধানের চাষ হয়। পানির অভাবে বোরো ধান করা হয় না। ফলে সেসব জমি সাময়িক পতিত থাকে। সরকারের এজেন্ডা অনুয়ায়ী সাময়িক পতিত জমিতে যদি সরিষার আবার করা হয় সেক্ষেত্রে কৃষকরা একটা বড় ধরণের লাভ হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করতে আমরা কৃষকদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি বিনামূল্যে বিভিন্ন জাতের সরিষা বীজ ও সার কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও আমরা কৃষকদের পরামর্শসহ সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করছি।
Posted ৭:০০ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০১ জানুয়ারি ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin