মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঐকমত্য হলে পদ্ধতি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় না

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ২৭ মে ২০২৩ | প্রিন্ট

ঐকমত্য হলে পদ্ধতি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় না

নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা গ্রহণ করবে, যাতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এটি দেশের সবারই প্রত্যাশা। নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয়, তাহলে দেশে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হবে বলে বিশ্বাস করি। অনেকেই আমার বিশ্বাসের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। অনেকের সঙ্গে আলাপ হয়েছে, তারাও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে একমত।

নির্বাচন বলতে সতকার অর্থে জনগণ যাকে বা যাদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচিত করবেন, তারাই সংসদ সদস্য হবেন। সেখানে নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হবে না। এখন আমরা যদি সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চাই, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা দরকার। ৯০-এর দশকে একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু হয়েছিল, যেটা পরে সংবিধানেও যুক্ত হয়। পরে উচ্চ আদালতের রায়ে সেটি বাতিল হয়েছে। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার কার অধীনে চলবে? নির্বাচিত না অনির্বাচিত ব্যক্তিদের অধীনে; কে তত্ত্বাবধান করবেন– এসব প্রশ্ন এসেছে। সে জন্য গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হলে সংবিধানের আলোকে কোন প্রক্রিয়ায় সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে– সেটা নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন।

কেউ কেউ জাতীয় সরকারের কথা বলছেন, এটা বললেই হয়ে যায় না। সে জন্য কাঠামো প্রয়োজন। কেন এটি করতে হবে? মানুষের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা আছে কিনা, সেগুলো দেখতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর গত নির্বাচনে আমরা দেখেছি, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর সংসদ সদস্যদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হয়েছিল। এখানে কথা হলো এই পদ্ধতি যদি আমরা আগামীতেও অব্যাহত রাখতে চাই, তাহলে এটিকে কীভাবে সংবিধানের আলোকে আরও সুসংহত করা যায়, সেটা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হতে পারে। নির্বাচনকালীন সরকার কত দিন থাকবে, কী কাজ করবে, কতটুকু ক্ষমতা তার থাকবে– সেগুলোর একটা সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি হতে পারে।

উন্নত দেশে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের দেশেও সাংবিধানিকভাবে এমন ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু আমাদের যে বিষয়টি খেয়াল রাখা দরকার, নির্বাচন নিয়ে জনগণ যাতে প্রতিষ্ঠিত কোনো নিয়ম থেকে বিচ্যুত না হয়। সেটা মনে রেখেই নির্বাচন করতে হবে। কোনো বিষয়ে যদি রাজনৈতিক ঐকমত্য হয় এবং জনগণ যদি তাতে সম্মত থাকে, অর্থাৎ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি যদি স্থিতিশীল থাকে, তাহলে যে কোনো পদ্ধতিতেই নির্বাচন করা যায়। সমস্যা হলো, দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের ঘাটতি রয়েছে। তবে আমার বিশ্বাস, সুষ্ঠু নির্বাচন প্রশ্নে সব দলই ঐকমত্যে আসবে। কারণ প্রধানমন্ত্রী তো আর নির্বাচন পরিচালনা করেন না। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। এখানে নির্বাচন কমিশন যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা করণীয় তার সবই করে এবং তার যদি সেই সাপোর্ট থাকে, তাহলে আর সমস্যা থাকার কথা নয়। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলেই আমার বিশ্বাস।

আরেকটি বিষয়, নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি প্রশাসনেরও একটি ভূমিকা আছে। নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে নির্বাচনকালীন প্রশাসন দায়িত্ব পালন করবে। প্রশাসন যাতে কারও সঙ্গে পক্ষপাতমূলক আচরণ না করে নির্ভেজালভাবে দায়িত্ব পালন করে, সেটাই সবার কাম্য।

অনেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের কথা বলছেন, এ বিষয়ে যদি সবাই ঐকমত্য হন, তাহলেও এটা মানতে হবে– তার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কারণ এই পদ্ধতি গণতান্ত্রিক নয়। গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হলে উন্নত দেশগুলোতে যেভাবে নির্বাচন হয়, আমাদেরও সাংবিধানিকভাবে সেই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এর বিরুদ্ধে যারা জ্বালাও-পোড়াও, আন্দোলন করেন, সেটা কখনও গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নয়।

ভোটারদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে, তাদের নির্বাচনে ভোট দিতে আসতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোরও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত। ভোট বর্জন করে রাজপথে বিশৃঙ্খলা করা কখনও গণতান্ত্রিক পদ্ধতি হতে পারে না। জনগণই নির্বাচন করবে, কাকে ভোট দেবে। তারাই জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবে। তাহলেই গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৩:২৪ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৭ মে ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]