শুক্রবার ১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২০১৪ বিশ্বকাপ : ব্রাজিলের মাঠে জার্মান ট্রাজেডি

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ১৯ জুলাই ২০২৩ | প্রিন্ট

২০১৪ বিশ্বকাপ : ব্রাজিলের মাঠে জার্মান ট্রাজেডি

বিশ্বকাপ ফুটবলের মঞ্চে যেন নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে ব্রাজিল। ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে গত কয়েক আসরে নিজেদের নামের প্রতি কোনাভাবেই সুবিচার করতে পারেনি সেলেসাওরা। সবশেষ কাতার বিশ্বকাপে শোচনীয় হারে বিদায় নিয়েছে দলটি। তার আগে রাশিয়া বিশ্বকাপেও খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি তারা। হয়তো এর শুরুটা হয়েছিল ২০১৪ সালে। সেবার ঘরের মাঠে গড়ানো বিশ্বকাপের দুঃস্মৃতিটি হয়তো এখনো ব্রাজিলের মনে দাগ কেটে যায়!

২০১৪ সালের ৮ জুলাই। ব্রাজিলের এস্তাদিও মিনেইরাও স্টেডিয়ামের গ্যালারি কানায় কানায় পরিপূর্ণ। আর এমনটা হবেই না কেন? ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ফেবারিট তকমা নিয়ে মাঠে নেমেছে স্বাগতিকরা। একই সঙ্গে হেক্সা মিশনে অপ্রতিরোধ্য ব্রাজিল একের পর এক বাঁধা ডিঙিয়ে স্বপ্ন পূরণের চূড়ায় এগোচ্ছিল। তবে সেই স্বপ্নের পথে বাঁধা ছিল শুধু জার্মানি। আর সেখানেই থেমে যায় সেলেসাওদের হেক্সা মিশনের গল্প।

ব্রাজিল-জার্মান লড়াইয়ে প্রবেশের আগে এক ম্যাচ আগের ঘটনা জেনে নেয়া যাক। আগেই বলেছি, ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ফেবারিট হিসেবেই মাঠে নেমেছে ব্রাজিল। সেই ধারাবাহিকতায় আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে টগবগে কলম্বিয়ার মুখোমুখি হয় পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। এ ম্যাচে শ্বাসরুদ্ধকর জয় ছিনিয়ে নিলেও ব্রাজিলের আকাশ ঢেকে যায় ঘন কালো মেঘে।

আর কয়েক মিনিট বাদেই জয়ের আনন্দ নিয়ে মাঠ ছাড়বে ব্রাজিল। এমন সময়েই বাজে ফাউলের শিকার হন দলটির সুপারস্টার নেইমার জুনিয়র। এ ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠাতে না পারলেও গোটা সময় জুড়েই রোমাঞ্চ ছড়িয়েছেন। ম্যাচের ৮৮ মিনিটে কলম্বিয়ান হুয়ান সুনিগারের বাজে ফাউলের শিকার হয়ে মাঠেই কাতরাতে থাকেন নেইমার। এরপর টিম স্টাফদের সহযোগিতা নিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। পরে জানা যায়, মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে গেছে তার। ফলে পুরো বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে যান এ ফরোয়ার্ড।

ব্রাজিলের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড নেইমারের বিশ্বকাপ অনিশ্চিত হয়েছে আগেই। এরপর অসুস্থতার কারণে আগামী ম্যাচ অর্থাৎ সেমিতে মাঠে নামতে পারবেন না ব্রাজিলের নিয়মিত অধিনায়ক থিয়েগো সিলভা। এতে সেলেসাওদের দলপতির আর্মব্যান্ড ওঠে ডেভিড লুইজের বাহুতে।

এবার আলোচনায় ফেরা যাক- দলের দুই নির্ভরশীল ফুটবলারকে ছাড়াই সেমিতে মাঠে নেমেছে ব্রাজিল। যেখানে দলটির রক্ষণভাগের প্রাণভোমরা থিয়েগো সিলভা এবং মাঝ মাঠের মধ্যমণি নেইমার অনুপস্থিত। এতে স্বাগতিকদের ড্রেসিংরুমে এক অদৃশ্য বিপর্যয় নেমে এসেছিল। অবশ্য সবকিছু আড়াল করে কোচ ফেলিপে স্কলারির মন্ত্রে মাঠে প্রবেশ করেন লুইজ-হাল্করা।

মিনেরাও স্টেডিয়ামে নির্ধারিত সময়ে বাঁশি বেজে ওঠল। শুরু হলো আসরের দুই ফেবারিট ব্রাজিল ও জার্মানির খেলা। ম্যাচের শুরু থেকে পাল্টাপাল্টি আক্রমণে জমে ওঠে দু’দলের লড়াই। তবে হঠাৎই খেই হারিয়ে ফেলেন স্কলারির শিষ্যরা। এই সুবর্ণ সুযোগের সদ্য ব্যবহার করেছেন ডাইম্যানশাফ্টরা।

ম্যাচের দশ মিনিটে পরিকল্পনা সাজিয়ে জার্মানির ডি বক্সে আক্রমণে যায় ব্রাজিল। বেশ কিছুক্ষণ পায়ে বল নিয়ে কারিশমাও দেখান হাল্ক। এরপর বলটি মার্সেলোকে পাস দিয়ে দেন। আর সেখানেই হোচট খায় স্বাগতিকরা। মার্সেলোর বলটি পায়ে নিয়ে ব্রাজিলের গোলবারের দিকে ভোঁ দৌড় দেন সামি খেদিরা। বল হারিয়ে দ্রুতই নিচে নেমে এসে খেদিরাকে চ্যালেঞ্জ করে বলটি আউট করে দেন মার্সেলো। এতে কর্নার কিক পায় জার্মানি। এরপর ক্রুসের কর্নার কিক থেকে হুলিও সিজারকে বোকা বানিয়ে গোল উৎসবে মাতেন টমাস মুলার।

প্রথমার্ধেই ব্রাজিলের জালে পাঁচবার বল পাঠিয়ে দেয় জার্মান ফুটবলাররা। ছবি- সংগৃহীত

প্রথমার্ধেই ব্রাজিলের জালে পাঁচবার বল পাঠিয়ে দেয় জার্মান ফুটবলাররা। ছবি- সংগৃহীত
প্রথম গোল হজম করে মিনিট দশেক লড়াই চালিয়ে যায় ব্রাজিল। এরপরই স্বাগতিকদের গোল বন্যায় ভাসাতে শুরু করেন জোর শিষ্যরা। ম্যাচের ২৩ মিনিটে মিরোস্লাভ ক্লোসার গোল উৎসব থামতে না থামতেই ক্রুসের জোড়া ধাক্কা এবং সামি খেদিরার গোলে ম্যাচ থেকে রীতিমতো ছিটকে যায় সেলেসাওরা। এতে ৫-০ গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধের খেলা শেষে বিরতিতে যায় জার্মানি।

জার্মানির গোল মহড়ায় বিরতিতে গিয়ে যেন কাল বৈশাখী ঝড় বয়ে যায় ব্রাজিলের ড্রেসিংরুমে। এরপর বিরতিতে থেকে ফিরে পাল্টা আক্রমণে যেতে থাকে ব্রাজিলের তরুণ তুর্কিরা। তবে জার্মানির অভিজ্ঞ ও শক্তিশালী রক্ষণভাগের কাছে বারবার অসহায় হয়ে পড়ছিল স্বাগতিকরা। অস্কার-রামিরেসদের একের পর এক আক্রমণ সামলে ম্যাচের ৬৯ মিনিটে আবারো গোলের দেখা পায় জার্মানি। এবার ডাইম্যানশাফ্টদের গোল উৎসবে মাতান বিরতির পর মাঠে আসা আন্দ্রে শুর্লে।

একের পর এক গোলে যখন আনন্দে মাতোয়ারা জার্মানি, ততক্ষণে কান্নার রোল পড়ে গিয়েছে মিনেরাওয়ে আসা ব্রাজিল সমর্থকদের মাঝে। সেদিন হয়তো ঘরের মাঠে ব্রাজিলের এমন অসহায়ত্বের কাছে ফুটবল বিধাতাও নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিলেন। ম্যাচের ৭৯ মিনিটে সেলেসাওদের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন জোর পছন্দের শিষ্য আন্দ্রে শুর্লেই।

অপ্রতিরোধ্য জার্মানিতে সেদিন বড্ড অসহায় হয়ে পড়েছিলেন ব্রাজিলের গোলরক্ষক হুলিও সিজারও। ঘরের বিশ্বকাপ কত স্বপ্ন, কত আশা? তবে সেসব যেন মাত্র ৯০ মিনিটেই ধুলোই মিশে গেল। অবশ্য ম্যাচের শেষ মুহূর্তে ব্রাজিলকে সান্ত্বনার একমাত্র গোল এনে দিয়েছিলেন অস্কার।

নির্ধারিত সময় শেষে বাঁশি বাজান ম্যাচ রেফারি মার্কো অ্যান্তোনিও রদ্রিগেজ। তার বাঁশির শব্দ বাতাসে মিলিয়ে যেতেই হাঁটু গেড়ে মাঠেই বসে পড়েন সেলেসাওরা। এ সময় কেউ চোখে কান্না আবার কেউবা মাথা নিচু করে গোটা জাতির কাছে ক্ষমা চাইছেন।

ব্রাজিলের নিয়তিতে হয়তো এমনটিই লেখা ছিল। তা না হলে কি, সেমির মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে হাসপাতালের বেডে নেইমার এবং অসুস্থ হয়ে মাঠের বাইরে থাকতেন সিলভা। সে প্রসঙ্গ যাই হোক, ব্রাজিলের এমন শোচনীয় হার গোটা ব্রাজিল তো বটেই, হাজার হাজার মাইল দূরে টিভি পর্দায় অপলক তাকিয়ে থাকা বাংলাদেশি সমর্থকদের চোখও সেদিন কান্নায় ভিজেছিল

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২:০২ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৯ জুলাই ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]