শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্যা দুর্গতদের কষ্ট লাঘবে সমাজের সম্পন্ন মানুষদেরও এগিয়ে আসতে হবে

দয়াল কুমার বড়ুয়া   |   শুক্রবার, ১১ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট

বন্যা দুর্গতদের কষ্ট লাঘবে সমাজের সম্পন্ন মানুষদেরও এগিয়ে আসতে হবে

প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বাংলাদেশ। দুর্যোগের অন্ত নেই। কিন্তু সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ মিলে বাংলাদেশের যত ক্ষয়ক্ষতি হয় এক বন্যায়ই ক্ষতি হয় তার চেয়ে অনেক বেশি। ক্রমেই নদী ভরাটের কারণে বন্যার প্রকোপ বাড়ছে।

প্রায় প্রতিবছরই বন্যা দেখা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও। অনেক এলাকায় অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায়ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। আবার বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও দুর্গত এলাকায় দেখা দেয় বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের সংকট।

ছড়িয়ে পড়ে পানিবাহিত রোগবালাই। ভেসে যায় পুকুরের মাছ। জোয়ারের পানি ঢুকে তলিয়ে যায় নিচু এলাকা। যেমনটি ঘটেছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি এলাকায়।

কক্সবাজার ও বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। বুধবার রাতেও বন্ধ ছিল দীঘিনালার সঙ্গে সাজেক ও লংগদুর যোগাযোগ। দুই দিন পর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
কক্সবাজারে গত পাঁচ দিনের বর্ষণে জেলার ৯টি উপজেলার ৬০টি ইউনিয়নের অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিতে ডুবে, পাহাড়ধস ও সাপের কামড়ে এ পর্যন্ত ১২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

টানা ভারি বর্ষণে সড়ক ও জনপথের ৫৯ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মহাসড়ক, সড়ক, কাঁচা রাস্তা, আবার কোথাও কালভার্ট ভেঙে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। অনেক স্থানে বীজতলা, ফসলের মাঠ, মাছের ঘের, বেড়িবাঁধ, ঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে চকরিয়ার উপকূলীয় সাতটি ইউনিয়ন নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ার বেশির ভাগ এলাকা এখনো পানিতে ডুবে আছে। বান্দরবান শহরের বেশির ভাগ এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেও কয়েকটি এলাকা পাঁচ থেকে সাত ফুট পানির নিচে রয়েছে। খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় মঙ্গলবার রাত থেকে বৃষ্টি না হয়েও মেরুং এলাকার পানি বেড়েছে।
বন্যা নিয়ন্ত্রণের চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে বন্যা ও জলাবদ্ধতা হবে—এটাই এখন নিয়তি হয়ে দেখা দিয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পানি যাতে কোনো বাধা ছাড়াই সাগরে নেমে যেতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিবছর পলি জমে যেসব নদীর গভীরতা কমছে সেগুলো খননের কোনো বিকল্প নেই। তবে আপাতত আমাদের প্রয়োজনীয় ত্রাণ নিয়ে দাঁড়াতে হবে বন্যার্তদের পাশে। নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন পরিকল্পনা।

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কয়েকজনের প্রাণহানি ঘটেছে। জলাবদ্ধতার কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার সরকারি-বেসরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গতকাল ও আজ বন্ধ রাখা হয়েছে। গত পাঁচ দিনের ভারী বর্ষণে ব্যাহত হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম। সাগর উত্তাল থাকায় বহির্নোঙরে যেতে পারছে না লাইটার জাহাজ; যার প্রভাব পড়েছে বন্দরের সার্বিক কার্যক্রমে। চট্টগ্রামের চকবাজার, বাকলিয়া, বাদুড়তলা, আগ্রাবাদ, মুরাদপুর, আতুরার ডিপোসহ নগরের বেশির ভাগ নিম্ন এলাকা পাঁচ দিনের বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে আছে। বাসাবাড়িতে ঢুকে গেছে পানি। ডুবে গেছে নিচতলার পানির মোটর। এ কারণে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত। সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী এলাকাবাসীর ত্রাণে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছে। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানের বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। পাহাড়ের পাদদেশে থাকা বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। বান্দরবানে খোলা হয়েছে ২০৭টি আশ্রয় কেন্দ্র। পাহাড়ি ঢল, জোয়ারের পানি ও ভারী বৃষ্টিতে কক্সবাজারের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ৬০টি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি। খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি ঢল ও ঘন বৃষ্টিতে রাস্তাঘাটেও পানি উঠেছে। ফেনীতে বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বাগেরহাটে টানা বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে ডুবে আছে বিস্তীর্ণ জনপদ। লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীতেও অস্বাভাবিক জোয়ারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে মানুষ। দুর্গতদের পাশে ইতোমধ্যে প্রশাসন দাঁড়িয়েছে। তাদের কষ্ট লাঘবে সমাজের সম্পন্ন মানুষদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক: দয়াল কুমার বড়ুয়া, কলামিস্ট ও জাতীয় পার্টি নেতা, সভাপতি, চবি অ্যালামনাই বসুন্ধরা। সংসদ সদস্য প্রার্থী ঢাকা-১৮ আসন।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৩:১০ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১১ আগস্ট ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিজয়ের ছড়া
(218 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]