রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুন্দরবন রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে

দয়াল কুমার বড়ুয়া   |   মঙ্গলবার, ০৪ জুলাই ২০২৩ | প্রিন্ট

সুন্দরবন রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে

সুন্দরবন নিয়ে আমাদের গর্বের অন্ত নেই। সুন্দরবনের বাসিন্দা বেঙ্গল টাইগার শুধু আমাদের জাতীয় পশু নয়, আমাদের গর্বিত পরিচয়ও। পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট হিসেবে খ্যাত এই বনে রয়েছে ঈর্ষণীয় জীববৈচিত্র্য। তাই সুন্দরবন শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের ঐতিহ্যের ও গর্বের এই সুন্দরবনকে আমরাই প্রতিনিয়ত হত্যা করছি। একদিকে জলবায়ু সংকটে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, অন্যদিকে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবে সুন্দরবনে মিষ্টি পানির প্রবাহ হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে সুন্দরবনের পরিবেশগত পরিবর্তন লক্ষণীয়। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট নানা হুমকির মুখে রয়েছে সুন্দরবনসহ দেশের সব বনাঞ্চল। তাই সুন্দরবনসহ দেশের সব বনাঞ্চল রক্ষায় সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। সুন্দরবন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। যা কিনা বিশ্বের বিস্ময়াবলির ঐতিহ্যের একটি অংশ। সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০,০০০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। তার মধ্যে বাংলাদেশের অংশে পড়েছে প্রায় ৬২%-এর একটু বেশি। প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট নানা দুর্বিপাকে সুন্দরবন অস্তিত্ব বিপন্ন। সুন্দরবন বাংলাদেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় একটি সম্পদ। অর্থনীতিতে এর অবদান অপরিসীম। এই বন থাকার কারণে আজকে আমরা সৌভাগ্যবান। এটি যেহেতু রাষ্ট্রীয় একটি মহামূল্যবান সম্পদ, তাই এটি রক্ষার্থে রাষ্ট্রকে আরও সামনে এগিয়ে আসতে হবে।
সুন্দরবন বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র। সঠিকভাবে একে ঢেলে সাজানো গেলে, এখান থেকে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে বেশ ভালো অবদান রাখা সম্ভব। তাই আমাদের সবাইকে এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য গভীরভাবে বুঝতে হবে। সুন্দরবনকে বাঁচানোর জন্য এর গবেষণার পরিধি আরও বাড়াতে হবে। মিটিং ও সমাবেশের মাধ্যমে প্রান্তিক জনপদের মানুষের মধ্যে সুন্দরবনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরতে হবে। এই বনের গুরুত্ব সবার কাছে তুলে ধরতে না পারলে জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে যাবে। ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকাগুলো তলিয়ে যাওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। তাই জাতীয় স্বার্থেই সুন্দরবন রক্ষার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি পরিবেশ বাঁচলে বাঁচবে দেশ, সুন্দরবনকে করা যাবে না শেষ।
অবাধে গাছ চুরি হয়। নির্বিচারে বনের পরিবেশ দূষণ করা হয়। বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা শহরের রায়েন্দা খালের দুই পারে থাকা দেড় সহস্রাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং সহস্রাধিক বাসাবাড়ির বর্জ্য নিয়মিত ফেলা হচ্ছে রায়েন্দা খালে। বর্জ্যের মধ্যে বিপুল পরিমাণ পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকসামগ্রী থাকছে।
জোয়ার-ভাটার পানিতে এসব বর্জ্য ভেসে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন শাখা খাল, বলেশ্বর নদ ও সুন্দরবনে। এই বর্জ্য ফেলা রোধে স্থানীয় প্রশাসন কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
জানা যায়, রায়েন্দা খালটি একসময় বেশ খরস্রোতা ছিল। এখন সেটি ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। প্রতি রাতে বাজার ঝাড়ু দিয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ময়লা-আবর্জনা নিয়ে ফেলে এই খালে।
রায়েন্দা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জানান, জায়গার অভাবে তাঁরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিকল্প উদ্যোগ নিতে পারছেন না। তাই বলে জোয়ার-ভাটার এ খালে বর্জ্য ফেলার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর সেখানে কী ভূমিকা পালন করছে? গত ২৮ মার্চ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন মন্ত্রণালয়ের অগ্রগতি পর্যালোচনা বৈঠকে প্রধান বন সংরক্ষক ও খুলনার বন সংরক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছিলেন সুন্দরবনের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিক বর্জ্যের দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। সেই নির্দেশের বাস্তবায়ন কোথায়? স্থানীয় জেলেরা জানান, জাল টানতে গেলে জালে প্রচুর পলিথিন ব্যাগ ও প্লাস্টিকসামগ্রী উঠে আসে। সমুদ্রগামী জেলেরাও জানান, তাঁরা সমুদ্রে পানির বোতলসহ নানা ধরনের প্লাস্টিকসামগ্রী ভাসতে দেখেন। চরাঞ্চলের কৃষকরা জানান, মাটি খুঁড়তে গেলে মাটির কয়েক ফুট নিচেও পলিথিন পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছে মাছসহ জলজ প্রাণীরা এসব প্লাস্টিক খেয়ে মারা যাচ্ছে। যেসব মাছ ধরা পড়ে তাদের শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি রয়েছে, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর।
সুন্দরবন নিয়ে আমাদের যে গর্ব, যে অহংকার তা রক্ষা করতে হবে। সুন্দরবন রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে। যেসব নদী ও খাল সুন্দরবনে প্রবেশ করেছে, সেগুলোর দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। রায়েন্দা খালে বর্জ্য ফেলা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

লেখক: দয়াল কুমার বড়ুয়া, কলামিস্ট ও জাতীয় পার্টি নেতা, সভাপতি, চবি অ্যালামনাই বসুন্ধরা। সংসদ সদস্য প্রার্থী ঢাকা-১৮ আসন।

 

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৬:৫৮ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৪ জুলাই ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিজয়ের ছড়া
(219 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]