সোমবার ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দয়াল কুমার বড়ুয়া

পাল্টে যাচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল

দয়াল কুমার বড়ুয়া   |   শনিবার, ১৭ জুন ২০২৩ | প্রিন্ট

পাল্টে যাচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল

পাল্টে যাচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। স্বাধীনতার আগে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দেশের যে কোনো এলাকার চেয়ে এগিয়ে ছিল ওই এলাকা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা নগরী সমৃদ্ধির পাদপীঠ হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু স্বাধীনতার পর প্রমত্ত পদ্মা রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সহজ যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ালে উন্নয়নের ক্ষেত্রে ওই এলাকা পিছু হাঁটা শুরু করে।

পদ্মা সেতু সেই দুর্ভাগ্যের ইতি ঘটিয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলজুড়ে চলছে উন্নয়নের বহুমুখী কার্যক্রম। বিশেষত পদ্মা সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এনেছে। মোংলা বন্দরের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ ও দেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ১৮টি প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৭৩৩ কিলোমিটার মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও চারটি সেতু নির্মাণকাজ চলমান। এ ছাড়া যশোর-খুলনা-মোংলা মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতসহ আরও সাতটি মহাসড়কের প্রশস্তকরণ কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। চলমান প্রকল্প ও নতুন ছয় লেনের প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। নতুন প্রকল্পে অর্থায়নে বিভিন্ন দাতা সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চলছে।

২০৪১ সালের মধ্যে আধুনিক সড়ক নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সড়কের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রয়োজন অনুসারে সড়কে চার লেন, ছয় লেন, ব্রিজ-কালভার্ট-ফ্লাইওভার তৈরিসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। চলমান প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে যোগাযোগব্যবস্থার যুগান্তকারী উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনীতি সমৃদ্ধ ও গতিশীল হবে। এ ছাড়াও নেওয়া হচ্ছে ফ্লাইওভার এবং বিভিন্ন নদীতে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ। দেশের অন্য অংশের সঙ্গে উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমতালে চলার সুযোগ সৃষ্টি হবে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে।

ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান দিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনী ইশতেহারে দিন বদলের সনদ, ভিশন-২০২১ ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। এর পর ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে তারা। টানা তিন মেয়াদের এ্ই সরকারের প্রথম মেয়াদেই দৃশ্যমান হয় ডিজিটাল বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ শাসন করে শেখ হাসিনা প্রমান করেছেন শাসক হিসেবে তিনি যেমন দেশনন্দিত, তেমনি গণতন্ত্র ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশ্বনেতার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত। তাঁর শাসনামলে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে হতদরিদ্র মানুষের মাঝে খাদ্য ও অর্থ বরাদ্দ এবং অন্যান্য সহযোগিতা মানুষকে অসহায়ত্ব থেকে রক্ষা করেছিল। দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলে তিনি দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্রের কষাঘাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে ভাগ্যোন্নয়নের পথে দাঁড় করিয়েছেন। কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষকদের ঋণ প্রদান, কৃষি সামগ্রীর মূল্যহ্রাস এবং সহজ প্রাপ্যতাও ছিল বিরাট অবদান।
বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল পাঁচটি অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম। জিডিপিতে বিশ্বে ৪১তম। গত এক দশকে দারিদ্র্যের হার ৩১ দশমিক ৫ থেকে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এ সময়ে মাথাপিছু আয় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ সর্বকালের সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে।

গত এক দশকে আর্থ-সামাজিক খাতে ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ২৩ দশমিক ৬৭-এ কমে এসেছে। প্রতি লাখ জীবিত জন্মে মাতৃ মৃত্যুর হার ১৭৩-এ হ্রাস পেয়েছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭৩ বছর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশি-বিদেশি নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে উন্নয়ন, অগ্রগতি আর সমৃদ্ধির পথে হাঁটছেন। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিগত ১৩ বছরে সর্বক্ষেত্রে যে সফলতা অর্জিত হয়েছে তার পথ ধরে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছানোর অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।

টেকসই অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনার সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সরকারের উন্নয়ন ভাবনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়নের ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অথচ একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে দেশের এই অগ্রযাত্রা থমকে দাঁড়ায়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে। আবার দুর্নীতির চক্রে নিপতিত হয় দেশ। হাওয়া ভবনের নামে তারেক জিয়া চালাতে থাকে লুটপাট। দুর্নীতিতে বাংলাদেশ শীর্ষে অবস্থান করে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন সূচকের প্রায় সবগুলোতে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়তে থাকে। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে আমাদের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। বিগত ১৩ বছরে সহস্রাদ্ধ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজিএস) অর্জনে আমাদের ঈর্ষণীয় সাফল্য দক্ষিণ এশিয়াসহ উন্নয়নশীল দেশসমূহের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে সমাদৃত হয়েছে।

লেখক: কলামিস্ট ও জাতীয় পার্টি নেতা, সভাপতি, চবি অ্যালামনাই বসুন্ধরা। সংসদ সদস্য প্রার্থী ঢাকা-১৮ আসন।

 

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৭ জুন ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিজয়ের ছড়া
(219 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]