রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জলাবদ্ধতায় বন্দরনগর চট্টগ্রাম: পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সচল রাখতে হবে: দয়াল কুমার বড়ুয়া

দয়াল কুমার বড়ুয়া   |   মঙ্গলবার, ০৮ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট

জলাবদ্ধতায় বন্দরনগর চট্টগ্রাম: পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সচল রাখতে হবে: দয়াল কুমার বড়ুয়া

বন্দরনগর চট্টগ্রাম চার দিন ধরে পানির নিচে। এ মহানগরের জলাবদ্ধতা বহু পুরনো এবং তা ঐতিহ্যের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে এযাবৎ হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হলেও ফল অশ্বডিম্ব। জলাবদ্ধতার অবসান না হওয়ার কারণ বন্দরনগরের ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করা। ফলে জনগণের ট্যাক্সের টাকা খরচ হলেও নগরবাসী কোনো সুফল পাচ্ছে না। চট্টগ্রামের মতো টানা বৃষ্টিতে বরিশালের জনজীবনও বিপর্যস্ত। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। স্থলনিম্নচাপ ও ঝোড়ো হাওয়ার কারণে বঙ্গোপসাগরে উত্তাল অবস্থা বিরাজ করছে।

আবহাওয়া অধিদফতর বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত জারি করেছে; যার পরিপ্রেক্ষিতে ভোলার দুই রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পটুয়াখালীতে ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। চার দিন ধরে পানির নিচে বন্দরনগর চট্টগ্রাম। নিকট ইতিহাসে জলাবদ্ধতার এমন দাপট দেখেনি নগরবাসী। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে নগরের বেশির ভাগ এলাকা। বাসাবন্দি হয়ে পড়ছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে ডুবেছে নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, অলিগলি, নিচতলার বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। জলাবদ্ধতা প্রকল্পে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরও সুফল না মেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করছে নগরবাসী। তবে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের ভাষ্য, সুফল পেতে হলে প্রথমত পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। দ্বিতীয়ত ড্রেন ও খালগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। বরিশাল, খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলেও টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। নদনদীর পানি বৃদ্ধিতে অবস্থা সঙ্গিন হয়ে উঠেছে। বরিশালকে একসময় বলা হতো প্রাচ্যের ভেনিস। প্রাকৃতিক খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার পর বরিশাল তার বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে। জলাবদ্ধতা অনিবার্য হয়ে উঠছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্প গ্রহণ যেমন জরুরি তেমন জরুরি নাগরিক সচেতনতাও। ড্রেন ও পানি নিষ্কাশনের নালা ও খালগুলো সচল রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

এদিকে, চট্টগ্রামে আবারও পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। টাইগার পাস এলাকায় পাহাড়ের ধসে পড়া মাটি পার্শ্ববর্তী রাস্তায় চলন্ত একটি মাইক্রোবাসের ওপর গিয়ে পড়ে। মাইক্রোবাসের চালক কোনো রকমে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে রক্ষা করেছেন। গাড়িতে আর কোনো যাত্রী না থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

এ সময় মাটির সঙ্গে কয়েকটি গাছও ধসে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গাছ কেটে সেগুলো ক্রেন দিয়ে সরিয়ে গাড়িটি উদ্ধার করেন। এর ফলে সকাল ৭টা থেকে চার ঘণ্টা টাইগার পাস থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রায় প্রতিবছরই এক বা একাধিক পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে।

মৃত্যুও হয় অনেকের। চট্টগ্রামে পাহাড়ধসের বড় একটি ঘটনা ঘটে ২০০৭ সালের জুন মাসে। সেই ঘটনায় মারা যায় ১২৭ জন। আরেকটি বড় ঘটনা ঘটে ২০১৭ সালে।
সে সময় চার সেনা কর্মকর্তাসহ ১৬৮ জনের মৃত্যু হয়। প্রায় প্রতিটি বড় ঘটনার পরই এক বা একাধিক তদন্ত কমিটি করা হয়। কারিগরি কমিটিও করা হয়। প্রতিটি কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। মর্মান্তিক পরিণতি রোধে অনেক সুপারিশও করা হয়।
কিন্তু সেসব সুপারিশ বাস্তবায়িত হয় না বললেই চলে। আর তাই চট্টগ্রামের পাহাড়ধসও থামে না। জানা যায়, নগরীর লালখানবাজার থেকে টাইগার পাস মোড় হয়ে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ করছে। এই কাজ করতে গিয়ে মূল সড়কের মাঝখানে পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। আর সড়কের পশ্চিম পাশ প্রশস্ত করতে গিয়ে পাহাড়ের নিচের একটি অংশ কাটা হয়েছে। কিন্তু পাহাড়ের কাটা অংশে কোনো ধরনের সুরক্ষা দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় টানা বৃষ্টিপাতে পাহাড়ের একটি অংশ ধসে পড়েছে। তাহলে এই দুর্ঘটনার দায় কি সিডিএর ওপর বর্তাবে না?
শুধু পাহাড়ধস নয়, টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামে ব্যাপক জলাবদ্ধতারও সৃষ্টি হয়। রাতভর বৃষ্টিতে নগরীর বহদ্দারহাট, শুলকবহর, মুরাদপুর, কাপাসগোলা, চকবাজার, বাকলিয়ার বিভিন্ন এলাকা, ফিরিঙ্গিবাজারের একাংশ, কাতালগঞ্জ, চান্দগাঁওয়ের শমসেরপাড়া, ফরিদারপাড়া, আগ্রাবাদের শান্তিবাগ আবাসিক এলাকা, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, রিয়াজউদ্দিন বাজার এবং হালিশহরের বিভিন্ন এলাকার সড়ক ও অলিগলি পানিতে তলিয়ে যায়। জানা যায়, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজও করছে সিডিএ। অভিযোগ রয়েছে, খাল ও নালার মধ্যে থাকা মাটি অপসারণ না করায়ই জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করেছে। অন্যদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে এখনো খালগুলোর মুখে স্থাপন করা স্লুইস গেট বা জলকপাট চালু করা যায়নি। এতে বৃষ্টির পানির সঙ্গে জোয়ারের পানি যোগ হয়ে জলাবদ্ধতা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। তাহলে নগরবাসীর এমন দুর্গতির জন্য দায়ী কে?

আমরা চাই, চট্টগ্রামের পাহাড় কাটা এবং পাহাড়ের পাদদেশে বসতি নির্মাণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা হোক। পাশাপাশি নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৭:২৩ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৮ আগস্ট ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিজয়ের ছড়া
(219 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]