দয়াল কুমার বড়ুয়া | শনিবার, ১৩ মে ২০২৩ | প্রিন্ট
বিগত ১৫ বছরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারের যে সফলতাটি নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি সেটি হচ্ছে রাজনৈতিক এবং অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা। শত বাধা বিপত্তি অতিক্রম করেও তিনি তার সুদৃঢ় নেতৃত্বে যেভাবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন এটিই উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ যথাযথভাবে শেষ করার অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। একইভাবে কোভিড-১৯ মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সত্বেও অর্থনৈতিক কার্যাবলি স্থিতিশীল রাখা রাজনৈতিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জসমূহ সঠিকভাবে মোকাবিলা করার ফলেই সম্ভব হয়েছে। আগামীর দিনগুলোতে এ চ্যালেঞ্জ আরো ঘনীভূত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আগামীর নেতৃত্বকেও এই চ্যালেঞ্জ সঠিকভাবে মোকাবিলা করার দৃঢ় শপথ নিতে হবে।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের দ্বিতীয় বড় চ্যালেঞ্জ হবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যাসমূহ সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে মোকাবিলা করার জন্য যথাযথভাবে পদক্ষেপ নেওয়া। দেশ কিভাবে এগিয়ে যাবে সেই কাঠামোর মধ্যে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি পরিবেশকেও গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের অস্তিত্বের লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হবে। প্রাকৃতিক যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ তা থেকে উত্তরণটা হবে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ। এর জন্য আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলোকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিতে হবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে সোচ্চার ভূমিকাও রাখতে হবে।
ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক্স এন্ড বিজনেস রিসার্চ তাদের এক রিপোর্টে ধারণা দিয়ে বলেছে বাংলাদেশ এখন যে ধরণের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশটি হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি।
তবে কিভাবে বৈষম্য দুর করা যায়, যথেষ্ট কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায় তা নিয়ে ইতোমধ্যে যেসকল পরিকল্পনা হয়েছে তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন হবে পরবর্তী চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ যে গতিময়তার সাথে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে তার সুফল সবাইকে দিতে হলে সেই প্রবৃদ্ধি হতে হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক।
ভূ -কৌশলগত অবস্থানের কারণে অনেক সমস্যার উদ্ভব হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সেটি দেখা যাচ্ছে। এ গুরুত্বের জায়গা কিভাবে ডিল করা হবে সেই চ্যালেঞ্জ টিও সামনে আসছে। সামনের দিনগুলোতে ভূ-কৌশলগত অবস্থার জের ধরে তৈরি হওয়া চ্যালেঞ্জও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বাংলাদেশের সামনে।
যে সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন জাতির পিতা তার মূলে ছিলো ধর্মনিরপেক্ষ মানবিক রাষ্ট্র তৈরি করা। ধর্ম, মত ও আদর্শিক সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করে রাষ্ট্রের অসাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্য নিশ্চিত করাটাও হবে বিরাট চ্যালেঞ্জের বিষয়।
চতুর্থ শিপ্ল বিপ্লবের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং অত্যাধুনিক হাইটেক পার্ক নির্মাণের মাধ্যমে আগামীর বিশ্বকে আমরা জানান দিচ্ছি যে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নেতৃত্ব দিতে বাংলাদেশও প্রস্তুত।
একশ’ ডলারের নিচে ছিল যে মাথাপিছু আয়, তা এখন বেড়ে ২৮২৪ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। কমেছে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের প্রকোপ। উন্নত হয়েছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান। শিক্ষা ও চিকিৎসায় অন্তর্ভুক্তি বেড়েছে। বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ, আইএমএফ-সহ সবার প্রতিবেদনেই আমরা দেখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।
আমাদের হাইটেক পার্কগুলো হবে আগামীর সিলিকন ভ্যালি। ইতিমধ্যে ৬৪টি জেলার ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়ন পরিষদের সবক’টিই ডিজিটাল নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ভূমি নামজারি, ভূমি কর প্রদান, খতিয়ান ও অন্যান্য দলিলাদি সংগ্রহ, জন্মনিবন্ধন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বা চাকরিতে আবেদন ইত্যাদি ডিজিটাল পদ্ধতিতে নাগরিকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
দেশে অনেকগুলো হাইটেক পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি তথা আইটিসংক্রান্ত সব ধরনের কাজ সম্পাদন করা, আইটিকে ব্যবসা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, আইটি সেক্টরে সব সুযোগ-সুবিধা তৈরি, তথ্যপ্রযুক্তিসংক্রান্ত সব আমদানি, রফতানির সুবিধা নিশ্চিত করা হবে হাইটেক পার্কের কাজ।তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো এসব পার্কে কোম্পানি খুলে তাদের কাজ করতে পারবে। প্রযুক্তিনির্ভর এসব হাইটেক পার্ক প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্পায়ন, তরুণদের কর্মসংস্থান এবং হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার শিল্পের উত্তরণ ও বিকাশে সুযোগ সৃষ্টি করবে। দেশের তরুণ প্রজন্মকে ডিজিটাল শিক্ষায় দক্ষ করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযুক্ত করে গড়ে তোলার যে বৃহৎ পরিকল্পনা সেটির বাস্তবায়ন হচ্ছে আগামী নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ফলাফলকে অনুকূলে নিয়ে আসতে এবং এর নানাবিধ সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, তার পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই এ বিপ্লবকে নিজেদের করে নিতে সব রকম প্রস্তুতি শুরু করেছে।
সাফল্য এসেছে নানা দিক থেকে। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আগামীর প্রযুক্তি বিপ্লবে নেতৃত্বের আসনেই থাকবে বাংলাদেশ।
লেখক: সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী, ঢাকা-১৮ আসন।
Posted ৩:১৯ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৩ মে ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin